Advertisement
০৪ মে ২০২৪

কিসান মান্ডি নামেই, নেই চাষির দেখা

সরকার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মান্ডি খোলার পরে দু’এক দিন সব্জি নিয়ে গিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের ভালুকার চাষি কৈছর শেখ। ভালুকা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে জাহাঙ্গিরপুরে ফাঁকা জায়গায় মান্ডি তৈরি হয়েছে।

কিসান মান্ডিতে ঠাঁই হয়েছে ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাইকেলের। নিজস্ব চিত্র

কিসান মান্ডিতে ঠাঁই হয়েছে ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাইকেলের। নিজস্ব চিত্র

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ০১:৫২
Share: Save:

বাজার আছে, খদ্দের নেই।

সরকার বাজার বসানোর জায়গা করেছে তেপান্তরের মাঠে। অত দূরে কেউ যেতে চায় না।

বা, হয়তো জায়গা হয়েছে কাছে-পিঠেই। কিন্তু সে রকম কিছু ব্যবস্থা যে হয়েছে, সেটাই লোকে জানে না।

ফল? মুর্শিদাবাদে ২১টি কিসান মান্ডির মধ্যে মাত্র চারটিতে প্রতি দিন বেচাকেনা হয়। তাও ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা বেশি নয়। নদিয়াতেও ১০টি মান্ডির মধ্যে তিনটিতে কোনও দিন বাজারই বসেনি। নীল-সাদায় রাঙানো বহু মান্ডিই কার্যত অস্থায়ী গুদাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেগুলিতে ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাইকেল মজুত রাখা হয়।

সরকার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মান্ডি খোলার পরে দু’এক দিন সব্জি নিয়ে গিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের ভালুকার চাষি কৈছর শেখ। ভালুকা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে জাহাঙ্গিরপুরে ফাঁকা জায়গায় মান্ডি তৈরি হয়েছে। ভালুকা বটতলার পাইকারি বাজার ছেড়ে সেখানে গিয়েছিলেন কৈছর। তাঁর কথায়, ‘‘লোকজন আসে না। সব্জি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। তাই পরে আর যাইনি।’’

লোকালয় থেকে দূরে মাঠের মধ্যে মান্ডি হয়েছে কান্দিতেও। মাহাদিয়া গোপালপুরের চাষি কিরণ ঘোষ বলেন, ‘‘ওখানে খদ্দেররা যেতে চান না। খদ্দেরই যদি না যায়, সব্জি নিয়ে গিয়ে কী করব?’’ বহরমপুরেও ভাকুড়ি থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে মান্ডি হয়েছে। সব্জি বিক্রেতা মাধব মণ্ডল বলেন, ‘‘ভাকুড়ি মোড়ে পুরনো সব্জি বাজার থেকে কিসান মান্ডির দূরত্ব অনেক। ফলে ক্রেতা বা বিক্রেতা, কেউই যাচ্ছেন না।’’

সরকারি খাতা বলছে, মুর্শিদাবাদে ২১টি মান্ডির মধ্যে ১৩টিতে কোনও দিন চাষিরা আসেননি। কয়েকটিতে সপ্তাহে এক দিন বা দু’দিন হাট বসে। গত সপ্তাহে জেলায় এসে প্রশাসনিক বৈঠকের শেষে রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত দাবি করেছিলেন, আটটি মান্ডি চালু আছে। অসত্য নয়, কিন্তু বাস্তবে সেগুলিতে বিক্রিবাটা প্রায় কিছুই নেই। কী ভাবে এই অবস্থা পাল্টাবে? মন্ত্রীর বক্তব্য, অন্য নানা জেলায় কিসান মান্ডি নিয়ে প্রচারের পরে বাজার জমে উঠেছে। এই জেলাতেও প্রচার করা হবে। কিসান মান্ডিগুলি চালু করার জন্য জেলা প্রশাসনকেও নির্দেশ দিয়ে যান তিনি। জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘সব কিসান মান্ডি চালু করার ব্যবস্থা হচ্ছে। চাষি এবং ক্রেতাদের বুঝিয়ে ওই সব বাজারে নিয়ে যাওয়া হবে।’’

নদিয়ায় অবস্থাটা কিঞ্চিৎ ভাল। সরকারি হিসেব বলছে, ১০টি কিসান মান্ডির সব ক’টিই আংশিক ভাবে চালু আছে। কেননা সব ক’টিতেই সরকারি ভাবে ধান কেনা হয়। সাতটি মান্ডিতে নিয়মিত কিছু চাষি ও খদ্দের আসেন। কিন্তু তা যে মোটেই বিশেষ জমেনি, ‘সবুজ সাথী’র সাইকেল রাখাতেই তা স্পষ্ট। কালীগঞ্জ, কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের জাহাঙ্গিরপুর এবং তেহট্ট ১ ব্লকের মান্ডিতে আবার এখনও পর্যন্ত কোনও বাজারই বসেনি। কৃষ্ণনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিবনাথ ঘোষের আক্ষেপ, ‘‘মূল বাজার থেকে দূরে হওয়ায় এই সমস্যা। আমরা ক্রেতা-বিক্রেতাদের বুঝিয়েও এখানে আনতে পারিনি। প্রশাসনকে বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা বলেছি।’’

নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তর আশ্বাস, ‘‘কিসান মান্ডিগুলি যাতে সপ্তাহে সাত দিনই চলে, সেই চেষ্টা করছি। যারা স্টল নিয়ে এখনও চালু করেননি, প্রয়োজনে তাঁদের থেকে স্টল ফিরিয়ে নেওয়া হবে। যে ভাবেই হোক, আমরা মান্ডিগুলি চালু করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE