Advertisement
E-Paper

কোড ভাঙলেই কেল্লা ফতে

নোট বাতিলের পা পড়েছিল সীমান্তেও, কুয়াশার আড়ালে চুপি চুপি এসে সে বুঝি নিঃসারে নিয়ে গিয়েছিল পাচারের বোলবোলাও। পুরনো নোটে তাই কখনও গরু, কখনও বা সোনা কিনে গোলা ভরেছে সীমান্তের গ্রাম। আর, শীত পড়তেই পদ্মার জলে ফের বিলি কাটছে গরু-কুল। উঁকি মারল আনন্দবাজার।কাঁচা হাতে আঁকা একটি জবা ফুল। পাশে লেখা ২০টি বোল্ডার। কোকিলের ছবির পাশে ১০টি পেপসি। কিছু বোঝা গেল না তো? অথচ চটি নোটবুকের পাতায় পাতায় এমন সব অজস্র হিসেব। রানিনগরের এক যুবক ফোনে বলে দিলেন, ‘‘ডিল আছে আরডিতে। সুযোগ বুঝে তুলে নেবেন ভাই।’’

সুজাউদ্দিন ও সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৩

কাঁচা হাতে আঁকা একটি জবা ফুল। পাশে লেখা ২০টি বোল্ডার। কোকিলের ছবির পাশে ১০টি পেপসি।

কিছু বোঝা গেল না তো? অথচ চটি নোটবুকের পাতায় পাতায় এমন সব অজস্র হিসেব। রানিনগরের এক যুবক ফোনে বলে দিলেন, ‘‘ডিল আছে আরডিতে। সুযোগ বুঝে তুলে নেবেন ভাই।’’

নির্বিঘ্নে ‘ব্যবসা’ চালাতে কখনও সঙ্কেত, কখনও ‘কোড’-এর আশ্রয় নেয় পাচারকারীরা। সবসময় শেষরক্ষাও হয় না। কিন্তু সাবধানের মার নেই! গত কয়েক বছরে বিএসএফ ও পুলিশ ধৃত পাচারকারীদের মোবাইল ও নোটবুক ঘেঁটে বেশ কিছু ‘কোড’ ভেঙেছে। কিন্তু ফের তৈরি হচ্ছে নতুন সঙ্কেত।

জলঙ্গি সীমান্তের এক পাচারকারী যেমন নোটবুকেই এঁকে রেখেছে জবা, কোকিল কিংবা ফড়িঙের ছবি। সেগুলো আসলে বাংলাদেশের পাচারকারীদের নাম। যেমন জাব্বার শেখ সংক্ষেপে জবা। কোকিল আসলে আসগর শেখ যে কি না গানও গাইতে পারে। আর রোগাপাতলা বিশু হল ফড়িং। কিন্তু বোল্ডার, পেপসি, ডিল, আরডি?

করিমপুর সীমান্তের এক পাচারকারী হাসছেন, ‘‘ফেনসিডিলকে (কাশির সিরাপ) ডিল বলে। বাকিগুলোও ওই রকম। সব ভেঙে দিলে তো বেকায়দায় পড়ব দাদা!’’ তবে জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, গরুকে ওরা বলে পেপসি ও মোষকে বোল্ডার কিংবা হাতি। আর ‘আরডি’ বর্মন নয়, গর্ত। কিন্তু গর্তকে কেন ‘আরডি’ বলা হয় তার অবশ্য সদুত্তর মেলে না।

কোডের সঙ্গে পাল্লা দেয় পাচারকারীদের মনে রাখার ক্ষমতাও। মোবাইলে কয়েকশো নম্বর রয়েছে। অথচ কোনও নাম নেই। স্রেফ সেই নম্বর দেখেই তারা বুঝে যায় কোনটা কোকিলের ফোন আর কোনটা ফড়িঙের। বিএসএফের এক কর্তা বলছেন, ‘‘ওরা এই কেরামতিটা যদি লেখাপড়া কিংবা সৎ পথের কোনও ব্যবসায় কাজে লাগাত, তা হলে সীমান্তের চেহারাটাই বদলে যেত!’’

বছর খানেক আগে মুদির দোকান থেকে একটি তালিকা এসেছিল জলঙ্গি থানার পুলিশের হাতে। সেখানে লেখা ছিল ‘ছোলার ডাল- দশ কেজি, মুসুর ডাল- দশ কেজি, মশলা- পাঁচ কেজি, বাঁচার লাঠি- বারোটি, দু’শো ব্যাটারি।’ মুদির দোকানে ডাল-মশলা না হয় পাওয়া যায়। কিন্তু ‘বাঁচার লাঠি’ মানে কী? রানিনগরের সেই মুদির দোকানের মালিককে ধরে এনে কিঞ্চিৎ কড়কে দিতেই খুলে যায় কোডের জট।

ডাল হোক বা ডিল, আসলে তা ফেনসিডিল। ছোলা মানে বড় শিশি। আর মুসুর ছোটটা। বাঁচার লাঠি আসলে ওয়ান শটার। ছোট টর্চের মানে পিস্তল। বড় টর্চ পাইপগান। মশলা হচ্ছে বোমার মশলা। আর ব্যটারি? মুদির উত্তর, “আজ্ঞে গুলি স্যার। ওতেই তো টর্চ জ্বলে।”

কিন্তু গভীর রাতে গাছগাছালির উপর দিয়ে সত্যিকারের টর্চের আলোটা ও ভাবে পাক খাচ্ছে কেন?

(চলবে)

Trafficking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy