—ফাইল চিত্র।
দু’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করেছেন, কোনও ভাবেই বিদ্বেষের আঁচ ছড়িয়ে রাজ্যকে অশান্ত করতে দেওয়া চলবে না। তার জন্য তৃণমূল স্তর পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে পুলিশকে।
অথচ তার পরেও নদিয়ায় একটার পর একটা গোলমালের ঘটনা রোখা যাচ্ছে না। এক দিন নবদ্বীপে শিক্ষকের বাড়িতে হামলা করছে স্বঘোষিত ‘দেশপ্রেমী’র দল তো আর এক দিন তাহেরপুরে কাশ্মীরি শালওয়ালাকে মারে নাক ফাটিয়ে দিচ্ছে ‘জয় হিন্দ’ বলাতে বদ্ধপরিকর মত্ত জনতা।
তাহেরপুরের ঘটনায় লোকমুখে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাশ্মীরি যুবকটিকে উদ্ধার করেছে। দুই ঘটনাতেই ধরপাকড় হয়েছে। কিন্তু ঠিক মতো নজরদারি থাকলে এই সব ঘটনা ঘটছে কী করে, তার আগেই ষড়যন্ত্রকারীদের আটকানো যাচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নও উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ কী করছে? কেন দীর্ঘদিন ধরে জেলায় শান্তিতে কারবার করে চলা নির্বিরোধী কাশ্মীরিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারছে না জেলা পুলিশ?
জেলার বাসিন্দা মাত্রেই জানেন, এই সব শালওয়ালারা কেউ তিরিশ তো কেউ তার চেয়েও বেশি বছর ধরে নদিয়ায় আসা-যাওয়া করছেন। বাড়ি ভাড়া করে থাকছেন, ব্যবসা করছেন। তাঁরা মুখচেনা তো বটেই, এলাকার বহু মানুষের সঙ্গে তাঁদের সুসম্পর্ক রয়েছে। কাশ্মীরে বিস্ফোরণের পরেই রাতারাতি তাঁদের ‘শত্রু’ বলে দাগিয়ে দিয়ে খাপ পঞ্চায়েত বসিয়ে দিচ্ছেন যাঁরা, তাঁদের কিন্তু নজর করা খুব শক্ত নয়। কেননা এই ধরনের হামলার আগে থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় টানা প্রচার চলছে, বিষোদ্গার করা হচ্ছে। পুলিশের কেন তা সময় মতো নজরে পড়ছে না, সেই প্রশ্নটা কিন্তু এড়ানো যাচ্ছে না।
যেমন সোমবার রাতে তাহেরপুরে কাশ্মীরি শালওয়ালার উপরে হামলার আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া বাহিত হয়ে ফোন থেকে ফোনে ছুটেছে একটি আবেদন। রানাঘাটের এক তরুণীকে তাতে বলতে শোনা গিয়েছে, এখানে আসা প্রত্যেক কাশ্মীরিকে ধরে ‘জয় হিন্দ’ বলতে বাধ্য করুন। এ হেন মহান দায়িত্ব নিতে আমজনতাকে যারা উদ্বুব্ধ করছে, কার্যত প্ররোচিত করছে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে, তারা কী করে গোয়েন্দা-পুলিশের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে, সেই প্রশ্নের সদুত্তর বুধবার রাত পর্যন্ত মেলেনি।
জেলা পুলিশ অবশ্য দাবি করছে, গোয়েন্দা বিভাগকে সতর্ক করা হয়েছে। পুরসভা এলাকাগুলিতে থানাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গোয়েন্দাদের পাশাপাশি সিভিক ভল্যান্টিয়ারদেরও সতর্ক ও সক্রিয় রাখা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলছেন, “আমরা চার দিকে নজর রাখছি। আগাম জানার চেষ্টা হচ্ছে, কোথাও প্ররোচনা দিয়ে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে কি না। জানতে পারলেই সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
পুলিশ সুপারের দাবি, সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও তাঁদের লোকেরা মিশে আছে। তাদের আগের চেয়ে সক্রিয় করা হয়ছে, যাতে তারা ভিড়ে মিশে থেকে পরিস্থিতি আগে থেকে আঁচ করতে পারে এবং থানায় খবর দিতে পারে। ঘটনা যদি দৈবাৎ ঘটেও যায়, অভিযুক্তদের শনাক্ত করতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। নজর রাখা হচ্ছে বিভিন্ন ঠেকের উপরেও। প্রত্যেকটি থানাকে বলে দেওয়া হয়েছে, এই ধরনের ঘটনা ঘটলে যেন কোনও ভাবেই নরম মনোভাব দেখানো না হয়। কঠোরতম আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
তার পরেও তাহেরপুরে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল কী করে? কেন পুলিশের দু’দিন লেগে গেল পদক্ষেপ করতে? পুলিশ সুপারের দাবি, “পুলিশ সক্রিয় আছে বলেই তো ওই কাশ্মিরী যুবক অভিযোগ না করায় আমরাই নিজে থেকে মামলা রুজু করে এক জনকে গ্রেফতার করেছি। বাকিদেরও ধরা হবে। কেউ ছাড়
পাবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy