শেষ পর্যন্ত আশঙ্কাটাই সত্যি হল!
শান্তিপুর শহরে নির্বিচারে গাছ কাটার প্রতিবাদ করছিলেন স্থানীয় পরিবেশকর্মী গৌতম পাল। আর সেই ‘অপরাধে’ তাঁকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত বাগান-মাফিয়াদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গৌতমবাবুর চেম্বারে ঢুকে তাঁকে ও তাঁর সহকর্মীদের মারধরের পাশাপাশি এক মহিলার শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। ঘটনার পরে গৌতমবাবু ও তাঁর এক সহকর্মীকে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ দিন রাতেই গৌতমবাবু শান্তিপুরের বাগান-মাফিয়া বলে পরিচিত রবি বর্মণ-সহ আরও বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করেনি।
গৌতমবাবু জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি নিজের চেম্বারে রোগী দেখছিলেন। সেই সময় রবি বর্মণের নেতৃত্বে জনা পনেরো যুবক তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। গৌতমবাবুর সহকর্মী সঞ্জিত কাষ্ঠ বলেন, ‘‘ওরা ডাক্তারবাবুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। বাধা দেওয়ায় ওরা আমাদেরকেও মারধর করে। ভাঙচুর করা হয় চেম্বারের জিনিসপত্রও।’’ গৌতমবাবুর সহকর্মী মহিলার শ্লীলতাহানিও করা হয় বলে অভিযোগ।
এমন ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। বেআইনি ভাবে মাটি কাটার প্রতিবাদ করায় গত বছর ৩১ জুলাই গৌতমবাবুর বাড়িতে বোমা মেরেছিল দুষ্কৃতীরা। তার আগেও শহরের পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবাদ করে তিনি একাধিক বার প্রহৃত হয়েছেন। কিন্তু তারপরেও ভয় পেয়ে তিনি থেমে যাননি। বেশ কয়েক মাস ধরে শান্তিপুরে একাধিক বড় বড় বাগানের গাছ নির্বিচারে কাটা হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসন থেকে শুরু করে বন দফতর, এমনকী পুরসভাকেও তিনি গোটা ঘটনা লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ফল মেলেনি। এরপরেই আন্দোলন শুরু করেন গৌতমবাবুরা। ওই ঘটনা জানতে পরে শান্তিপুরে এসে গৌতমবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন পরিবেশকর্মী অনুরাধা তলোয়ার-সহ একাধিক পরিবেশকর্মী। তাঁরাও এলাকার বাগানগুলি সরেজমিনে ঘুরে এসে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তার পরও অবস্থার কোনও পরিবর্তন না হওয়ায় বিভিন্ন সংগঠনের তরফে থানার সামনে বিক্ষোভও জানানো হয়েছিল।
গৌতমবাবু জানান, ১৯৯৪ সালে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল যে, শান্তিপুর ও তার সংলগ্ন এলাকায় কোনও রকম গাছ কাটা ও পুকুর বোজানো যাবে না। কিন্তু সেই নির্দেশ কেউই মানে না। প্রশাসনের চোখের সামনে একের পর এক বাগানের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। যারা এটা করছে, তারা শাসক দলের লোক। আর সেই কারণেই পুলিশ-প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘বেশ কয়েক দিন ধরেই আমাকে নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। আমি ওই রবি বর্মণের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় আজ এ ভাবে আমরা আক্রান্ত হলাম।’’ রাজ্যের সহ-সভাপতি (এপিডিআর) তাপস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। পুলিশ যদি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বাগান-মাফিয়াদের গ্রেফতার না করে তাহলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ে নামব।’’ তবে অভিযুক্তদের সঙ্গে দলের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে এলাকার বিধায়ক তৃণমূলের অজয় দে বলেন, ‘‘এই অভিযোগ ঠিক নয়। আমাদের দলের কেউ এই সব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকে না। যদি কেউ এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাহলে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’
পরিবেশকর্মীদের লাগাতার আন্দোলনের চাপে পড়ে অবশ্য পুলিশ নড়েচড়ে বসেছিল। এই বিষয়ে তদন্তও শুরু করেছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। কিন্তু তারপরেও দুষ্কৃতীরা কী ভাবে এত সাহস পেল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ দিন বার বার ফোন করেও জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মতে, ওই চিকিৎসক যে ভাবে প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন তাতে পুলিশ একপ্রকার বাধ্য হয়েই তদন্তে নেমেছিল। আর সেটাই মেনে নিতে পারছিল না শাসক দলের ঘনিষ্ঠ ওই বাগান-মাফিয়ারা। তারাও তক্কে তক্কে ছিল। কিন্তু পুরভোটের কারণে কিছু করতে পারছিল না। শান্তিপুরে তৃণমূলের মসৃণ জয়ের পরেই ওই মাফিয়ারা এমন ঘটনা ঘটাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy