ভক্তিভূষণ রায়।
নাম, ধাম এমনকী মায়ের নাম— রয়ে গিয়েছে অবিকল এক। বদলে গিয়েছে শুধু তার পিতৃপরিচয়।
আর, সেই রদবদল করা হয়েছে ইচ্ছাকৃত ভাবেই, অভিযোগ এমনই।
বিপত্তিটা যাকে নিয়ে, সেই সদ্য কিশোরী, কল্যাণী পুরসভার এক তৃণমূল কাউন্সিলরের ‘কন্যা’।
ব্যাপারটা যে নিছক ভুল করে, বিরোধীরা তা মানতে নারাজ। শুধু তাই নয়, শাসক দলের অনেকেই মনে করছেন, পিতৃপরিচয় বদলের নেপথ্যে রয়েছেন দলের কাউন্সিলর ভক্তিভূষণ রায়।
চাপে পড়ে পুর কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা নিয়ে তদন্ত শুরু করলেও মচকাচ্ছেন না ভক্তিভূষণ। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের সব দায়িত্ব যখন আমার, তখন বাবা হিসেবে সার্টিফিকেটে ওর নাম দিতে আপত্তি কোথায়!’’ তবে ব্যাপারটা যে আইনসিদ্ধ নয়, তা আঁচ করে জানিয়ে রাখছেন, আইনের ব্যাপারে তিনি একেবারেই অজ্ঞ। না জেনেই কাজটা করে ফেলেছেন।
ভক্তিভূষণের স্ত্রী কাজরী ভাদর রায় পেশায় আইনজীবী। তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলরও তিনি। ঘটনা হল, বিবাহ বিচ্ছেদের পরে কিছু দিন আগে তিনি ভক্তিভূষণকে বিয়ে করেছেন। তবে, তাঁদের সঙ্গে, এখন একই ঠিকানায় বসত করে কাজরীর প্রথম পক্ষের কিশোরী কন্যাও।
কাজরীর প্রথম পক্ষের স্বামী রাজীব চক্রবর্তীও তৃণমূলের আইনজীবী সেলের নেতা। পনেরো বছর আগে, তাঁদের কন্যা সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়েই যত বিপত্তি।
সম্প্রতি রাজীব জানতে পারেন, স্কুলে তাঁর মেয়ের পদবী পরিবর্তন করে ‘রায়’ লেখা হয়েছে। খোঁজ নিতে গিয়েই চমকে ওঠেন রাজীব— মেয়ের পিতৃপরিচয় হিসেবে লেখা রয়েছে ভক্তিভূষণের নাম। এর পরেই তথ্যের অধিকার আইনে কল্যাণী পুরসভার কাছে তিনি মেয়ের জন্মের শংসাপত্রের কপি চান। নির্দিষ্ট সময়ে সে কপিও হাতে আসে তাঁর।
রাজীব জানান, মেয়ের নাম, মায়ের নাম, এমনকী দু’টি শংসাপত্রের রেজিস্ট্রেশন নম্বর এক হলেও বদলে গিয়েছে শুধু মেয়ের বাবার নাম। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কী করে হল?’’
২০১২ সালে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আর পুরসভা ভক্তিভূষণকে তাঁর মেয়ের বাবা হিসেবে ওই সার্টিফিকেট দিয়েছে ২০১১ সালের মার্চ মাসে। এর পরেই, শংসাপত্রটি জাল বলে অভিযোগ করেছেন রাজীব।
পুরপ্রধান সুশীল তালুকদার বলেন, ‘‘রাজীববাবুর অভিযোগ পেয়েছি। এক্সিকিউটিভ অফিসারকে ঘটনার তদন্ত করতে বলেছি।’’
ব্যাপারটা যে দলের মুখ পুড়িয়েছে তা বুঝতে পেরেই দলও ভক্তিবাবুর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। কল্যাণী শহর তৃণমূল সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, পুর আইনে যা হওয়ার হোক। দলের কাছে অভিযোগ করলে নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
ভক্তিভূষণকে নিয়ে বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়।
সরকারি জমি বিক্রি করা কিংবা টাকা নিয়ে সরকারি জমিতে লোক বসানোর অভিয়োগ আগেই ছিল। মাঝের চর এলাকায় সরকারি জমি থেকে মাটি বিক্রির সুতোতেও জড়িয়ে রয়েছে ভক্তি-নাম। সেই তালিকায় এ বার উঠে এল জাল শংসাপত্র তৈরির অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy