সাজাব যতনে। নিজস্ব চিত্র
রাতভর আল্পনায় সেজেছে গোটা গ্রাম। সকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল আত্মীয়-কুটুম্বদের আনাগোনা। গ্রামজুড়ে যেন পুজোর ধুম। করোনা আবহেও নবান্ন উৎসবে মেতে উঠল জামুয়ারের দুই গ্রাম মণ্ডলপুর ও কুলোরি। পার্বণে মিলেমিশে একাকার দুই গ্রাম।
অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষ জুড়ে বাংলার ঘরে ঘরে নব্য-ধান্যের আবাহন করতে নবান্ন পালিত হয়। হেমন্তে বাংলার অন্যতম বড় পার্বণী হিসেবে একদা পরিচিত ছিল এই নবান্ন। তবে নিউক্লিয়ার পরিবারের সংখ্যা যত বেড়েছে, কমেছে নবান্ন পালনের জৌলুসও। গৃহস্থের বাড়িতে এখন গরু আর দেখা যায় না। গোয়ালও উধাও। তবে জীবন যান্ত্রিক হয়ে উঠলেও এখনও গ্রামবাংলায় আমন ধানে ঘরে তোলার সময় ঘটা করে নবান্ন পালিত হয়। মণ্ডলপুর ও কুলোরি গ্রামে নবান্ন যেন দুর্গোৎসব। দুই গ্রামেরই ৯০ শতাংশ বাড়ি মাটির। কারও ১০ কাঠা , কারও বা দু’তিন বিঘে কৃষিজমি রয়েছে। প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ হওয়ায় গ্রামবাসীদের কাছে নবান্নের গুরুত্বও অন্যরকম।
বছর ৬৩ বয়সের কিরণ মাঝি দিনমজুরি করেন। তিনি বললেন, “ছোটবেলায় যে ভাবে নবান্ন পালন করতে দেখেছি এখনও তেমনই ধুমধাম করে হয়।’’ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক স্বপন মাঝি বলেন, ‘‘সময়ের সঙ্গে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই, কিন্তু একই রয়ে গিয়েছে নবান্ন পালন। আগের রাতে জেগে প্রতিটি বাড়ির মেয়েরা আল্পনা দিয়ে সাজায় তাদের মাটির বাড়ি। সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় রান্নাবান্না। রীতিমতো পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে অতিথিকে আপ্যায়ন করা হয়। দুপুরে নতুন চালগুঁড়োর সঙ্গে দুধ, ফলমূল, মিষ্টি দিয়ে বানানো হয় মলিদা। সেই মলিদার সঙ্গে নতুন চালের চিঁড়ে, দই, জিলিপি, বোঁদে দিয়ে বাড়ির উঠোনে কলাপাতা সাজিয়ে জলযোগ চলে।’’ কুলোরি বাসিন্দা সৌভাগ্য সরকার জানান, তাঁদের গ্রামে ধান কাটার কাজ প্রায় শেষ। ধান কাটা শুরু হয় যখন তখন থেকেই নবান্নের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায়। তারপর নির্দিষ্ট দিনে আত্মীয়-পরিজনদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে ডেকে আনা হয়।
মণ্ডলপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধ নিখিল মাঝির বিঘা পাঁচেক ধানজমি রয়েছে। এদিন তাঁর বাড়িতেও আত্মীয়দের ভিড় লেগে ছিল। তিনি বলেন, ‘‘সুতি থেকে মেয়ে, জামাই নাতি-নাতনিরা এসেছে। অন্য কুটুম্বরাও আছেন। সকলের জন্যই সারা দিন ধরে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ কুলোরি গ্রামেও বিভিন্ন বাড়িঘর এদিন আল্পনায় সেজে ওঠে সকাল থেকে। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পিঙ্কি মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতিটি বাড়িই মহিলা সদস্যরা সাজিয়ে তোলেন এই পার্বণে। গ্রামের বহু মানুষ বাইরে কাজে যান। আজ সবাই ফিরে এসেছেন গ্রামে। পরদিন বাসি নবান্ন। সব বাড়িতেই অরন্ধন। এদিনের রান্না খাবারই তুলে রাখা হয় পরদিনের জন্য।” নবান্ন উপলক্ষে পাড়ায় পাড়ায় কার্তিক পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। গ্রামবাসীরাই পুজোর চাঁদা দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy