নতুন পদ চেখে দেখল পড়ুয়ারা। মহাকালী পাঠশালায়। —নিজস্ব চিত্র।
পাতের এক কোণে, কম নুনের হলদেটে তরকারিটার পাশে সপ্তাহে একটা বেলা ভোরের আলো হয়ে ফুটে থাকত যে ডিম, হারিয়ে গিয়েছে সে।
চার থেকে সাড়ে চার, পঞ্চাশ পয়সার বাড় বৃদ্ধিতেই মিডডে মিলের পাতে আঁধার ঘনিয়েছিল। এখন তা, ৭ কোথাও ৮ টাকা উল্লম্ফনে স্কুলের পাত থেকে ৮ উধাও হয়ে গিয়েছে সে।
বহরমপুরের এক স্কুল শিক্ষিকা বলছেন, ‘‘অন্য খাত থেকে কিছু টাকা সরিয়ে হপ্তা দুয়েক ধরে ছেলে-মেয়েগুলোকে ডিম খাইয়েছি, আর পারছি না।’’ তবু শুকনো মুখের পড়ুয়াদের দেখে হালে একটা উপায় ঠাওরেছেন দিদিমনিরা। আস্ত ডিম পাতে না ফেলে ডিম-ভুজিয়ার রাস্তায় হেঁটেছেন। খান পাঁচেক ডিমে খান দশেক ছেলেপুলের একই সঙ্গে ডিম ভক্ষণ ও বাজেটের সাশ্রয়, দুই হচ্ছে।
নদিয়ার একটি স্কুল ডিমের হাহাকার সামাল দিতে সেদ্ধ ডিম খুন্তি দিয়ে আড়াআড়ি কেটে ভাগ বাঁটোয়ারার পথও বেছে নিয়েছে স্কুলগুলি। মূল্য বৃদ্ধির আঁচে হাত বাঁচিয়ে পাতে ডিম ছড়িয়ে দিতে এমনই ভিন্ন পথে হাঁটছে এখন স্কুলগুলি।
বহরমপুর গার্লস মহাকালী পাঠশালার ধান শিক্ষিকা নন্দিনী দাশগুপ্ত যেমন বলছেন, ‘‘এক লাফে ডিমের দাম যে এতটা বেড়ে যাবে কী করে বুঝব বলুন তো। আবার ভাবছি, হপ্তায় এক টুকরো ডিম, তা-ও দিতে পারব না! তাই বাধ্য হয়ে এই সব নানান পথ খুঁজে বের করতে হচ্ছে।’’
ডিমের বদলে মহাকালী পাঠশালা তাই ডিমের ভুজিয়াই রেঁধে বেড়ে খাওয়াচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। নদিয়ার কালীগঞ্জের বড়নলদা প্রাথমিক স্কুল আবার ডিমের বদলে ডিম ভুজিয়া কিংবা এক টুকরো মাংসের ঘুগনি পাতে দিয়ে ভালই হাততালি কুড়োচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন মণ্ডল বলেন, “একেবারেই প্রত্যন্ত এলাকায় আমাদের স্কুল। খাতা কলমে ২১১ জন ছাত্রছাত্রী হলেও ১১৫ জনের বেশি আসে না। কিন্তু ডিমের যা দাম তাতেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। তাই বিকল্প হিসাবে মাংসের ঘুগনি বা ডিম ভুজিয়া বেছে নিয়েছি।”
সর্বশিক্ষা মিশনে স্কুলগুলির চাল পাঠয়ে দেওয়া হয় মিশন থেকে। বাকি ডাল, জ্বালানি, আনাজ, মশলা, নুন তেল-সহ যাবতীয় খরচ ৪ টাকা ১৩ পয়সায় সারতে হয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের বরাদ্দ ৬ টাকা ১৮ পয়সা। কিন্তু সাত টাকার ডিম কিনে তা সামাল দেওয়া যাবে কী করে?
অগত্যা ডিম ভুজিয়াই ভরসা!
সহ প্রতিবেদন: সুস্মিত হালদার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy