বাপরে: দেবনাথপুরের কাছে বাম্পার। —নিজস্ব চিত্র।
মাজা ঝনঝন করছে, পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ— কষ্ণনগর থেকে করিমপুর, সড়ক পথে এসে ভদ্রলোক থপ করে বসে পড়ছেন, ‘‘গুনে এলুম ভায়া, ৫৪/৮২!’’
কৃষ্ণনগর থেকে ছিপছিপে পথে করিমপুরের দিকে ভেসে পড়ে পূর্ত-আমলার মনটা বেশ চনমনে ছিল। মনে মনে আওড়েছিলেন, ‘লোকে পাঁচ কথা বলে বটে, তবে আমাদেরই (পূর্ত দফতর) তো তৈরি, কেমন ঝকঝকে রাস্তা দেখেছে!’
শহর ছাড়িয়ে চাকা খানিক গড়াতেই প্রথম হোঁচটেই সামনের সিটের উপরে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন। ক্ষমা-ঘেন্না করে খান পাঁচেক ছাড় দেওয়ার পরে, আর পারেননি, ‘বাপ রে কি বাম্পার!’ করিমপুর পৌঁছে তিনি নম্বর দিচ্ছেন, ৫৪/৮২।
শুনে রে রে করে উঠছেন পূর্ত দফতরের নদিয়ার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার গৌরহরি মালাকার। ‘‘কি বলছেন মশাই, আমাদের তো খান বারোর বেশি দেওয়ার কথা নয়!’’ বাকিগুলো? হ্যাঁ, প্রশ্নটা সেখানেই এবং জেলা সদর থেকে সীমান্তের ওই ছোট্ট শহরের মাঝে ক্রমাগত হুমড়ি খাওয়ার তোড়জোড়টা, সৌজন্য গ্রামীণ বাংলার ‘অতি সতর্ক’ সাধারন মানুষ।
পুলিশ এবং জেলা প্রশানও ঠারেঠোরে মেনে নিচ্ছেন, দুর্ঘটনা হোক চাই না হোক, ওই রাজ্য সড়কে একের পর এক স্পিড ব্রেকার বা চলতি লব্জে ‘বাম্পার’ গড়ে নজির গড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশান তো বটেই, তা নিয়ে রা কাড়তে সাহস করেনি স্থানীয় থানাগুলিও। তাই ও পথে ধুঁকতে ধুঁকতেই যাত্রা করছে বাস-ট্রেকার।
বাস মালিক সমিতির সম্পাদক অশোক ঘোষের গলায় রীতিমতো দলা পাকানো কান্না, “বাম্পারের ধাক্কায় ও রুটে বাস চালানো বন্ধ করে হবে দাদা, রোজ কোনও বাসের অ্যাক্সেল তো কারও টাইরড, কে চালাবে বলুন তো!’’ তা হলে উপায়? জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত আমতা আমতা করছেন, “আসলে কী জানেন, ওই রাস্তায় বাম্পার দাবি যেমন আছে তেমনি, গ্রামবাসীদের অনেকে বলছেন, ‘থাক না!’’ এই মহা-ঠেলার মাঝে পড়েছেন গৌরহরিবাবু, “কী বলব বলুন, বাম্পার তোলা নিয়ে আলোচনা তো কম হয়নি। কিন্তু কোনটা তুলব আর রাখবই বা কোনটা— তা নিয়ে সহমতে আসা গেল কোথায়!’’
করিমপুরের এক পুলিশ কর্তা বলছেন, ‘‘গ্রামবাসীদের তোয়াজ করতে গিয়েই আজ এই হাল।’’ সে কথা শুনছে কে? বেতাইয়ের সুবল বিশ্বাস বলছেন, ‘‘আসলে কী জানেন কত্তা, আমাদের গ্রামের কোনও বাসস্টপ নাই। তা একটা বাম্পার না খাড়া করলে বাস দাঁড়াবে কী করে বলেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy