Advertisement
০৪ জুন ২০২৪

বকেয়া ডিএ-টা কি চায়ে ডুবিয়ে খাব

বেলা দশটা। ঘামে লেপ্টে আছে পাঞ্জাবি। কল্যাণী সেন্ট্রাল পার্কের চায়ের দোকানের এক ফালি ছায়াটা ছেড়ে বেরোতে চাইছেন না কেউ— ‘‘রোদ একেবারে চড়াম চড়াম করে পিঠে পড়ছে’’, মস্করাটা করে এক বার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলেন বীমা এজেন্ট ছেলেটি। তার পর ফ্যাল ফ্যাল করে হেসে, আস্ত ব্যাপারটা ব্যালান্স করার জন্যই বোধহয় বলে বসলেন ‘‘ওঃ আর পারা যাচ্ছে না!’’

চা হাতে চলছে বৈকালিক-আড্ডা। — নিজস্ব চিত্র

চা হাতে চলছে বৈকালিক-আড্ডা। — নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০১:৫৯
Share: Save:

বেলা দশটা। ঘামে লেপ্টে আছে পাঞ্জাবি। কল্যাণী সেন্ট্রাল পার্কের চায়ের দোকানের এক ফালি ছায়াটা ছেড়ে বেরোতে চাইছেন না কেউ— ‘‘রোদ একেবারে চড়াম চড়াম করে পিঠে পড়ছে’’, মস্করাটা করে এক বার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলেন বীমা এজেন্ট ছেলেটি। তার পর ফ্যাল ফ্যাল করে হেসে, আস্ত ব্যাপারটা ব্যালান্স করার জন্যই বোধহয় বলে বসলেন ‘‘ওঃ আর পারা যাচ্ছে না!’’

‘‘কোনটা দাদা, ভোটের চড়াম না রোদ্দুরের?’’ চোখে পুরু চশমা পাজামা আর বুশ শার্ট এক রোখা চোখে তাকিয়ে রয়েছে বীমা এজেন্টের দিকে।

গলার টাই ঢিলে করার ফাঁকে মেডিক্যাল রিপ্রেসেনটেটিভ ছেলেটি এ বার তুলে নিচ্ছেন ব্যাটনটা— ‘‘তা যা বলেছেন দাদা, রোদ পিঠে পড়লে না হয় বিশুদার চায়ের দোকানে সেঁদিয়ে যাওয়া যাবে, কিন্তু উনিশ তারিখে ওরা জিতে গেলে তো রেয়াত করবে না, ছায়া থেকে টেন বের করে পিঠে দেবে!’’

কে-কার পিঠে কেনই বা অহেতুক ‘চড়াম’ করে দেবে, তা নিয়ে বিশুদ্ধ তক্কটা চা-পানের দোকান, রক, মাচা—চুঁইয়ে একেবারে গলগল করে ছড়ডিয়ে পরেছে বটে! বিশুর দোকানে নিতান্তই তার একটা স্লাইড শো চলছিল সে দিন সকালে। যেখানে, কাহাইয়া থেকে শাহরুখের ফ্যান সবই পাতলা লিকার চা হয়ে জায়গা ছেড়ে দিয়েছে উনিশি-আড্ডাকে।

যেখানে বীমা এজেন্টের মতো কুণ্ঠিত বিশ্বাস-হারা জোট সমর্থকের পাশাপাশিই রয়েছেন বহুজাতিক সংস্থার ‘কনফিডেন্ট’ অনিমেষবাবু। মোটা মাইনের সুবাদে যিনি ভাস্কো দা গামা থেকে ভ্লাদিমির লেনিন— সব বিষয়েই অনায়াসে মন্তব্য করার প্রত্যয় অর্জন করেছেন। ভোট তো কোন ছাড়, তাই অনায়াসে হাঁক পাড়ছেন, ‘‘কী গো বিশুদা, এখন কোন চা বেশি বিক্রি হচ্ছে? ১৯ তারিখের পর কিন্তু বেশি লাল চা কোর না। ফের...।’’ কথাটা শেষ হয় না, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাঁচা পাকা গোঁফের কোণে শ্লেষটা ভাসিয়ে দিলেন, ‘‘তখন কী বকেয়া ডিএ’টা চায়ে ডুবিয়ে খাব!’’ নবান্নে কর্মরত আধা-আমলা সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন, ‘‘নারদ তো টাকা দিল ভাই, এ বার অন্তত কিছু দিক!’’

গলায় এ বার জোর পেয়েছন নিরীহ বীমা এজেন্ট, ‘‘চরাম চরাম, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে, এ বার কিন্তু পাল্টা হবে!’’ কিঞ্চিৎ ভড়কে গিয়েছেন এ বার সবজান্ত বহুজাতিক। মিনমিন করে বলছেন, ‘‘মনে তো হচ্ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীতই বাজবে!’’

বিশুদার চায়ের দোকান থেকে যে ঢালু রাস্তাটা ঘোষপাড়া স্টেশনের দিকে নেমে গিয়েছে ব্লু-মুন সেলুনটা ঠিক তার গায়েই। স্বল্পকেশ স্কুল শিক্ষক তাঁর পাতলা চুলে হাল্কা কাঁচি চালাতে সেই নীল-চাঁদে পা দিয়েই সে দিন শুনেছিলেন, ‘‘স্যার, আমরা কী অসংগঠিত শ্রমিক?’’ হকচকিয়েই গিয়েছিলেন মাস্টার মশাই। কেন রে? সেলুনের ছোকড়া আমতা আমতা করে জানিয়েছিল, ‘‘না, দিদি তো তেমনই বলেছিল তাই...’’ পাতলা চুলে হাত বুলিয়ে মাস্টার মশাই হাসছেন, ‘‘কেউ কথা রাখে না বাবা, কেউ না।’’

‘‘কে বলল দিদি কথা রাখেনি’’, তেরিয়া হয়ে উঠছেন কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায়। স্থানীয় প্রার্থী রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ভোট সেনাপতি ছিলেন তিনিই। বলছেন, ‘‘১৯ তারিখ দেখবেন তার ফল!’’ যা শুনে জোট প্রার্থী অলকেশ দাসের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট পার্থ চ্যাটার্জী হাসছেন, ‘‘ঠিক আছে দেখুন না কী হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tea time chat DA politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE