Advertisement
E-Paper

আড়াই বছর পরে মিলল বিচার, এক ডাকাত অধরাই

গোটা দেশের নজর যখন ওই কনভেন্টে ডাকাতি ও সন্ন্যাসিনী ধর্ষণ মামলার রায়ের দিকে, রোজকার রুটিনে সেখানে কোনও ছাপ পড়েনি।

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩১
ঘটনার পর মোমবাতি মিছিল। —ফাইল চিত্র।

ঘটনার পর মোমবাতি মিছিল। —ফাইল চিত্র।

কলকাতায় নগর দায়রা আদালত যখন ধর্ষককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনাচ্ছে, তার খানিক আগেই ছুটি হয়ে গিয়েছে গাংনাপুরের কনভেন্ট অফ জেসাস এন্ড মেরি-তে।

গোটা দেশের নজর যখন ওই কনভেন্টে ডাকাতি ও সন্ন্যাসিনী ধর্ষণ মামলার রায়ের দিকে, রোজকার রুটিনে সেখানে কোনও ছাপ পড়েনি। প্রতি দিন যেমন চলে, বুধবারও তেমনই ক্লাস হয়েছে নিয়ম মেনে। সিস্টারদের অনেকেই যদিও চলে গিয়েছিলেন কলকাতায়। ওই রাতে যে নৈশরক্ষীকে বেঁধে হামলা চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা, কলকাতায় তিনিও।

কিন্তু দুষ্কৃতীদের কী সাজা হয়, তা জানতে সকাল থেকেই উদগ্রীব ছিল গোটা গাংনাপুর। তখনও ছুটি হয়নি। ছেলেমেয়েদের নিতে এসে কনভেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অভিভাবকদের মধ্যে ফিসফাস। ছোট-ছোট জটলা আশপাশের দোকানে, পাড়ার মোড়ে।

কনভেন্টের সামনেই বাঁ দিক ঘেঁষে ৩৫ বছর ধরে পানের দোকান চালিয়ে আসছেন স্থানীয় ব্যাবসায়ী চঞ্চল সুর। তিনি বলেন, “এমন দিন দেখতে হবে ভাবিনি। আমার সামনেই এই স্কুল তৈরি হয়েছে। কত জনকে বলেছি, এখানে ছেলেমেয়েকে ভর্তি করতে। দু’বছর ধরে অপেক্ষা করেছি, কখন বিচার মিলবে।’’ বিচার মিলল অবশেষে।

মঙ্গলবারই আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছিল ছ’জনকে। এ দিন দুপুরে ঘোষণা হল সাজা। সত্তরোর্ধ্ব ‘মাদার সুপিরিয়র’কে ধর্ষণ ও ডাকাতির দায়ে নজরুল ইসলাম ওরফে নজুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেন বিচারক। ডাকাতির দায়ে তার সঙ্গী সালেম শেখ, মিলন সরকার, ওহিদুল ইসলাম ওরফে বাবু, খালেদার রহমান মিন্টু ওরফে ফারুককে দশ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হল। সকলেই বাংলাদেশি।

আইনজীবীরা জানান, ডাকাতির অপরাধে যাবজ্জীবন সাজাও হয়। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম শাস্তিই দেওয়া হয়েছে। ডাকাতিতে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও ডাকাতদের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া ও ষড়যন্ত্র করার অপরাধে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার গোপাল সরকারকে সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

২০১৫ সালের ১৩ মার্চ রাতে রানাঘাট রেলস্টেশন থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ওই কনভেন্টের পাঁচিল টপকে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। এমনিতে ডন বস্কো পাড়ায় রোজ রাতে পালা করে পাহারা দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই রাতেও ৪ জন পাহারায় ছিলেন। তাঁরা কনভেন্টের আশপাশে ছিলেন না। ওই পাহারার দলে থাকা সুখলাল মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা ভোর ৪টে অবধি পাহারা দিয়েছি। অন্য দিনের মতোই রাত দেড়টা নাগাদ পুলিশ এসেছিল আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। তখনও আমরা কিছু জানতাম না। বেলা ৮টা নাগাদ শুনি এই কাণ্ড!” কেন কনভেন্টের দিকে তাঁরা নজর রাখেননি? সুখলালের বক্তব্য, ‘‘পাহারার সময়ে শব্দ করলে বা বাঁশি বাজালে সিস্টারেরা বিরক্ত হতেন। তাই কনভেন্টের দিকটায় আমরা বিশেষ যেতাম না।”

পাঁচিল টপকে ঢোকা ছয় দুষ্কৃতীর মধ্যে কিন্তু গোপাল ছিল না। সেই ছ’জনের এক জন এখনও বেপাত্তা। গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য রনি জেমস গোমসের প্রশ্ন, “ডাকাতির দলে থেকেও যে লোকটি ধরা পড়ল না, সে কি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল?” বিচারের দিনেও একটি কাঁটা কিন্তু রয়েই গেল।

Ranaghat Rape Ranaghat rape case রানাঘাট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy