দুশ্চিন্তায় বাহালনগরের এক পরিবার। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
কাশ্মীরের ভয়াবহ বন্যা ঘুম কেড়েছে সাগরদিঘির দুই গ্রামের বাসিন্দাদের। গত পাঁচ ছ’দিন ধরে যোগাযোগ করতে না পারায় উদ্বেগে, আশঙ্কায় খাওয়া দাওয়া ভুলেছেন সবাই। কারণ দুই গ্রামেরই প্রায় শ’আড়াই বাসিন্দা যে রয়েছেন কাশ্মীরেই। অন্য দিকে, পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় কৃষ্ণনগরের বাসিন্দারাও।
গ্রামে সেভাবে কাজও না মেলায় রুজির টানে প্রতি বছরই সাগরদিঘির বাহালনগর ও ফুলবাড়ি গ্রামের প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা কেরল, বা কাশ্মীরে পাড়ি দেন। কাশ্মীরে ফলের বাগানে মজুরের কাজ করেন প্রায় সবাই। তবে কেউ কেউ রাজমিস্ত্রির কাজও করে থাকেন। প্রায় ১৩-১৪ বছর ধরে এভাবে কাজে যাচ্ছেন। যাতায়াতেই দু’দিন লেগে যায় বলে সেভাবে ঘন ঘন বাড়িতেও আসতে পারেন না তাঁরা। তাই মোবাইলের যোগাযোগই একমাত্র ভরসা। বাহালনগর পঞ্চায়েত প্রধান নজরুল ইসলাম জানান, মাস ছয়েক আগে দুই গ্রামের সব মিলিয়ে প্রায় আড়াইশো বাসিন্দা এ বছর কাশ্মীরে পাড়ি দেন। মূলত তাঁরা শ্রীনগরের পোলয়ামা জেলার চিত্রা, খোঁজপুরা, রেবন, কাথপুরা গ্রামগুলিতে কাজ করছিলেন। মোবাইলে নিয়মিত পরিবারের লোকজনেদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল। কাশ্মীরের বন্যা পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেনও কেউ কেউ। কিন্তু দিন সাতেক পর থেকে মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারছেন না পরিবারের লোকেরা। তাই যত দিন যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতির খবর উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে।
বাহালনগর গ্রামের বাসিন্দা অবিদা বিবির দুই ছেলে ইসমাইল ও নইমুদ্দিন শেখ দীর্ঘদিন থেকেই কাশ্মীরে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যান। তিনি বলেন, “গ্রামবাসীদের দেখাদেখি আমার দুই ছেলেও ওখানে কাজ করতে গিয়েছে। ফোনের আশায় রোজ বসে থাকি। কিন্তু কোনও খবর পাচ্ছি না।” একই দশা বৃদ্ধা মিম্মা বেওয়ারও। দুই ছেলে রোকবুল ও রসিবুল শেখ কাশ্মীরে গিয়েছেন। কিন্তু ক’দিন ধরে তাঁদের ফোন না আসায় উদ্বিগ্ন বৃদ্ধা দেখা হলেই জনে জনে জিজ্ঞাসা করছেন ছেলেদের কথা। ছেলে শোভন শেখের সপ্তাহ ভর কোনও খবর না পেয়ে নাওয়া খাওয়া ভুলেছেন রেহেনা বিবিও। বলছেন, “মোবাইল বাজছে না দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম বাড়ির ফোনটাই বুঝি খারাপ। পরে দেখলাম সবার বাড়িতেই একই অবস্থা। রাতে ছেলের চিন্তায় ঘুমোতে পারি না। শুধু আমিই নই, গোটা গ্রামটাই আজ নিদ্রাহীন।” গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বলেন, “সংবাদ মাধ্যমেও সেভাবে খবর নেই। তাই কেউই কিছু জানতে পারছে না গ্রামের লোকেরা কে কোথায় আছেন।”
অসুস্থ হয়ে দিন কয়েক আগে বাড়ি ফিরেছেন বাহালনগরের আসরাফুল শেখ। রেবন গ্রামে এক পরিবারে ফলের বাগানে দিনমজুরির কাজ করতেন তিনি। জানালেন, দিনমজুরি হিসেবে মাসে প্রায় ৮ হাজার টাকা পাওয়া যায়। ঠিকা শ্রমিকের দিন মজুরি মেলে ৩৫০ থেকে ৪০০টাকা। তিনি বলেন, “৬-৭ মাস পরে সকলেই বাড়ি ফিরে আসে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে। এখন গ্রামের প্রায় শ’দুই লোক নিয়মিত যান কাশ্মীরে। পাশেই ফুলবাড়ি থেকেও এবারে গিয়েছে জনা ৫০ লোক।”
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “দুই গ্রামের বেশির ভাগ পরিবারের লোকজন কাশ্মীরে আটকে রয়েছেন। কাশ্মীরে শ্রীনগর প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। ফোন ও ইন্টারনেট ঠিক মত কাজ করছে না। তাই যোগাযোগের সমস্যা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে ওই দুই গ্রামের বাসিন্দারা কে কোথায় আটকে রয়েছেন দ্রুত তাঁদের তালিকা তৈরি করে শ্রীনগরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে।”
কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়ে হদিশ নেই কৃষ্ণনগরের বেশ কিছু বাসিন্দারও। ৬ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁদের সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন না পরিবারের লোকজন। ফলে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটছে তাঁদেরও। মঙ্গলবার পরিবারের লোকজন জেলা শাসকের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের দ্রুত উদ্ধারের আবেদন দাবি জানান। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দাদের উদ্ধারেও দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান নদিয়ার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy