Advertisement
E-Paper

দায়িত্বে স্থায়ী অধ্যক্ষ, স্বস্তি শিক্ষকমহলে

অবশেষে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ শুরু হল রাজ্যের কলেজগুলিতে। বিদ্যাসাগর, বর্ধমান, সিধো-কানহো-বীরসা, কল্যাণী কিংবা বারসাত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত বেশ কিছু কলেজে সম্প্রতি স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। নতুন অধ্যক্ষেরা দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০১:৫১

অবশেষে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ শুরু হল রাজ্যের কলেজগুলিতে। বিদ্যাসাগর, বর্ধমান, সিধো-কানহো-বীরসা, কল্যাণী কিংবা বারসাত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত বেশ কিছু কলেজে সম্প্রতি স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। নতুন অধ্যক্ষেরা দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছেন। বেশ কিছু কলেজে চলতি মাসেই অধ্যক্ষদের যোগদান করার কথা।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ছেচল্লিশটি কলেজের মধ্যে মুর্শিদাবাদে ২৬টি কলেজ রয়েছে। এই কলেজগুলির অধিকাংশ এখনও চলে টিচার-ইন-চার্জকে দিয়ে। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের কৃষ্ণনাথ কলেজে সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পাঁচথুপি হরিপদ গৌরাবালা কলেজে সোমা মুখোপাধ্যায়কে স্থায়ী অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্রুত আরও কয়েক’টি কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হবে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর। নদিয়ার চাকদহ, কৃষ্ণনগর এবং কল্যাণী মহাবিদ্যালয়ে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়েছে। কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছেন মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত দুই মেদিনীপুরের ৪২টি কলেজের মধ্যে ২৩টিতেই স্থায়ী অধ্যক্ষ ছিলেন না। কোথাও তিন-চার বছর, কোথাও বা তারও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন টিচার-ইনচার্জরা। কিন্তু টিচার-ইনচার্জদের নিয়মমাফিক ক্লাস নিতে হয়। ফলে, অনেক সময়ই প্রশাসনিক কাজকর্ম সময়মতো সেরে ওঠা সম্ভব হচ্ছিল না। কলেজগুলোয় স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ হলে এই সমস্যার সুরাহা হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ হওয়ায় আরও কিছু সমস্যা কমতে পারে বলে মত শিক্ষকমহলের। কেমন?

কলেজ সূত্রে খবর, টিচার-ইন-চার্জ নিয়োগ করে কলেজ পরিচালন সমিতি। রাজ্যের বেশির ভাগ কলেজেই এই মুহূর্তে তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ পরিচালন সমিতি রয়েছে। ওয়াকিবহল মহলের মত, টিচার-ইন-চার্জদের নিয়োগ কর্তা যেহেতু পরিচালন সমিতি সেহেতু তাদের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা থেকেই যায়। অনেক টিচার-ইন-চার্জ পরিচালন সমিতির কোনও সিদ্ধান্ত মনোমত না হলেও প্রতিবাদ করার সাহস দেখান না। রাজনীতির সুবাদে অনেক কলেজেই পরিচালন সমিতির সঙ্গে ছাত্র সংসদের সুসম্পর্ক থাকে। ফলে টিচার-ইন-চার্জ ছাত্র সংসদের কোনও অন্যায় দেখলেও অনেক ক্ষেত্রে তেমন জোরদার প্রতিবাদ করতে চান না। ছাত্র সংসদ কিংবা পরিচালন সমিতির বিরাগভাজন হয়ে টিচার-ইন-চার্জ পদত্যাগ করেছেন— এমন উদাহরণও রয়েছে। ‘‘কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ থাকলে এই প্রবণতায় অনেকটাই রাশ টানা যায়’’— মত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের।

দুই মেদিনীপুরের প্রায় ১৪টি কলেজে ইতিমধ্যে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ শুরু হয়েছে। মেদিনীপুর শহরের তিনটি কলেজেই সম্প্রতি অধ্যক্ষরা যোগদান করেছেন। মেদিনীপুর কলেজের টিচার-ইনচার্জ ছিলেন সুধীন্দ্রনাথ বাগ। তাঁর কাছ থেকে দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছেন অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র বেরা। কমার্স কলেজের টিচার-ইন-চার্জ ছিলেন বিবেকানন্দ দাস মহাপাত্র। তাঁর কাছ থেকে দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছেন অধ্যক্ষ দুলালচন্দ্র দাস। মহিলা কলেজের (গোপ কলেজ) টিচার-ইনচার্জ ছিলেন কৃষ্ণা মাইতি। সেখানে অধ্যক্ষা হয়েছে জয়শ্রী লাহা। অন্য এলাকার কলেজগুলোতেও অধ্যক্ষরা যোগদান করতে শুরু করেছেন। যেমন, গড়বেতা কলেজের টিচার-ইনচার্জ ছিলেন মন্টুকুমার দাস। তাঁর কাছ থেকে দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছেন অধ্যক্ষ হরিপ্রসাদ সরকার। খড়্গপুর কলেজের টিচার-ইন-চার্জ ছিলেন অচিন্ত্য চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন অধ্যক্ষ নির্মল হাজরা। কেশপুর কলেজ, হিজলি কলেজের মতো কয়েকটি কলেজেও চলতি মাসেই অধ্যক্ষদের যোগদান করার কথা।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ১০৪টি কলেজের অর্ধেকরও বেশি কলেজে টিচার-ইন-চার্জ দিয়ে যাবতীয় চালানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, কিছু কলেজে সদ্য কিছু স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়েছে। একই অবস্থা সিধো-কানহো-বীরসা বা বারাসত রাষ্টীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বারাসত রাষ্টীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত বনগাঁ, গোবরডাঙা হিন্দু কলেজে সম্প্রতি স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়েছে।

এক সময় রাজ্যে সব মিলিয়ে ২০৭টি কলেজে অধ্যক্ষের পদ শূন্য ছিল। পরিস্থিতি দেখে মাস কয়েক আগে কলেজ সার্ভিস কমিশন বিজ্ঞপ্তি দেয়। বিজ্ঞপ্তি দেখে ইচ্ছুক অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা কলেজ সার্ভিস কমিশনে আবেদন জানান। ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ১৫০ জনের প্যানেল তৈরি হয়। পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, অধ্যক্ষ হওয়ার ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ইচ্ছুক নন।

এর কারণ নিয়ে অবশ্য নানা মত রয়েছে। বাম প্রভাবিত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটার মতে, শিক্ষাক্ষেত্রে বারবার নৈরাজ্যের ঘটনার পরেও মুখ্যমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রী কড়া অবস্থান নেননি। উল্টে যে সব ক্ষেত্রে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ জড়িত, সেখানে ‘ছোট ছেলেদের ভুল’ বলে দায় এড়িয়ে গিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে বিপাকে পড়তে চাননি কলেজ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ। তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার অবশ্য দাবি, এ সবই কুত্‌সা-অপপ্রচার। বাম-আমলেই শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। এখন বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটে। সে সব কড়া হাতেই দমন করা হয়।

Permanent principal bardhaman baharampur murshidabad kalyani university
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy