Advertisement
E-Paper

খেজুর-হাড়ি টানে না নয়া প্রজন্মকে

তাঁর পরের প্রজন্ম খেজুরবাগানের ছায়াও মাড়ায়নি কোনওদিন। বাবলু বলছেন, ‘‘ছেলেরা এখন ভিন রাজ্যে কাজ করে। এ রসে তাদের মন ভেজে না।”

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৩

শীর্ণ, কাঁটাওয়ালা গাছকে তৈরি করো রে। কাকভোরে সেখান থেকে রসের হাঁড়ি নামাও রে। সেই রস বিরাট পাত্রে ঢালো রে। তার পরে নানা কায়দা-কেরামতির পরে তৈরি হয় গুড়। নলেনের জন্য বিশেষ পাক। জিরেন-এর জন্য অন্য কায়দা। শিউলিরা খেজুর গুড় তৈরিটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের সৌজন্যে গুড়ের গন্ধে আহ্লাদে আটখানা হয় বাংলার গাঁ-গঞ্জ। কিন্তু এই আহ্লাদ আর কত দিন বজায় থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিউলিরাই। তাঁদের আক্ষেপ, খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধারই যে মন নেই এই প্রজন্মের।

বাবলারির বাবলু রুদ্র তিন পুরুষের গাছি। তাঁর তৈরি গুড় উড়োজাহাজে চড়ে পাড়ি দেয় বিদেশে। বাবলু জানাচ্ছেন, তাঁর অবর্তমানে এই গুড়ের কারবার বন্ধ হয়ে যাবে। তাঁর বাবা কালীপদ রুদ্র হাতে ধরে ছেলেকে চিনিয়েছিলেন গাছ। শিখিয়েছিলেন গাছ বাওয়া থেকে রস জ্বাল দেওয়ার খুঁটিনাটি। সেই থেকে প্রায় চার দশক ধরে রসের সঙ্গে তাঁর কারবার। অথচ তাঁর পরের প্রজন্ম খেজুরবাগানের ছায়াও মাড়ায়নি কোনওদিন। বাবলু বলছেন, ‘‘ছেলেরা এখন ভিন রাজ্যে কাজ করে। এ রসে তাদের মন ভেজে না।” ছবিটা একই রকম নদিয়ার বাবলারি থেকে বার্নপুর, মাজদিয়া থেকে মাটিয়ারি, লালবাগ থেকে লালগোলাতেও। দেশের অন্যতম প্রধান খেজুরগুড়ের হাট নদিয়ার মাজদিয়া সংলগ্ন আদিত্যপুরে। সেখানকার অনুপম বিশ্বাসের বয়স চল্লিশের আশপাশে। তিনি বলছেন, ‘‘এলাকায় আমার পরে নতুন করে কেউ খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধতে ওঠেনি। উঠবেও মনে হয় না। ”

নলেন গুড়ের জনপ্রিয়তা যে হারে বাড়ছে, তাতে শীত মরসুমে উপার্জনও নেহাত মন্দ হয় না। তবু কেন কমছে রসিকের সংখ্যা? অনুপম বিশ্বাস, শ্যামল বিশ্বাসেরা বলছেন, “সকলেই এখন পলকে পেতে চায় সবকিছু। রুখু গাছটা থেকে রস বের করা ও তার পরের ধাপে যে পরিশ্রম দরকার তা করতে এখনকার ছেলেরা রাজি নয়।’’ লালবাগের ডাহাপাড়ার বৃদ্ধ ভূপেন সরকার স্মৃতি হাতড়ান, ‘‘কনকনে শীতে ভোর তিনটেয় ঘুম থেকে উঠে মাঠে বসে থাকতাম। যাতে কেউ রস চুরি করতে না পারে। সে এক সময় ছিল!’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এই প্রজন্মের ছেলেরা তো খেজুর গাছটাকেই ভালবাসতে পারল না! ৩০-৪০টি গাছ আছে। আয়ু বড়জোর আর বছর পাঁচেক। নতুন করে গাছ লাগানোর আগ্রহ নেই কারও। তারা ভিনদেশে গিয়ে প্যাকেটবন্দি খেজুর কিনে বাড়ি ফেরে। আর যত্নের অভাবে এলাকার খেজুরগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে।”

ডাহাপাড়ার নিতাই দাস এক বার ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলেন খেজুরতলায়। নিতাই বলছেন, ‘‘আমি গাছে ওঠা থেকে কী ভাবে কী করতে হয় তা উপর থেকে দেখাচ্ছি। ছেলেও হুঁ-হ্যাঁ করে যাচ্ছে। সন্দেহ হওয়ায় নীচে তাকিয়ে দেখি, বাবু ডুবে আছে মোবাইল-রসে। এ ভাবে হয় নাকি!’’

Molasses Date Palm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy