Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কীর্তনে পড়া নষ্ট, বলছে পড়ুয়ারাই

পরীক্ষার আগে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে কীর্তনের আসর নিয়ে যে গণ্ডগোলের সূচনা, রাত পোহাতে তাই বদলে গেল রাজনৈতিক দড়ি টানাটানিতে।বক্সের আওয়াজ কমাতে বলায় পেটে লাথি খেয়ে যে তরুণীর গর্ভস্থ ভ্রূণের মৃত্যু হল, তাঁর শ্বশুরকেই দেখা গেল অভিযুক্ত বিজেপি নেতার মুক্তির দাবিতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধে সামিল হতে।

আদালতের পথে পলাশ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

আদালতের পথে পলাশ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
ধুবুলিয়া শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৭
Share: Save:

পরীক্ষার আগে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে কীর্তনের আসর নিয়ে যে গণ্ডগোলের সূচনা, রাত পোহাতে তাই বদলে গেল রাজনৈতিক দড়ি টানাটানিতে।

বক্সের আওয়াজ কমাতে বলায় পেটে লাথি খেয়ে যে তরুণীর গর্ভস্থ ভ্রূণের মৃত্যু হল, তাঁর শ্বশুরকেই দেখা গেল অভিযুক্ত বিজেপি নেতার মুক্তির দাবিতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধে সামিল হতে। আর দিনভর হাসপাতালে স্ত্রীর পাশে বসে রইলেন তৃণমূল কর্মী স্বামী।

বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মহাদেব সরকার দাবি করছেন, “এই প্রধানকে টোপ দিয়েও দলে টানতে পারেনি তৃণমূল। তাই মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।” কৃষ্ণনগর দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাস পাল্টা বলছেন, “এক মহিলার গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট করে জঘন্যতম অপরাধ করেছেন বিজেপির পঞ্চায়েত প্রধান ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গেরা। শাস্তি চাই।”

ধুবুলিয়ায় ওই মারধরের ঘটনায় ধৃত সাধনপাড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান পলাশ বিশ্বাস এবং তাঁর দলেরই কর্মী প্রহ্লাদ সাঁতরাকে বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে এসিজেএমের এজলাসে তোলা হয়। বিচারক তাঁদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিনা অনুমতিতে গর্ভপাত করানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ৩১৩ ধারা এই মামলায় যুক্ত করার আবেদন জানিয়েছিল পুলিশ। এসিজেএম তা মঞ্জুর করেছেন।

কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “মহিলার পেট থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়া ভ্রূণ বের করার চেষ্টা চলছে। তবে উনি আপাতত স্থিতিশীল।” নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “পেটে লাথি মেরে বাচ্চা নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগেই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টানা পাঁচ দিন ধরে কীর্তন ইত্যাদি চলছিল তাতলা গ্রামে প্রধানের বাড়ি লাগোয়া মন্দিরে। মূল উদ্যোক্তা প্রধান নিজেই। তার আওয়াজে অতিষ্ঠ হয়ে মঙ্গলবার, মাধ্যমিক শুরুর আগের রাতে নাড়ুগোপাল সাঁতরা নামে এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এবং আরও কিছু গ্রামবাসী গিয়ে মাইক-সাউন্ডবক্স বাজানো বন্ধ করতে বলেন। তা তো হয়ইনি, উল্টে মারধর করা শুরু হয়। নাড়ুগোপালের কাকিমা, তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা মায়ারানি সাঁতরা বাঁচাতে গেলে তাঁকে চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে পেটে লাথি মারা হয় বলে অভিযোগ। আলট্রাসোনোগ্রাফি করে বুধবার দেখা যায়, গর্ভস্থ ভ্রূণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর পরেই তাঁর স্বামী সঞ্জয় সাঁতরা পুলিশে অভিযোগ জানান।

এ দিন তাতলায় গিয়ে দেখা যায়, আসরের মণ্ডপ খোলার কাজ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ প্রত্যাশিত ভাবে প্রধানের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এঁদেরই এক জন রথীকান্ত বিশ্বাসের দাবি, মাইক নয়, ছোট বক্স বাজছিল। তাতে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হয়নি। আসলে জুয়া বন্ধ করাতেই কেউ-কেউ গণ্ডগোল পাকাতে এসেছিল বলে দাবি করেন রুনুবালা বিশ্বাস, রীতা বিশ্বাসেরা। ভুক্তভোগী ছাত্রছাত্রীরা কিন্তু অন্য কথা বলছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নাড়ুগোপাল এ দিনও বলে, “পাঁচ দিন ধরে মাইকের আওয়াজ কমাতে বলেও কোনও লাভ হয়নি।” দশম শ্রেণির ছাত্র নীল বালা বা শুভজিৎ বিশ্বাসেরাও বলছে, মাইকের তাণ্ডবে এই ক’দিন তারা পড়াশোনা করতে পারেনি। একই কথা বলেছেন রুপো সাঁতরা এবং তাঁর স্ত্রী অঞ্জলিও।

তা হলে কেন জাতীয় সড়ককে যানজটে অবরুদ্ধ করতে বিজেপির সঙ্গে গেলেন মায়ারানির শ্বশুর বিজয় সাঁতরা? এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তাঁর ছেলে সঞ্জয় বলেন, ‘‘বাবা কোন দল করেন, কেন তিনি অবরোধে গেলেন, জানি না। আমার স্ত্রী হাসপাতালে, সন্তান নষ্ট হয়েছে। অভিযুক্তদের শাস্তি চাই।’’

কৃষ্ণনগর মহকুমাশাসক মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায় জানান, মাধ্যমিক চলায় ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত মাইক বা সাউন্ডবক্স বাজানোর অনুমতি দেওয়া বন্ধ আছে। তা হলে, তাতলায় তা বাজল কী করে? পুলিশ কী করছিল? ধুবুলিয়া থানার তরফে এর সদুত্তর মেলেনি। পুলিশ সুপারও কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sound Box Kirtan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE