Advertisement
১১ মে ২০২৪

ছাত্রদের সামনে বড়ঞায় প্রহৃত প্রধান শিক্ষক

ফের স্কুলের শিক্ষকের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এবং, এখানেও হামলার মূলে সেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের উপস্থিতিতেই স্কুলের মধ্যে প্রধানশিক্ষককে বেধড় মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের স্থানীয় এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ভাঙচুর করা হয়েছে স্কুলের আসবাবপত্র ও ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি। মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার কুলি কোলেশ ঘোষ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ওই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

কৌশিক সাহা
বড়ঞা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৫ ০১:২৫
Share: Save:

ফের স্কুলের শিক্ষকের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এবং, এখানেও হামলার মূলে সেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের উপস্থিতিতেই স্কুলের মধ্যে প্রধানশিক্ষককে বেধড় মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের স্থানীয় এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ভাঙচুর করা হয়েছে স্কুলের আসবাবপত্র ও ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি। মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার কুলি কোলেশ ঘোষ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ওই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

নিজেকে তৃণমূলের লোক বলে দাবি করে প্রধান শিক্ষক নিয়ত হোসেন বলেন, “বড়ঞা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জালালউদ্দিনের নেতৃত্বে আমিও দলটা করি। এটা সহ্য করতে না পেরে বড়ঞা উত্তর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি গোলাম মুর্শিদ ও তাঁর অনুগামীরা আমাকে পরিকল্পিত ভাবে মারধর এবং স্কুলে ভাঙচুর করে। পুলিশকে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছি।’’ এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্তদের কাউকেই গ্রেফতার করেনি। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘ওই ঘটনার সাথে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।” পুলিশ সুপারের দাবি, ঘটনার সময় পুলিশ সেখানে ছিল না।

কী ঘটেছিল এ দিন?

পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকালে স্কুল খোলার আগে স্কুলের কিছু ছাত্রের সঙ্গে বাইরের ছেলেদের মারপিট হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পথে নামে স্কুলের ছাত্ররা। অভিযোগ, ওই ছাত্রদের মদত দেন বড়ঞা উত্তর ব্লকের সভাপতি গোলাম মুর্শিদ ওরফে জর্জ এবং তাঁর অনুগামীরা। ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে তাঁরা হলদিয়া-ফরাক্কা বাদশাহি সড়ক অবরোধ করেন। অভিযোগ, প্রধানশিক্ষক-সহ অন্যান্য শিক্ষকদের তালা বন্ধ করে রাখা হয়।

শিক্ষকদের দাবি, পুলিশকে খবর দেওয়া হলেও পুলিশ আসেনি। তার বদলে স্কুলে হাজির হয় গোলাম মুর্শিদেরই লোকজন। অভিযোগ, তারা স্কুলে ঢুকে প্রধানশিক্ষককে কিল, চড়, লাথি মারতে শুরু করে। মারের চোটে প্রধান শিক্ষক মাটিতে পড়ে গেলে লাঠি দিয়ে তাঁকে পেটানো হয়। শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশের এ দিনের ভূমিকায় তাঁরা চমকে গিয়েছেন। শিক্ষকদের নিরাপত্তা দেওয়া তো দূরের কথা, গোটা ঘটনাটা চোখের সামনে ঘটতে দেখেও তারা চুপ করে দাঁড়িয়েছিল।

অভিযুক্ত গোলাম মুর্শিদ বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি ঘটনাস্থলেই ছিলাম না।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘যাঁদের আমার লোকজন বলে দাবি করছেন প্রধানশিক্ষক, তাঁরা আসলে স্থানীয় অভিভাবক। প্রধানশিক্ষক অধিকাংশ দিনই ঠিক সময়ে স্কুল আসেন না। ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বার বার বলেও এ সবের প্রতিকার না হওয়ায় এ দিন স্কুলে চড়াও হয়েছিলেন অভিভাবকরা!’’

যদিও স্থানীয় অভিভাবকদের দাবি, স্কুলের বেশ কিছু অনিয়ম নিয়ে প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে তাঁদেরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এ দিন যা হয়েছে তা তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীরই বিবাদ। অভিভাবকেরা এর সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁদের ক্ষোভ, স্কুলটা ক্রমশ রাজনীতির আখড়া হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ দিনের ঘটনার পরে স্কুলে কোনও ক্লাস হয়নি। পড়ুয়ারা দূরদুরান্ত থেকে এসে ফিরে গিয়েছে।

বড়ঞা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জালালউদ্দিন বলেন, “ওই প্রধানশিক্ষক আমাদেরই দলের লোক। তাঁকে মারধর ও স্কুলে ভাঙচুর করা হয়েছে। যা ঘটেছে তা বড়ঞা উত্তর ব্লকের সভাপতির নেতৃত্বে হয়েছে বলেই জানতে পেরেছি।” তবে এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন দাবি করেন, ‘‘জেলায় তৃণমূলের কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। স্কুলের এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE