পরিক্রমা: নবদ্বীপে তোলা নিজস্ব চিত্র।
কাকভোরে ইস্কন মন্দিরের সিংহদুয়ার খুলতেই দোল লাগল নবদ্বীপে।
মঙ্গলবার মায়াপুরের মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে মিছিলের স্রোত নদী ঘেঁষা রাস্তা উপচে ছড়িয়ে পড়ল নবদ্বীপ, বেলপুকুর, রাজাপুর, হরিহরক্ষেত্রে। কারও যাত্রা উত্তর থেকে দক্ষিণে, কেউ চলেছেন পশ্চিম থেকে পুবে। এ মিছিলে মৃদঙ্গের তালে একাকার হয়ে যায় মায়াপুর-মেক্সিকো-মেদিনীপুর। কীর্তনে কুয়ালালমপুরের সঙ্গে সুর মেলায় কাকদ্বীপ। এমন অসংখ্য ছোট-বড় মিছিল নবদ্বীপের দোল উৎসবের মূল আকর্ষণ।
এ মিছিলের পোশাকি নাম ‘নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমা’। গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতে, নবদ্বীপ ন’টি দ্বীপের সমাহার। নরহরি চক্রবর্তীর লেখা ‘ভক্তিরত্নাকর’ গ্রন্থ অনুযায়ী নবদ্বীপের ন’টি দ্বীপ (প্রাচীন মায়াপুর, রাজাপুর, বিদ্যানগর, জাহান্নগর, বেলপুকুর, মামগাছি, হরিহরক্ষেত্র প্রভৃতি) নবদ্বীপ ও লাগোয়া বর্ধমানের কিছু জায়গায় অবস্থিত।
প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে দোলের প্রায় পনেরো দিন আগে থেকে শুরু হয়ে যায় এই পরিক্রমা। সব মিলিয়ে ৭২ কিলোমিটার পথ। সন্ন্যাস গ্রহণের আগে নবদ্বীপে থাকাকালীন বিশ্বম্ভর মিশ্রের যাতায়াত ছিল যে সব জায়গায়, সেই সব এলাকায় সংকীর্তন সহযোগে পরিক্রমার মধ্যে দিয়েই নবদ্বীপে দোল উৎসবের সূচনা হয়। দস্তুর হল, তার আগে সাত দিন, পাঁচ দিন বা তিন দিন, নিতান্ত অক্ষম হলে একটা দিন পায়ে পায়ে ছুঁয়ে যাওয়া চৈতন্যধামের ভগ্ন দেউল, নদীর পাড়, প্রান্তর, পাড়া-গাঁ।
এখানে গঙ্গার দু’পাড়ের ছোট বড় সব মঠ-মন্দিরই পৃথক ভাবে আয়োজন করে পরিক্রমার। আর এই পরিক্রমা করতেই পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন লাখো ভক্ত। আসলে নবদ্বীপের দোল যতটা শ্রীকৃষ্ণের তার থেকে অনেক বেশি চৈতন্যের জন্মতিথি উদযাপন। নবদ্বীপে এর নাম গৌরপূর্ণিমা। এ দিন মায়াপুরের ইস্কন মন্দির থেকে মোট পাঁচটি পৃথক দল পরিক্রমা শুরু করেছে। ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রসিকগৌরাঙ্গ দাস জানান, বিশ্বের শতাধিক দেশ থেকে থেকে আসা মোট বারো হাজার দেশি-বিদেশি ভক্তকে নিয়ে পরিক্রমা শুরু হয়েছে। টানা আট দিন সাত রাত ধরে চলবে পরিক্রমা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy