Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Onion Market

ক্ষতির পাল্লায় ভারী পেঁয়াজ

রাজ্যের অন্যতম প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদক জেলা হল নদিয়া। হাঁসখালি, তেহট্ট ২, করিমপুর ২ ও নাকাশিপাড়া এলাকায় প্রতি বছরের মতো এ বারও হাজার হাজার চাষি পেঁয়াজ চাষ করেছেন।

আলুর পর এবার পেঁয়াজ নিয়ে সমস্যায় চাষীরা।

আলুর পর এবার পেঁয়াজ নিয়ে সমস্যায় চাষীরা। — ফাইল চিত্র।

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৮:০৯
Share: Save:

পেঁয়াজের দর তলানিতে। ক্রেতা নেই দেখে অনেক চাষি মাঠের পেঁয়াজ মাঠেই ফেলে রেখেছেন। ফলে চরম ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। এই পরিস্থিতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ বা অন্য কোনও বিকল্প রাস্তার কথা তাঁদের জানা নেই। অনেকের আবার পেঁয়াজ রেখে দিয়ে পরে বিক্রির কোনও উপায় নেই। পরে আরও দাম কমে যেতে পারে এই আশঙ্কায় অনেক চাষি সামান্য দামে ‘অভাবি বিক্রি’র পথে হাঁটছেন।

রাজ্যের অন্যতম প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদক জেলা হল নদিয়া। হাঁসখালি, তেহট্ট ২, করিমপুর ২ ও নাকাশিপাড়া এলাকায় প্রতি বছরের মতো এ বারও হাজার হাজার চাষি পেঁয়াজ চাষ করেছেন। গত বছর অপেক্ষাকৃত ভাল দামেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। ২০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম পর্যন্ত দাম পেয়েছেন চাষিরা। সে কারণে উৎসাহিত হয়ে এ বার বেশি পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তবে পরিস্থিতি এ বার পুরো উল্টো।

চাষিদের একাংশ জানান, এখন নতুন পেঁয়াজ ওঠার সময় হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বর্তমানে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় টাকা প্রতি কিলোগ্রাম দরে দাম পাচ্ছেন তাঁরা। পরে দাম আরও কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র চাষি হাঁসখালির ভৈরবচন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা জ্ঞানেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলছেন, “টাকা ঋণ করে চার বিঘা জমি চাষ করেছি। প্রতি বিঘার জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে যা দাম পাচ্ছি তাতে বিঘা প্রতি খুব বেশি হলে ১৫ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হবে।”

তিনি বলেন, “ঋণের টাকা শোধ করব কী করে? কোথা থেকে আসবে মাসে মাসে সুদের টাকা? যে কারণে দাম পাই বা না পাই পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।”

পেঁয়াজ চাষি বিদ্যুৎ গয়ালি একশো বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। যার মধ্যে বেশির ভাগই ভাগে চাষ। তিনি বলছেন, “নিজের জমি হলে প্রতি বিঘায় দশ হাজার টাকা ক্ষতি হত। কিন্তু ভাগে চাষ করায় লাভ হোক বা লোকশান জমির মালিককে তার পাওনা টাকা দিতেই হবে। ফলে বিঘা প্রতি প্রায় ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতি হবেই।” তিনি বলেন, “এই ধাক্কা কী করে সামাল দেব বুঝতে পারছি না। পথে বসতে হবে।’’

কেন এমনটা হল?

জেলার উদ্যান পালন আধিকারিক ঋষিকেশ খাঁড়া জানান, আসলে এ বার প্রায় সর্বত্রই চাহিদার থেকে উৎপাদন বেশি হয়েছে। আমাদের জেলার পেঁয়াজ যেখানে যেখানে যেত সেখানেও উৎপাদন বেশি হওয়ায় সেখানেও চাহিদা কম। যে কারণে চাষিদের দাম পেতে সমস্যা হচ্ছে।”

চাষিরাও বলছেন একই কথা। তাঁদের কথায়, প্রতি বছর বাইরে থেকে ‘আড়তদার’রা এসে পেঁয়াজ কিনে লরি বোঝাই করে নিয়ে যেতেন। এ বার তাঁদেরও দেখা নেই। এই কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কী করছে সরকার? কী করছে প্রশাসন? কেন এই পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না?

কৃষি ও বিপণন দফতরের জেলা আধিকারিক সুদীপ পাল বলছেন,“পেঁয়াজ হিমঘরে সংরক্ষণ করা যায় না। যখন হিমঘরে থাকে, তখন তাজা থাকে। সেখান থেকে বার করলে ঘামতে থাকে। পচন ধরে পেঁয়াজে।”

কর্তারা জানাচ্ছেন, পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস খেলতে পারে এমন ঘরে বাঁশের পরিকাঠামো তৈরি করে জমি থেকে গাছ-সহ তুলে আনা পেঁয়াজ ঝুলিয়ে রাখতে হবে। অর্থ ও প্রয়োজনীয় জায়গার অভাবে সেই পরিকাঠামো তৈরি করে উঠতে পারেন না বেশির ভাগ চাষি। ফলে ‘অভাবি বিক্রি’ই ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Onion Market Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE