সৌমিক হোসেন নিজেই খাবার পরিবেশন করছেন। ডান দিকে, সালামতুল্লার লোকজনের পিকনিক। ডোমকলে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
বছরের প্রথম দিন, কনকনে ঠান্ডা, গরমাগরম খিচুড়ি!
ভরা পৌষের এমন ত্র্যহস্পর্শে মেজাজটাই ফুরফুরে হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ডোমকলে অন্তত তেমনটা হল না। উল্টে তৃণমূলের দু’পক্ষের এমন খিচুড়ি-প্রতিযোগিতায় দিনভর সতর্ক থাকতে হল পুলিশকে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘দু’পক্ষের গন্ডগোল তো লেগেই আছে। আর এই খিচুড়ি নিয়ে দু’পক্ষ যা শুরু করেছিল তাতে যে কোনও সময় বড় গন্ডগোল হতেই পারত। ফলে বাড়তি পুলিশের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল। খিচুড়ি কতটা গরম ছিল জানি না। তবে খিচুড়িকে কেন্দ্র করে ডোমকল বেশ তপ্ত ছিল।’’
এ দিন কেউ বলেছেন, ‘‘আরে, আমাদের খিচুড়ির সঙ্গে মুরগির মাংসই আছে পনেরো কুইন্টাল।’’ অন্য পক্ষ থেকে জবাব এসেছে, ‘‘তোদের মুরগি মানে তো পোলট্রি। দিশি হলেও একটা কথা ছিল। আমাদের খিচুড়ির সঙ্গে রেওয়াজি খাসির মাংস।’’
দলীয় সূত্রে খবর, মূলত লড়াইটা ডোমকলের পুরপ্রধান সৌমিক হোসেন বনাম ডোমকল পুরসভার এক কাউন্সিলরের স্বামী সালামতুল্লার। সালামতুল্লার পক্ষের লোকজনের দাবি, ‘‘ইংরেজের মতো বাইরে থেকে এসে কেউ ডোমকলকে শাসন ও শোষণ করবে, সেটা মেনে নেব না।’’ আর সৌমিকের লোকজনের পাল্টা দাবি, ‘‘কিছু লোকজন ডোমকলের রাজনীতিটাকে শেষ করতে চাইছে।’’
গোষ্ঠীকোন্দলের বিষয়ে সৌমিক মুখ খুলতে নারাজ। তিনি বলছেন, ‘‘নতুন বছরের প্রথম দিন আমরা বুথে বুথে খিচুড়ি-মাংসের আয়োজন করেছি। আর শুনেছি, ডোমকলে রেশন ডিলার আর ইটভাটা সংগঠনের কিছু লোকজন মানুষকে খিচুড়ি খাওয়াচ্ছেন।’’
ডোমকলের বুথে বুথে খিচুড়ির আয়োজন করেছিলেন সৌমিক। আর ডোমকল স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মাঠে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেছিলেন সালামতুল্লা। এ দিন বাইকের সামনে পতপত করে উড়েছে তৃণমূলের পতাকা। মাথায়া বাঁধা জোড়া ফুলের ফেট্টি। সকলেরই গন্তব্য ছিল খিচুড়ি-পিকনিকে। কারা কোন পিকনিকে যাচ্ছে তা নিয়েও চর্চা চলেছে দিনভর। কেউ বলেছেন, ‘‘সৌমিকই পুরপ্রধান। সেখানে না গেলে চাপ হবে।’’
কারও বক্তব্য, ‘‘সালামতুল্লাকেও দুর্বল ভাবার কিছু নেই। ওঁর পিছনে বড় মাথা আছে। তাই সেখানেই যাব।’’ কেউ কেউ আবার কাউকেই চটাতে চাননি। খাসি-মুরগি দু’টোই চেখেছেন। কী ব্যাপার? হাসতে হাসতে তাঁরা বলছেন, ‘‘আরে ভাই দু’পক্ষই তো তৃণমূল। অসুবিধা কোথায়?’’
সালামতুল্লার দাবি, ‘‘১৫ হাজার মানুষ এ দিন আমাদের সঙ্গে ছিলেন। বছরের প্রথম দিন আমরা শপথ নিয়েছি, শরণার্থী এক নেতাকে গঙ্গার ওপারে ফেরত পাঠাব।’’
যা শুনে সৌমিক শিবিরের লোকজনের পাল্টা দাবি, ‘‘এই পনেরো হাজার লোক নিয়ে এত কথা না বলাই ভাল। ডোমকলে বুথ সংখ্যা, বুথের লোকসংখ্যা কত তা এক বার ওঁরা মিলিয়ে দেখে নিলেই তো পারেন।’’
দিনান্তে খিচুড়ি ঠান্ডা হয়ে গেলেও তপ্ত থাকল ডোমকলের রাজনীতি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy