Advertisement
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রান্ত-গ্রামে ওঁরাই ভরসা, মানছে স্বাস্থ্য দফতর

পদ্মাপাড়ের গ্রাম লালখান্দিয়ার। বছর পঁয়ত্রিশের মালতী মণ্ডলের বমি আর থামে না। রাত ভোর হতে চলল, কিন্তু হাসপাতাল প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরের জঙ্গিপুরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০১:৫৭
Share: Save:

পদ্মাপাড়ের গ্রাম লালখান্দিয়ার। বছর পঁয়ত্রিশের মালতী মণ্ডলের বমি আর থামে না। রাত ভোর হতে চলল, কিন্তু হাসপাতাল প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরের জঙ্গিপুরে।

রাতের বেলায় লছিমন, টোটো পাওয়ার ভরসা নেই। নিরুপায় পরিবারের লোক তাই রাতেই ঘুম থেকে তুলেছিলেন পড়শি হাতুড়ে সেরাজুল ইসলামকে। বাড়িতে গিয়ে একটি ইঞ্জেকশন ও দু’টি ট্যাবলেট দিয়ে সেরাজুল নিদান দিয়েছিলেন, ‘‘দু’ঘন্টা অন্তর খাইয়ে দেখ, না কমলে কিন্তু সোজা হাসপাতাল।’’

কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে আর যেতে হয়নি মালতীকে। সেরাজুলের দাওয়া কাজ দিয়েছিল। ওই ওষুধ খেয়েই সেরে উঠেছিল রোগী।

জিকারুন বিবির বাড়ি সুতি-২ ব্লকের উমরপুর। ঝাড়খন্ড লাগোয়া প্রত্যন্ত অঞ্চল। রাত ন’টা থেকে কম্প দিয়ে জ্বর। গ্রাম থেকে মহেশাইল স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২০ কিলোমিটার দূরে। স্বামী তহিদুল ইসলাম ছুটলেন গ্রামেরই মহম্মদ কাউসারের কাছে। বাইকে চাপিয়ে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই বাড়ি পৌঁছে গোটা কয়েক বড়ি আর এক শিশি দাওয়াই দিতেই দেড় দিনেই জ্বর পালালো জিকারুনের।

জেলার গ্রামেগঞ্জে মালতী ও জিকারুনেরাও য়েমন রয়েছেন তেমনই প্রান্ত গ্রামে বুক ভরা ভরসা নিয়ে রয়ে গিয়েছেন সেরাজুল-কাউসারেরাও। স্বাস্থ্য দফতরের কথায় গ্রামী হাতুড়ে।

হাতুড়ে বদনাম ঘুচিয়ে যাঁরা এখন হাতে চান সরকারি শংসাপত্র। বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্পের সঙ্গে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সংযুক্ত করার দাবি তুলেছেন এই গ্রামীণ চিকিৎসকেরা।

জেলা জুড়ে এই দাবিতেই সরব হয়ে একাধিক সম্মেলনও করেছেন তাঁরা। এ বার এই দাবি নিয়ে ১৮ মার্চ নবান্ন অভিযানের ডাক
দিয়েছেন তাঁরা।

সংগঠনের রাজ্যের সহ-সভাপতি রবিউল আলম জানান, সারা রাজ্যে ২ লক্ষেরও বেশি গ্রামীণ চিকিতসক রয়েছেন। মুর্শিদাবাদ জেলায় এই সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। তাদের প্রথাগত ডিগ্রি না থাকলেও গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষের ছোটোখাটো অসুখ-বিসুখের ক্ষেত্রে তারাই রক্ষা কর্তা। আমাদের ভুললে চলবে কি করে!

সুন্দরবন কিংবা উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রামে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রামের ভরসা এখন তাঁরাই। কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলায় গ্রামীণ সেই চিকিৎসকেরা এখনও ব্রাত্য। সরকারি সিলমোহর এখনও পড়েনি তাঁদের গায়ে।

জেলায় জনসংখ্যা এখন ৮০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। অথচ বহু প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। নেই প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক। স্বাস্থ্য পরিষেবাহীন এমনই এলাকায় জ্বর, সর্দি, কাশির মত ছোটখাটো চিকিৎসায় ওঁরাই ভরসা।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলছেন, “স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন কর্মসূচীতে ওঁদের যুক্ত করা হয়েছে। ওঁদের সাহায্যও নিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রশিক্ষণও ইতিমধ্যেই শুরু করা হয়েছে । কিন্তু সময় লাগবে। তবে সরাসরি তাদের চিকিৎসার ছাড়পত্র দেওয়া যাবে না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Quackish doctor Health Department Remote Village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy