ফাইল চিত্র
পাড়ার চণ্ডীমণ্ডপে জমে উঠেছে বোলান।
মাঝে বেশ কিছুটা জায়গা ছেড়ে দিয়ে গোল হয়ে বসে আছেন দর্শকেরা। কৃষ্ণের অভিনয় দেখে সকলে মুগ্ধ। এক বৃদ্ধা তো ছলছল চোখে কপালে ঠেকালেন করজোড়। ঠাকুমার দেখাদেখি খুদে নাতিও।
বোলান শেষ। ভ্যানরিকশায় উঠছে হারমোনিয়াম, মাইক, আরও সব বাদ্যযন্ত্র। গন্তব্য পাশের গ্রামের মণ্ডপ। বোলানের দুই অভিনেতা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বিড়িতে টান দিচ্ছেন। সেই দৃশ্য দেখে খুদে তো অবাক। ঠাকুমার হাত ধরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে খুদে বলে বসল, ‘‘ও ঠাম্মা, ওরা তো দেবতা। দেবতারা বিড়ি খাচ্ছে কেন?’’
মুর্শিদাবাদের গাঁ-গঞ্জে এ বড় চেনা দৃশ্য। বোলানের দলে ছড়াকার, নটনটী, যন্ত্রশিল্পী মিলিয়ে কমবেশি ২০ থেকে ২৫ জন থাকেন। আগে তো পুরুষরাই মহিলা সেজে অভিনয় করতেন। এখন অবশ্য কিছু কিছু বোলান দলে মহিলারা অভিনয় করেন। তবে সংখ্যায় খুব কম।
মুর্শিদাবাদের এক বোলান শিল্পী বলছেন, ‘‘আমরা সকলেই মাঠে কাজ করি। আমাদের মধ্যেই কেউ কেউ এত দিন মহিলা সাজতেন। তবে এ বছর আমাদের নায়িকা আসছেন নদিয়া থেকে। তিনি সাত দিনে ১২ হাজার টাকা নেবেন।’’ বোলানের নারী চরিত্রে অভিনয় করে বিড়ম্বনায় পড়েছেন এমন লোকও আছে। মুর্শিদাবাদের রতন নামে এক যুবক বোলানে সীতা সাজেন। সাজ তো বটেই, অভিনয়ের সময় গলাটাও এত মিহি করে ফেলেন যে, অনেকেই মহিলা বলেই ধরে নেন।
ওই যুবকের কথায়, ‘‘বোলানের সময় যা হল তাই হল। বোলান শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও অনেকে মজা করে সীতা বলেই ডাকে। সে-ও না হয় সহ্য করা যাচ্ছিল। সদ্য বিয়ে করা বউও মাঝে মাঝে সীতাদেবী বলে ডেকে মুখ টিপে হাসেন। কী কাণ্ড, বলুন তো!’’
শক্তিপুরের পোড়ামাতলা, কাছারিপাড়া ও বাজারপাড়ায় আজও বোলান হয় রাত পর্যন্ত। সেখানে রাধা সেজেছিলেন এক যুবক। ওই যুবকের বিড়ি খাওয়ার নেশা। অভিনয়ের ফাঁকে মোড়ের দোকানে বিড়ি কিনতে গিয়ে বেজায় বিপদে পড়েন তিনি। টাকা দিয়ে শেষতক বিড়ি মিলল বটে। কিন্তু দোকানি তখনও গজগজ করে চলেছে, ‘‘কী দিনকাল পড়ল রে বাবা! পাড়া গাঁয়ের মেয়েরাও এই বদনেশা ধরে ফেলল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy