Advertisement
E-Paper

বিজেপির হাত ধরে ফিরলেন বাম ঘরছাড়ারা

শুধু মরিচা বিবি নন। তাঁদের মতো ৩৮টি পরিবারের প্রায় দেড়শো নারী-পুরুষ-শিশু ২০১৩ থেকে গ্রামছাড়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০০
ঘরে ফিরছেন গ্রামছাড়া বাসিন্দারা। চাপড়ার বেতবেড়িয়ায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

ঘরে ফিরছেন গ্রামছাড়া বাসিন্দারা। চাপড়ার বেতবেড়িয়ায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

বাড়ি ফেরার কথা বলতেই ফোনের ও প্রান্তে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন বছর ষাটের মরিচা বিবি।

প্রায় ছ’বছর লোকের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থাকার পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি বাড়ি ফিরলেন। বিজেপির মিছিলে হেঁটে এত দিন পরে গাঁয়ের মাটিতে পা দিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না তিনি। বিবর্ণ কাপড়ের খুঁটে চোখ মুছতে-মুছতে তিনি বলেন, “রাতের অন্ধকারে এক কাপড়ে গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল সে দিন। সেই থেকে শুধু কেঁদেই গিয়েছি। কেউ আমাদের কথা শোনেনি।”

শুধু মরিচা বিবি নন। তাঁদের মতো ৩৮টি পরিবারের প্রায় দেড়শো নারী-পুরুষ-শিশু ২০১৩ থেকে গ্রামছাড়া। সে বছর বেতবেড়িয়া গ্রামের হাইস্কুলে পরিচালন সমিতির নির্বাচন ঘিরে গন্ডগোলে খুন হয়েছিলেন আশাদুল মন্ডল নামে এক সিপিএম নেতা। বাড়িতে ঢুকে সকলের সামনেই তাঁকে খুন করা হয়। অভিযোগ ছিল গ্রামের তখন হৃদয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রধান আলেয়া বিবির স্বামী আশরফ ঘরামি-সহ বেশ কিছু তৃণমূল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। সেই রাতেই সিপিএম কর্মীদের একের পর এক বাড়িতে হামলা চালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিবারগুলোকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় গ্রাম থেকে।

এর আগে জেলা প্রশাসনের তরফে একাধিক বার গ্রামছাড়াদের ফেরানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আশরফের দাপটে সেটা সম্ভব হয়নি। তৃণমূলের একাংশ উদ্যোগী হলেও শেষ পর্যন্ত তারাও পেরে ওঠেনি। দিনের পর দিন এতগুলো পরিবারের বাড়িছাড়া হয়ে থাকাটা মেনে নিতে পারেননি গ্রামের অনেকেই। কিন্তু আশরফের ভয়ে কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছিলেন না। এমনকি গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীরা গ্রামের চারটি বুথে প্রার্থীও দিতে পারেনি।

কিন্তু ভিতরে-ভিতরে ক্ষোভের বারুদ জমছিল। লোকসভা ভোটের সময় থেকে সেই জায়গাটাই ধরে নেয় বিজেপি। ঘরছাড়াদের ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনসমর্থন পায় তারা। বেতবেড়িয়া গ্রামে তাদের শক্তিবৃদ্ধি হতে থাকে। আশরফের একদা ঘনিষ্ঠেরাও তাকে ছেড়ে বিজেপিতে চলে যেতে থাকেন। বিজেপি ঠিক করে, ৫ সেপ্টেম্বর তারা মিছিল করে ঘরছাড়াদের নিয়ে গ্রামে ঢুকবে। তার পরে গ্রামে একটা সভাও করা হবে।

বুধবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল তার প্রস্তুতি। গ্রামের বেশ কয়েকটা জায়গায় বিজেপির পোস্টার মারা হয়। কয়েক দিন গ্রামে ছিলেন না আশরফ। বিজেপির অভিযোগ, দিন দুয়েক আগে ফিরে ঘরছাড়াদের গ্রামে ঢোকা বানচাল করতে আশরফ রাতে লোকজন নিয়ে নলালু শেখ নামে এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলা চালান। বাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি রাস্তায় যথেচ্ছ বোমা-গুলি ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যায় চাপড়া থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামের মানুষ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজেপির লোকজন মিছিল করে গ্রামে ঢুকতে থাকেন। আশপাশের গ্রাম থেকে কয়েকশো মানুষ ঘরছাড়াদের নিয়ে মিছিল করেন। গন্ডগোলের আশঙ্কা থাকায় সকাল থেকেই গ্রামে মোতায়ন ছিল প্রচুর পুলিশ। বিকেলে বিজেপি সভা করে। ২০১৩ সালের পর এই প্রথম কোনও বিরোধী দল এই গ্রামে সভা করল। সভার শেষে ঘরছাড়াদের ঘরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

বিজেপির জেলা পরিষদ ১৯ মণ্ডল কমিটির সভাপতি প্রকাশ অধিকারী বলেন, “আমরা কোনও অশান্তি চাই না। তবে হামলা হলে আমরাও বসে থাকব না।” আশরফ ঘরামিকে ফোন করা হলে সংবাদিক শুনেই তিনি কেটে দেন। তৃণমূলের চাপড়া ব্লক সভাপতি জেবের শেখ বলেন, “এ বার যদি আমাদের দলের কেউ গন্ডগোল করে তার দায় কিন্তু দল নেবে না।’’

BJP TMC CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy