এলোমেলো: ঝড়ের পরে। রবিবার বগুলার শান্তিনগরে।
ঝড়ে ঘর ভাঙার শব্দে কেঁদে উঠেছিল মাস পাঁচেকের শিশু। তাকে কোলে নিয়ে কোনও রকমে খাটের তলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন বাবা-মা।
মাটির ভিত থেকে গোটা ঘরটাই সরে যাওয়ায় বের হতে পারেননি ওই দম্পতি। শিশুটি শান্তিনগর গ্রামের তৃণমূল প্রার্থী অনুপ সরকারের ভাইপো। ওই বাড়িটার মতোই তছনছ হয়ে গিয়েছে হাঁসখালির শান্তিনগর।
শনিবার গভীর রাতের ঝড় কিন্তু জোড়া লাগাতে পারেনি রাজনৈতিক বিভেদকে। অভিযোগ, ঝড়ে বিধ্বস্ত গ্রামে দাঁড়িয়েও পাল্লা দিয়ে চলছে ‘আমরা-ওরা’ আকচাআকচি। রবিবার সকাল থেকে রাজনীতির কারবারিরা খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেছেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখেছেন ক্ষয়ক্ষতি। পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। কিন্তু মুখোমুখি দেখা হওয়ার পরেও নিজেদের মধ্যে কথা বলা তো দূরের কথা, ধেয়ে এসেছে অভিযোগের তির। যার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, “এই বিপদের দিনে রাজনীতি দূরে থাকুক। সব ভুলে আপনারা সকলে মিলে আমাদের পাশে দাঁড়ান।”
কিন্তু তেমনটা কি হচ্ছে?
শান্তিনগর মধ্যপাড়ার বাসিন্দা নির্দল প্রার্থী রত্না বলছেন, “সকাল থেকে আমার স্বামী বাড়ি ঘুরে ঘুরে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব রাখছেন। তা না হলে ওরা তো নিজেদের মতো করে শুধু তাদের ঘনিষ্ঠদের নামের তালিকা করে পাঠিয়ে দেবে।” যা শুনে হঠাৎপাড়ার বাসিন্দা, তৃণমূল প্রার্থী অনুপ সরকার বলছেন, “এটা আমরা নয়, করবে ওরা। গত পাঁচ বছরে সরকারি ঘর থেকে শুরু করে একশো দিনের কাজ, সব কিছুতেই দুর্নীতি করেছে বলেই তো দল এ বার টিকিট দেয়নি।”
গত বারেও এই গ্রামের দখল নিয়েছিল তৃণমূল। দলের পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন রত্না তরফদার। এ বার তিনি টিকিট পাননি। টিকিট পেয়েছেন অনুপ সরকার। রত্না দাঁড়িয়েছেন নির্দল হয়ে। ফলে গ্রাম জু়ড়ে টানটান উত্তেজনা। চলছিল জোর প্রচারও। তার মধ্যে এই ঝড়। বিঘের পর বিঘে জমির ধান, পাট, আনাজ ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে মিশে গিয়েছে মাটিতে। ভেঙে পড়েছে গাছ। উড়ে গিয়েছে টিনের চাল। রাস্তায় ছিঁড়ে পড়েছে বিদ্যুতের তার।
সোমা সরকার বলছেন, “ঘরটা আস্তে আস্তে ভিত থেকে উঠে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। দরজা আটকে যাওয়ায় ঘর থেকে বের হতে পারছি না। বাইরে আছড়ে পড়ল রান্না ঘরের টালির চাল। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে কী ভাবে যে সেই সময়টা কেটেছে, বলে বোঝাতে পারব না।”
ওই এলাকায় জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ ঢালী ব্লক সভাপতিও। তিনি বলেছেন, “এমন দিনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকতে হবে। এমন দিনে কোনও বিভেদ চাই না।”