অপেক্ষা: শুক্রবার ডোমকলে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
সকালে স্নান-খাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়েন ওঁরা। কারও ব্যাগে দলিল-দস্তাবেজ, কারও পকেটে উকিলের চিঠি, খামবন্দি ড্রাফট কিংবা চেক।
‘আরে মশাই, চললেন কোথায়?’
প্রশ্নটা যাঁর উদ্দেশে, তিনি হন্তদন্ত হয়ে হাঁটতে থাকেন। তার পরে উড়ে আসে, ‘‘রেজিস্ট্রি অফিসে যাচ্ছি। বড্ড তাড়া আছে ভায়া। পরে কথা হবে।’’
তার পরে কেউ লোকাল ধরেন, কেউ বাস। কেউ আবার দীর্ঘ চরের পথ উজিয়ে ভরসা রাখেন টোটো কিংবা লছিমনে (যন্ত্রচালিত ভ্যান)।
সকলেই ব্যস্ত। সকলেই মনে করেন, সকাল সকাল না পৌঁছলে কাজ শেষ হতে দেরি হয়ে যাবে। কিন্তু অফিসে পৌঁছেও দেখা যায়, লাইনের দৈর্ঘ্য নেহাত কম নয়। বেজার মুখে সে লাইনে দাঁড়িয়েও স্বস্তি নেই। কারণ, লাইন যে কিছুতেই এগোয় না।
কী ব্যাপার? জবাব মেলে, ‘‘লিঙ্ক নেই। অপেক্ষা করতে হবে।’’
অপেক্ষা চলে দিনভর। এক দিনের কাজ কামাই। সেই সঙ্গে সময় নষ্ট। যার নিট ফল, বেলাশেষে হয়রান হয়ে বাড়ি ফেরা।
নদিয়া-মুর্শিদাবাদে, যে কোনও রেজিস্ট্রি অফিসে মাঝেমধ্যেই এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে বহু লোকের।
জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য শুক্রবার সকাল থেকে এসে ডোমকল রেজিস্ট্রি অফিসে এসেছিলেন জিতপুরের নুরজাহান বিবি। লিঙ্ক না থাকায় দিনভর বসে থেকে বিকেলে বাড়ি ফিরেছেন ৬৫ বছরের ওই বৃদ্ধা। ফেরার পথে ক্ষুব্ধ নুরজাহান বলছেন, ‘‘লিঙ্ক-ফিঙ্ক কী যেন একটা বলল। ঠিক বুঝলাম না। সে নেই, তাই কাজও হল না। তাহলে এতগুলো লোকজন মিলে কী করছে, কে জানে!’’
নুরজাহান লিঙ্ক ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারেননি। কিন্তু যাঁরা পারেন, তাঁরাও বিরক্ত। গত সপ্তাহে শনি, রবি, সোম, মঙ্গল ও বুধবার টানা ছুটি ছিল। রেজিস্ট্রি অফিস খুলেছে বৃহস্পতিবার। ফলে প্রতিটি অফিসে ভিড়ও ছিল চরম। কিন্তু দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে শুনতে হয়ছে, ‘লিঙ্ক নেই।’
চরম হয়রান হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাধারণ মানুষ থেকে আইনজীবী সকলেই। শুক্রবারেও বেশ কিছু জায়গায় লিঙ্ক না থাকায় সমস্যা হয়েছে। ওলিউল ইসলাম মুম্বইয়ে অটো চালান। জমি রেজিস্ট্রির জন্য তিনি মুম্বই থেকে ছুটে এসেছেন ডোমকলে। কাজটা সেরেই তাঁর মুম্বই ফেরার কথা ছিল। কিন্তু লিঙ্ক না থাকার কারণে শুক্রবার জমি রেজিস্ট্রি হয়নি। ওলিউল বলছেন, ‘‘কী বিপদ বলুন তো! ফের সেই সোমবারের আগে কাজ হবে না। শনিবার তৎকালে টিকিট কাটার কথা ছিল। সব মাটি হয়ে গেল।’’
হয়রান হয়েছে কল্যাণীর। নিয়ম অনুযায়ী, দলিল করানোর টাকা অনলাইনে জমা দিতে হয়। কিন্তু লিঙ্ক না থাকায় টাকা জমা দিতে পারেননি অনেকেই। বৃহস্পতিবার সমস্যায় পড়ে কৃষ্ণনগরও। নদিয়ার ডিস্ট্রিক্ট সাব রেজিস্ট্রার প্রবীর গোলদার বলেন, “শুক্রবার ভিড় ছিল। কিন্তু এ দিন কাউকে হয়রান হতে হয়নি। কাজকর্ম ছিল স্বাভাবিই।” মুর্শিদাবাদের ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রার সুশীল রায় বলেন, “লিঙ্কে সমস্যা হলে কিছু করার নেই। সমস্যা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্টারনেট সংস্থাকে জানানো হয়। তারা ব্যাপারটা দেখে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy