Advertisement
০২ মে ২০২৪
Mahmudpur Junior High School

শিক্ষকের অভাব, কিছু জুনিয়র হাই স্কুলে কেউ ভর্তি হয়নি

হরিহরপাড়ার মামুদপুর জুনিয়র হাই স্কুলে রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষক। রয়েছেন একজন শিক্ষাকর্মী। ওই বিদ্যালয়ে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা মাত্র ১৫ জন।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

মফিদুল ইসলাম
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৩
Share: Save:

শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে জেলার অধিকাংশ জুনিয়র হাই স্কুল। নতুন শিক্ষাবর্ষে কোনও বিদ্যালয়ে পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়নি এক জনও পড়ুয়া। কোথাও আবার শিক্ষক না থাকার কারণে ছাত্রছাত্রীদের পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ে ভর্তি করছেন অভিভাবকেরা।

গত শিক্ষাবর্ষে শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হয়েছে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া চক্রের লোচনমাটি জুনিয়র হাই স্কুল। তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে শিক্ষক, পড়ুয়া শূন্য দ্বিতল ভবন। অনেক জুনিয়র হাইস্কুল শিক্ষকের অভাবে কার্যত বন্ধের মুখে।

হরিহরপাড়ার মামুদপুর জুনিয়র হাই স্কুলে রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষক। রয়েছেন একজন শিক্ষাকর্মী। ওই বিদ্যালয়ে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা মাত্র ১৫ জন। বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক লেভিন পালকে একাই নিতে হয় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস। সমস্ত বিষয়ও তাঁকেই পড়াতে হয়। ওই বিদ্যালয়ে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ার যথাক্রমে ন'জন ও ছ'জন। ওই বিদ্যালয়ের একই চত্বরে রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর দশ জন ছাত্রছাত্রী পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে ওই জুনিয়র বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি তাদের কেউই। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে চোঁয়া বিবি পাল বিদ্যানিকেতন, দুর্লভপুর হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছে ওই সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা। তাদের কেউ কেউ আবার ভর্তি হয়েছে নওদার আমতলা হাইস্কুলে।

ওই উচ্চপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক লেভিন পাল বলেন, ‘‘তিন জন শিক্ষক উৎসশ্রী প্রকল্পে বদলি হয়ে অন্য বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। একাই সমস্ত ক্লাস সামলাতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই বলে এ বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে একজন ছাত্রছাত্রীও ভর্তি হয়নি।” এলাকার এক অভিভাবক ফয়সাল বেগ বলেন, “শুধু শিক্ষক নেই বলে ছেলেমেয়েদের দূরবর্তী বিদ্যালয়ে পাঠাতে হচ্ছে। সরকারের উচিত দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ করে বিদ্যালয়গুলিকে বাঁচানো।”

আরও করুণ অবস্থা হরিহরপাড়ার তরতিপুর জুনিয়র হাই স্কুলের। ওই বিদ্যালয়ের একমাত্র অতিথি শিক্ষকের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর ৩১ অগস্ট। তবুও ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসছেন তিনি। ওই বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষাকর্মী আর্থিক তছরুপের অভিযোগের ফেরার রয়েছেন। ফলে চারটি ক্লাস একাই সামলাতে হয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে। নতুন শিক্ষাবর্ষে ওই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ১৩ জন ও অষ্টম শ্রেণির ১২ জনকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট ধরানো হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির বর্তমান ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১২ জন। এ বছর ওই বিদ্যালয়ে এখনও পর্যন্ত পঞ্চম শ্রেণিতে এক জন ছাত্রছাত্রীও নতুন ভাবে ভর্তি হয়নি।

অন্য দিকে, হরিহরপাড়ার চোঁয়া পাঠানপাড়া জুনিয়র হাই স্কুলে রয়েছেন মাত্র এক জন স্থায়ী শিক্ষক ও এক জন শিক্ষাকর্মী। গত বছর ওই বিদ্যালয়ে এক জন অতিথি শিক্ষক কাজে যোগ দিয়েছেন। তবুও শিক্ষকের ঘাটতির কারণে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঁচ জন পড়ুয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে মাত্র ন'জন ছাত্রছাত্রী।

একই অবস্থা শ্রীপুর জুনিয়র হাই স্কুলের। ওই বিদ্যালয়ে রয়েছেন মোটে দু'জন অতিথি শিক্ষক ও এক জন শিক্ষাকর্মী। এক জন অতিথি শিক্ষকের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে আগামী মার্চ মাসে। ফলে অনেক অভিভাবক ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করছেন পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ে। নতুন শিক্ষাবর্ষে ওই বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে মাত্র দশজন ছাত্রছাত্রী।

অভিজ্ঞ মহলের মতে, প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। আইনি জটিলতায় আটকে রয়েছে শিক্ষক নিয়োগ। ফলে শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে অধিকাংশ উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়। গোলাম মোস্তফা নামে এক উচ্চ প্রাথমিকে চাকরি প্রার্থী বলেন, ‘‘বিদ্যালয়গুলি শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। অথচ আমরা টেট উত্তীর্ণ হয়ে বসে রয়েছি।” জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমর কুমার শীল বলেন, “শিক্ষক না থাকার কারণে হয়তো অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করছেন। উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ হলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hariharpara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE