Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নেই রাজ্যে কন্যাশ্রী নিয়ে হাবুডুব খাচ্ছে স্কুল

কম্পিউটার আছে তো ইন্টারনেট নেই, ইন্টারনেট আছে তো তার কাজ জানা লোক নেই, বাইরে থেকে কাজ জানা লোক জোগাড় করা হল তো তাঁকে খুশি করার উপায় নেই। তাঁর অর্থের চাহিদা স্কুল কর্তৃপক্ষের সামর্থের থেকে বেশি। ‘কন্যাদের’ নিয়ে এমনই নানা ঝঞ্ঝাটে কার্যত নাজেহাল দশা স্কুল শিক্ষকদের।

বিমান হাজরা ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস
রঘুনাথগঞ্জ ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:১২
Share: Save:

কম্পিউটার আছে তো ইন্টারনেট নেই, ইন্টারনেট আছে তো তার কাজ জানা লোক নেই, বাইরে থেকে কাজ জানা লোক জোগাড় করা হল তো তাঁকে খুশি করার উপায় নেই। তাঁর অর্থের চাহিদা স্কুল কর্তৃপক্ষের সামর্থের থেকে বেশি।

‘কন্যাদের’ নিয়ে এমনই নানা ঝঞ্ঝাটে কার্যত নাজেহাল দশা স্কুল শিক্ষকদের। সে মুর্শিদাবাদ হোক বা নদিয়া জেলা। ছবিটা প্রায় সব স্কুলেই এক। ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে জেলার হাইস্কুলগুলি।

২০১৩ সাল থেকে রাজ্যে এ প্রকল্প শুরু হলেও এত দিন অনলাইনে প্রকল্পের যাবতীয় কাজ সারতো বিডিও অফিসের কর্মীরাই। এ বছর থেকে নতুন কন্যাশ্রীদের নাম অন্তর্ভূক্তি, বদলি, নবীকরণ কিংবা উন্নতীকরণের যাবতীয় কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্কুলগুলিকে। আর তাতেই নাকানিচোবানি খাচ্ছেন স্কুলের কর্তারা। ধাক্কা সামলাতে ক্লাস বন্ধ রেখে একাধিক শিক্ষককে কম্পিউটারের সামনে বসে পড়তে হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করে তার হার্ড কপি জমা দিতে বলা হয়েছে বিডিও অফিসগুলিতে। কিন্তু সার্ভার সমস্যায় কাজ এগোচ্ছেই না।

রঘুনাথগঞ্জের শ্রীকান্তবাটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল মণ্ডল বলেন, “অন্তত ৮০০ কন্যাশ্রী রয়েছে স্কুলে। দু’জনকে বসিয়ে দিয়েছি। কী করব? কিন্তু সার্ভারের যা অবস্থা তাতে দিনে ২০ থেকে ২৫টির বেশি কাজ এক দিনে করা যাচ্ছে না।”

মির্জাপুর বালিকা বিদ্যালয়ের হাল আরও খারাপ। প্রধান শিক্ষিকা করবী নন্দীর কথায়, “স্কুলের অফিসিয়াল কাজ করার জন্য কোনও কম্পিউটার নেই। স্ক্যানার থাকলেও তার ব্যবহার জানি না। বহিরাগত এক জনকে দিয়ে কন্যাশ্রীর অনলাইন কাজ করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি ছাত্রী প্রতি ২০ টাকা করে চেয়েছেন। ৬০০ ছাত্রীর জন্য অত টাকা কে দেবে! তাই এখনও কাজ শুরু করতে পারিনি।”

চাপড়ার বৃত্তিহুদা পুরাতনপাড়া মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের সহ-শিক্ষক অসীমকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘স্কুলে কম্পিউটার নেই। বাইরের ইন্টারনেট ধাবাতেই কাজ সারতে হচ্ছে। যা খরচ পড়ছে, স্কুলকে অত টাকা প্রশাসনের তরফে দেওয়া হয় না।’’ করিমপুরের ফাজিলনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিক রহমান মালিথ্যা জানান, স্কুলে কম্পিউটার থাকলেও ইন্টারনেট নেই। ফলে বাড়ির কম্পিউটারে কন্যাশ্রীর কাজ করতে হচ্ছে। তার উপর সার্ভার ডাউন। সময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে চিন্তিত তাঁরা। মির্জাপুরের আর এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিরাট বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরও উদ্বেগ সময়সীমা নিয়ে। কারণ মৌখিক ভাবে সময় দেওয়া হয়েছে ১৫ জানুয়ারি।

জঙ্গিপুরের জোতকমল হাইস্কুলে ৯০০ জন ছাত্রী এই প্রকল্পভুক্ত। প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্কর সাহা জানান, বাইরের কাউকে দিয়ে কাজ করাতে ছাত্রী প্রতি ১৫ টাকা চাইছে। কোথায় পাব সে টাকা? স্কুলের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ভাল অনলাইনের কাজ জানেন। কিন্তু দিনের বেলায় কাজই করা যাচ্ছে না সার্ভার না থাকায়। তাই ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে বাড়িতে বসেই সে কাজ করছেন তিনি। শিবশঙ্করবাবু বলেন, “সব চেয়ে সমস্যা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে। কোনও ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গ্রামপ্রধান শংসাপত্র দিচ্ছেন ছাত্রী অবিবাহিত বলে, অথচ গ্রামে খবর নিতে গিয়ে শুনছি তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।”

এই নাজেহাল অবস্থার কথা মানছেন এবিটিএ’র জেলা সম্পাদক দুলাল দত্ত। তাঁর কথায়, “এই কাজ করতে গিয়ে স্কুলের পঠনপাঠন মার খাচ্ছে।” তৃণমূলের মাধ্যমিক শিক্ষা সমিতির জেলা সভাপতি শেখ ফুরকান অবশ্য বলছেন, “ব্লকে ব্লকে জেলা জুড়ে এ নিয়ে প্রশিক্ষণ হয়েছে। প্রথম বছর বলে একটু অসুবিধে হচ্ছে।”

মুর্শিদাবাদের কন্যাশ্রী প্রকল্পের নোডাল অফিসার সায়ক দেব স্কুলগুলোকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “প্রকল্পের শুরু থেকে স্কুলগুলোরই এ কাজ করার কথা ছিল। তাদের অসুবিধা হবে ভেবেই এত দিন সে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। স্কুলে কম্পিউটার আছে। অনেকেই সে কাজ জানেন। স্কুলগুলোকে এর জন্য ছাত্রী-প্রতি কিছু অর্থও দেওয়া হবে।” তিনি জানান, এই কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করতে বলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর কোনও সময়সীমা সরকারি ভাবে বেঁধে দেওয়া হয়নি।

নদিয়া জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, সোমবারও সার্ভারের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ এসেছে। আজ মঙ্গলবার প্রতিটি ব্লকে কন্যাশ্রীর ডেটা ম্যানেজারদের নিয়ে বৈঠক হবে। তাতে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanyashree new enrolments
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE