অগত্যা: দূরের কল থেকে জল নিয়ে বাড়ির পথে। নিজস্ব চিত্র
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের (পিএইচই) জল সরবরাহ প্রকল্পের পাম্প বন্ধ। ফলে, গত তিনদিন ধরে পানীয় জল পাচ্ছেন না কৃষ্ণনগরের দিগনগরের বাসিন্দারা।
তিন দিন ধরে এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা শনিবার সকালে দিগনগরে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার স্টেশন ম্যানেজারের অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। স্টেশন ম্যানেজারের অফিসের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। গ্রামবাসী দাবি করেন, যত ক্ষণ না এলাকায় বিদ্যুৎ আসছে, তত ক্ষণ এই অফিসে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হবে। কোতোয়ালি থানার পুলিশ গিয়ে স্টেশন ম্যানেজার জ্যোতির্ময় ঘোষকে উদ্ধার করে। পুলিশের উপস্থিতিতেই বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীরা বিদ্যুতের লাইনের কাজ শুরু করেন।
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কৃষ্ণনগরের ডিভিশনাল ম্যানেজার শৈবাল মজুমদার বলেন, “বাজ পড়ার কারণে পরশু রাতে অনেক যন্ত্রপাতি বিকল হয়েছে। দিনরাত এক করে আমাদের কর্মী কাজ করছেন। শনিবার বিকেলে ওই সব এলাকায় বিদ্যুৎ এসেছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত তিন দিন ধরে দিগনগর উত্তরপাড়া, ঘোলাগাছি, বালিয়াডাঙ্গা, ঘোষপাড়ার মতো বেশ কিছু গ্রাম বিদ্যুৎহীন। ওই সব এলাকায় জল সরবরাহও বন্ধ। যে জলপ্রকল্প থেকে গোটা দিগনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জল সরবরাহ হয়, সেটি অচল হয়ে রয়েছে। দূর-দূরান্তে যেখান ভাল টিউবওয়েল আছে, সেখানে লোকজন জলের জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। অনেকে বাজার থেকে জল কিনে খাচ্ছেন বলেও অভিযোগ।
স্টেশন ম্যানেজার জানান, পরশু রাতে ঝড়ের জেরে অনেক জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিড়ে গিয়েছে। অনেক জায়গায় বিদ্যুতের তারের উপরে এসে পড়ে গাছের ডাল। সেই সব লাইনে ইতিমধ্যে বণ্টন সংস্থার কর্মীরা মেরামতির কাজ করছেন। কিন্তু ক্ষিপ্ত গ্রামবাসী সে সব শুনতে চাননি। স্টেশন ম্যানেজার বলেন, ‘‘এর মধ্যে গ্রামের লোকজন আমাদের অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এ দিন অবশ্য অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ এসে গিয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তিন দিন আগের ওই ঝড়বৃষ্টির পর থেকেই এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। এই ঝলসানো গ্রীষ্মে পাখা না চলায় নাজেহাল সকলেই। শিশু ও বয়স্করা খুবই কষ্টে, রাতে ঘুম হচ্ছে না। মোবাইলে চার্জ দিতে না পারায় যোগাযোগ থমকে। বন্ধ পানীয় জল সরবরাহও। দিগনগর উত্তরপাড়ার তাপস মণ্ডল, শুভজিৎ বিশ্বাসেরা বলেন, ‘‘বাধ্য হয়ে এ দিন বিদ্যুত বণ্টন সংস্থার অফিসে বিক্ষোভ দেখিয়েছি।’’ এই উত্তরপাড়াতেই রয়েছে পিএইচই-র জলপ্রকল্প। সেখান থেকে গোটা দিগনগর পঞ্চায়েত এলাকায় সরবরাহ হয়। জলপ্রকল্পের পাম্প অপারেটর সুরঞ্জন জোয়ারদার বলেন, “সকাল-সন্ধ্যা মিলিয়ে চার বারে ৬ ঘণ্টা জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গত তিন দিন বিদ্যুৎ না থাকায় পাম্প চালিয়ে জল তোলা যায়নি। ফলে জল সরবরাহও করা যায়নি।”
কাঠফাটা দুপুরে দিঘিরপাড় থেকে একটি টিউবঅয়েলের জল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন দিগনগর বাজারপাড়ার আসিনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘‘পাড়ার ট্যাপে জল নেই। তাই জল নিতে এসেছিলাম।’’ ঘোলাগাছির দেবাশিস ঘোষ প্রায় এক কিলোমিটার দূ্রে উত্তরপাড়ায় জল নিতে এসেছিলেন। তাঁদের এলাকায় ভাল টিউবঅয়েলও নেই যে জল পাবেন। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি শুধরোতে শুরু করায় বৃহস্পতিবার থেকে জল সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy