মাসের পর মাস যানজটের দুর্ভোগ পোহাচ্ছি ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। বল্লালপুর এসে ভাবতাম কখন ছাড়া পাব। জানতাম রাস্তায় সমস্যা আছে। কিন্তু ফরাক্কার কাছে এসে এ ভাবে যে মাঠের মধ্যে আটকে পড়তে হবে কোনও দিন ভাবতে পারিনি। কলকাতা থেকে জেরক্স পেপার নিয়ে আসছি। যাব অসমে। বুধবার দুপুর তিনটে নাগাদ গাড়ি ছেড়েছি। রাত ১২টা নাগাদ এসে খাওয়া দাওয়া সেরেছি মোরগ্রামে। রাত তিনটেয় ফের রওনা দিই যাতে ভোরের আগেই ফরাক্কা সেতু পেরিয়ে যেতে পারি। কিন্তু তার আগেই জিগরি ও ধুলিয়ানের মধ্যে রাস্তার উপর ভোরেই লরি আটকে দিল পুলিশ। রাস্তার উপর ব্যারিকেড। যদিও রাস্তার উপরে ফেস্টুন দিয়ে লেখা রয়েছে—সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত পণ্যবাহী লরি চলাচল করবে না। এখন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। এ ভাবে লরি আটকে দিলে লরি মালিকরা আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তো বটেই, হয়রান হতে হচ্ছে আমাদেরকেও। লরি এমন জায়গায় আটকেছে যে একটা হোটেল পর্যন্ত নেই। সারা দিনে আমাদের খোরাকি ৪০০ টাকা। কিন্তু টাকা থাকলেও খাবার কোথায় পাব মাঠের মধ্যে। রাস্তায় লরি রেখে ধুলিয়ানে খেতেও যেতে পারছি না নিরাপত্তার কারমে। লরি রেখে খেতে গিয়ে যদি এসে দেখি লরি উধাও, তখন কী হবে! বরাবরই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক নিয়ে ভুগতে হয় আমাদের। কিন্তু উপা তো নেই। অসম যাওয়ার রাস্তাও তো নেই। ভাগলপুর দিয়ে রাস্তা থাকলেও তাতে বাড়তি তেল যা লাগবে তাতে ভাড়ায় পোষাবে না। প্রায় আট বছর লরি চালাচ্ছি। বহু রাস্তায় যাতায়াত আছে। কিন্তু ফরাক্কার মত এত দুর্ভোগ কোথাও পোহাতে হয় না। সব থেকে আরামে গাড়ি চালানো যায় অসমে। সেখানে যানজট নেই, পুলিশের জুলুম নেই। এই রাজ্যে। যানজটে জেরবার হতে হয় চালকদের, বিশেষ করে লরি চালকদের। ফরাক্কা সেতুর উপর এত বেশি খানাখন্দ যে ১০ মাইল বেগেও সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি চালানো যায় না। নিয়মিত সারানো হলে তো এত খারাপ হত না রাস্তাটা। মাল ভর্তি লরি চললে সেতু যেন দোলে। ভয়ে ভয়ে পার হতে পারলি বাঁচি। শুনেছিলাম ফরাক্কায় নাকি নতুন সেতু হবে। সেটাও কবে হবে কে জানে? যতদিন না হচ্ছে নিত্যদিনের ভোগান্তি থেকে বোধহয় নিস্তার নেই ।