জন্মাষ্টমীতে জন্মালে কৃষ্ণ, শুক্লাপঞ্চমীতে সরস্বতী, বড়দিনে যিশু! বছরের প্রথম দিনেও চাহিদা ছিল বেশ। শহরের পরিচিত নার্সিংহোম পরিপাটি ব্যবস্থা রেখেছে প্রজাতন্ত্র দিবসের জন্য! চশমার কাচ মোছার ফাঁকে, নার্সিংহোমের মালিক, পরিচিত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ তাই জানিয়ে রাখছেন, ‘‘খান তিনেক রিকোয়েস্ট এখনই এসে গিয়েছে, দেখা যাক!’’
প্রবাদ বলে, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে! মানুষের নাকি এ তিনে হাত নেই। ধুস, মানুষের এখন সবেতেই নিখুঁত পরিকল্পনা, দিনক্ষণ আগাম স্পষ্ট করে লেখা।
ভাল কেরিয়ার, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে অ্যাডমিশন, গোছানো অ্যাম্বিশনের মতোই এখন নবজাতকের আসা যাওয়ার দিনক্ষণও একটু আগে থেকে ঠিক করে রাখতে চাইছেন বাপ-মায়েরা।
‘‘ছেলের জন্ম পয়লা জানুয়ারি, এটা বলতেও বেশ লাগে জানেন’’, হাসপাতালের শয্যা থেকে এমনই জানিয়েছিলেন বহরমপুরের মহিলা। ‘‘ভাবতে পারেন, একই দিনে সান্টা ক্লজ় আর আমার ছেলের জন্মদিনের কেক কাটা হচ্ছে’’, উত্তেজনা মফসসলের মহিলার গলাতেও।
হাসপাতালে কাকতালীয় ভাবে তা হতে পারে, কিন্তু নার্সিংহোম, ফেলো কড়ি মাখো তেলের সেই ব্যবস্থায় ইচ্ছে মতো ‘ডেট’ মিলছে এখনও। আর তাই বছরের এই সময়টায় বেশ ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
২৫ ডিসেম্বরের জন্য বহরমপুরের তিনটি নার্সিংহোমে আব্দার ছিল ১৩টি সিজ়ারিয়ান বেবির। ১ জানুয়ারি ১১ এখন ২৬ জানুয়ারির জন্য ইতিমধ্যেই সাতটি অনুরোধ এসে গিয়েছে।
পিছিয়ে নেই গ্রামও। অনেক মা’কেই পনেরো অগস্ট ডেট চাইতে দেখা গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন, গ্রামীণ হাসপাতালের এক চিকিৎসক। বলছেন, ‘‘আমি তো শুনে থ হয়ে গিয়েছিলাম। একেবারেই আটপৌরে গ্রামীণ মহিলা, বলছেন, দু’দিন আমি সামলে নেব, আপনি ১৫ অগস্টেই দিন ঠিক করুন!’’
পূর্ব বর্ধমানের পান্ডবেশ্বরের সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ও বুল্টি চট্টোপাধ্যায়, দু’জনেই স্কুল শিক্ষক। তাঁদের ‘লক্ষ্য’ ছিল ২৫ ডিসেম্বর। তাই পেয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘মনে হয়েছিল ২৪ ডিসেম্বর ডেলিভারি হয়ে যাবে। কিন্তু ২৫ তারিখই অস্ত্রোপচার করিয়েছি।’’
নদিয়ার তেহট্টের এলাকার আদি বাসিন্দা। বর্তমানে চাকরি সূত্রে বহরমপুরে থাকেন সঞ্চিতা বিশ্বাস ও দেবজ্যোতি বিশ্বাস। তাঁদের সন্তান হয়েছে পয়লা জানুয়ারি একটি বেসরকারি হাসপাতালে। দেবজ্যোতি বলছেন, ‘‘বছরের প্রথম দিন। কত স্বপ্ন কত পরিকল্পনা।’’ বহরমপুরের বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকার একটি বেসরকারি নার্সিংহোম এ দিন জানাচ্ছে, তাদের প্রতিদিন গড় ৩-৪ টে সিজ়ার হয়। পয়লা জানুয়ারি ৭টা হয়েছে। ইন্দ্রপ্রস্থ লাগোয়া একটি নাসিং হোম জানাচ্ছে, ১ জানুয়ারি তাদের চিকিৎসকেরা ছুটিতে ছিলেন। ফলে ভাল দিন কাজে লাগেনি। তবে ২৫ ডিসেম্বর সামাল দেওয়া যায়নি, সংখ্যাটা ১৩।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy