Advertisement
০৩ মে ২০২৪

আইনজীবীদের কর্মবিরতি, ভোগান্তি চরমে

দৃশ্য-১: গ্রাম পঞ্চায়েতের এক নির্মাণ সহায়কের বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপের মামলা চলছে চতুর্থ দায়রা বিচারকের এজলাসে। ওই মামলার হাজিরা দিতে ছুটি নিয়ে ওই সরকারি কর্মী আদালতে এসেছিলেন। কিন্তু আদালতে কর্মবিরতি চলার জন্য তাঁকে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০১:৪৯
Share: Save:

দৃশ্য-১: গ্রাম পঞ্চায়েতের এক নির্মাণ সহায়কের বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপের মামলা চলছে চতুর্থ দায়রা বিচারকের এজলাসে। ওই মামলার হাজিরা দিতে ছুটি নিয়ে ওই সরকারি কর্মী আদালতে এসেছিলেন। কিন্তু আদালতে কর্মবিরতি চলার জন্য তাঁকে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়।

দৃশ্য-২: মুর্শিদাবাদ সিজেএম আদালতে খোরপোশের মামলা চলছে। ওই মামলার সাক্ষ্য দিতে নদিয়ার করিমপুর থেকে এসেছিলেন রামপদ বিশ্বাস। কিন্তু সকাল থেকে আদালত চত্বরে ঘুরে শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।

শুক্রবার আইনজীবীদের কর্মবিরতির কারণে দূরদুরান্ত থেকে আদালতে এসে হয়রান হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন অনেকেই। বহরমপুরের জেলা জজ, সিজেএম আদালত-সহ জুভেনাইল ও ক্রেতা সুরক্ষা আদালত মিলিয়ে ২২টি বিভিন্ন কোর্ট রয়েছে। ওই সমস্ত আদালতে প্রতি দিন প্রায় হাজার খানেক মামলা হয়ে থাকে। শুধু সিজেএম আদালতে পুলিশ ফাইলে প্রতি দিন মামলা হয় ৪০-৫০টি। কর্মবিরতির ফলে ওই সমস্ত কোর্টে এ দিন অচলাবস্থা তৈরি হয়।

কিন্তু সাধারণ মানুষকে এ ভাবে ভোগান্তিতে ফেলে এমন কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত কেন? বহরমপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শুভাঞ্জন সেনগুপ্তের জানান, শুনানি ছাড়াই গরিব মানুষের মামলা বাতিল করেছেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের জেলা আধিকারিক অরবিন্দ মিনা। তার কারণ জানতে গেলে তিনি আইনজীবীদর সঙ্গে অভব্য আচরণও করেন। সেই ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁর সাফাই, গরিব মানুষের স্বার্থেই আইনজীবীরা লড়ছে।

কিন্তু যেখানে আদালতে প্রতি দিন মামলার পাহাড় জমছে, যেখানে তিন থেকে চার মাস অন্তর মামলার দিন পড়ে সেখানে কর্মবিরতির কারণে মামলার দিন পিছিয়ে যাওয়ায় মামলাকারীদের দুর্ভোগ বাড়ে। বিষয়টি আইনজীবীরা জানেন না তা কিন্তু নয়। কিন্তু নিজেদের স্বার্থে আইনজীবীরা ওই কর্মবিরতি পালন করছেন বলেও বাদি-বিবাদীপক্ষের অভিযোগ।

জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদ জেলা ও জেলা ভূমি সংস্কার আধিকারিকের কাছে ২০টি আপিল মোকদ্দামায় তামাদি আইনের শুনানি ছিল। শুনানির কথা জানিয়ে ওই দফতর থেকে সমনও জারি হয়। সেই মতো মক্কেলরা তাঁদের আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে জেলা ভূমি সংস্কার দফতরে যান। অভিযোগ, কোনও রকম শুনানি ছাড়াই তামাদি আইনের সবগুলি মোকদ্দমা বাতিল করে দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা দেখা করতে গেলে ভূমি সংস্কার দফতরের জেলা আধিকারিক অরবিন্দ মিনা তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। তার জেরে আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের গেটের সামনে তাঁরা অবস্থান বিক্ষোভও করেন। বহরমপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে পীযুষ ঘোষ বলেন, ‘‘কর্মবিরতির কারণে আদালতের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে ঠিকই। সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ গরিব মানুষ যাতে বিচার পায়, সেই কারণেই প্রতিবাদ হিসেবে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি।

ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের জেলা আধিকারিক অরবিন্দ মিনা বলেন, ‘‘আইনের মধ্যে থেকে আমি আমার করণীয় কাজ করেছি। কিন্তু নিজেদের স্বার্থে ওই আইনজীবীরা আমার উপরে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Baharampur Strike court lawyer CJM Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE