Advertisement
১৭ মে ২০২৪

কান-ঘেঁষা দৌড়ে পাশে নেই সেনা, তিনি প্রাক্তন

লোক নেই, লোক নেই।মস্ত মাঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় লোক নেই।লোক নেই, লোক নেই।পোড় খাওয়া নেতার আশপাশে লোক নেই।

বিমান হাজরা
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০২
Share: Save:

লোক নেই, লোক নেই।

মস্ত মাঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় লোক নেই।

লোক নেই, লোক নেই।

পোড় খাওয়া নেতার আশপাশে লোক নেই।

লোক নেই, লোক নেই।

প্রাক্তন মন্ত্রীর পাশে লোক নেই, প্রাক্তন বিধায়কের পাশে লোক নেই, তৃণমূল প্রার্থীর পাশে লোক নেই।

তবে কি তিনি হেরেই যাবেন? প্রাক্তন মন্ত্রী, প্রাক্তন বিধায়ক, বর্তমান প্রার্থী সুব্রত সাহা।

অথচ তিনি তো ধরেই নিয়েছিলেন যে জিতবেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনেই মালুম হয়েছিল, সাগরদিঘিতে শক্তি বাড়িয়েছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটে সামান্য হলেও তারাই এগিয়ে ছিল। এই অবস্থায় সুব্রতকে আটকানোর মন্ত্র ছিল জোট। তা-ও কেঁচে গিয়েছে।

নিজেদের ঘুঁটি কেঁচিয়ে কংগ্রেস আর সিপিএম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়েছে।

সুব্রত তাই বড় নিশ্চিন্ত ছিলেন। কিন্তু সেই নিশ্চিন্তি আর থাকল কই? গত বার তৃণমূলের সঙ্গে জোট সত্ত্বেও তাঁর বাড়া ভাতে ছাই দিতে ‘গোঁজ’ দাঁড় করিয়েছিলেন অধীর চৌধুরী। এ বার বামেদের সঙ্গে জোট অগ্রাহ্য করে কংগ্রেসের প্রার্থী দিয়েছেন অধীর। কিন্তু ‘গোঁজ’ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন তৃণমূলের ভূমিপুত্র সামসুল হোদা।

কাঁপন ধরে গিয়েছে ঘাসবনে।

যে কারণে সাগরদিঘিতে প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে মমতাকে বলতে হচ্ছে, “এত কাজ করার পরেও সুব্রত সাহা যদি সাগরদিঘিতে জিততে না পারে, তা হলে এর থেকে লজ্জা আমার কাছে আর কিছু হবে না।”

সুব্রতর এই দশা হল কেন?

ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসে চার দশকেরও বেশি ধরে রাজনীতি করছেন সুব্রত সাহা। এক সময়ে গনিখান চৌধুরীর স্নেহধন্য ছিলেন। ১৯৭৭ সালে প্রথম বার বিধানসভা ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে যান। ২০০১ এবং ২০০৬ সালেও কংগ্রেসের হয়ে জলঙ্গিতে দাঁড়িয়ে হারেন। অতীশ সিংহের পরে তাঁকেই দলের জেলা সভাপতি করে তৃণমূল। ২০১১ সালে ফের প্রার্থী হয়ে তাঁর কপাল খোলে। প্রতিমন্ত্রীও হন। কিন্তু তার পরেই খারাপ সময়ের শুরু। দলে কোন্দল থেকে মন্ত্রিত্ব হারানো— একের পর এক ধাক্কা খান সুব্রত। এ বারেরটা ছিল তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।

বিধায়ক সুব্রতর বিরুদ্ধে আর যাই হোক, জনসংযোগে ঘাটতির কথা তুলতে পারবেন না কেউ। নিয়মিত তিনি বহরমপুর থেকে সাগরদিঘিতে এসেছেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন। যে কোনও অনুষ্ঠানে হাজির থেকেছেন। কিছু রাস্তাঘাট হয়েছে। তারই ফল ফলেছিল ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের তিনি সে ভাবে কখনও বিশ্বাস করতে পারেননি। প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজের ভার দিয়েছেন অনুগত বহিরাগতদের। সাগরদিঘিতে দলের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ বেড়েছে, কিন্তু সুব্রত পাত্তা দেননি।

তৃণমূলের এক জেলাস্তরের নেতার আক্ষেপ, “সুব্রতদাকে ঘিরে থাকা কিছু মানুষের ভাবমুর্তি নিয়ে হাজারো প্রশ্ন রয়েছে। তোলাবাজি, দাদাগিরি বেড়েছে সাগরদিঘিতে। পলিটেকনিক কলেজ ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বারবার হামলা হয়েছে, কাজ বন্ধ হয়েছে। এর বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছেন স্থানীয় নেতারা। সুব্রতদা গুরুত্ব দেননি।”

আর তারই জেরে নির্দল প্রার্থী অর্থাৎ ‘গোঁজ’ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন সামসুল হোদা। তৃণণূল সূত্রের খবর, সাগরদিঘিতে দলের কর্মীদের বড় অংশ এখন তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন। ৮২ জন পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে ৬০ জন প্রকাশ্যেই তাঁর প্রতি আনুগত্যের কথা জানিয়েছেন। সামসুল হোদা বুক ঠুকে বলছেন, “আমার লক্ষ্য একটাই, সুব্রত সাহাকে হারানো।”

সুব্রত অবশ্য এখনও গলা ঝেড়ে বলে চলেছেন, “জয়ের ব্যাপারে ষোল আনা আত্মবিশ্বাস আছে আমার।”

গত বার যিনি অধীরের ‘গোঁজ’ ছিলেন, সেই আমিনুল ইসলামই এ বার হাত চিহ্নে প্রার্থী। সিপিএম দাঁড় করিয়েছে রজব আলি মল্লিককে। সুব্রতর যদি কপাল পোড়ে, তাঁদের খুলবে কি? লোকসভা ভোটে একে অন্যের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছিল তিন দলই।

এ বার?

ভোটের আগে কে না বলে, ‘‘আমিই জিতব!’’ কিন্তু গোটা জেলায় এ-ই একটা কেন্দ্র, যেখানে একেবারে ‘ফোটোফিনিশ’-এ ম্যারাথন দৌড়টা শেষ হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE