Advertisement
১১ মে ২০২৪

ওঁদের লড়াই নিকা-হালালার বিরুদ্ধে

তিন তালাকের পক্ষে গাঁয়ের মাতব্বরদের নিকা-হালালা (অন্য পুরুষের সঙ্গে বিয়ে করে তিন মাস দাম্পত্য জীবন কাটানোর পরে তালাক নিয়ে প্রথম স্বামীর সঙ্গে ফের বিয়ে করা) ফতোয়ার বিরুদ্ধে রেহেনা তিরিশ বছর ধরে ও নাসিমা গত ছ’মাস ধরে লড়াই জারি রেখেছেন।

মঞ্চে নাসিমা খাতুন। বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে। নিজস্ব চিত্র

মঞ্চে নাসিমা খাতুন। বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে। নিজস্ব চিত্র

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩০
Share: Save:

মাতব্বরদের ফতোয়া আছে। ঘরে-বাইরে টিপ্পনি আছে। বাধা আছে পদে পদে।

তবুও ওঁরা হার মানেননি। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন সেই কবে থেকে।

এক জন মধ্য তিরিশের নাসিমা খাতুন। বাড়ি জঙ্গিপুরের সাইদাপুরে। অন্য জন, বছর চৌষট্টির রেহেনা খাতুন। তিনি উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের বাসিন্দা।

দু’জনের কেউ কাউকে চিনতেন না। কিন্তু দু’জনকেই এক সুতোয় বেঁধে দিয়েছে তাঁদের লড়াই। তাঁদের জেদ। তিন তালাকের পক্ষে গাঁয়ের মাতব্বরদের নিকা-হালালা (অন্য পুরুষের সঙ্গে বিয়ে করে তিন মাস দাম্পত্য জীবন কাটানোর পরে তালাক নিয়ে প্রথম স্বামীর সঙ্গে ফের বিয়ে করা) ফতোয়ার বিরুদ্ধে রেহেনা তিরিশ বছর ধরে ও নাসিমা গত ছ’মাস ধরে লড়াই জারি রেখেছেন। সম্প্রতি বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে ‘রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতির অনুষ্ঠানে ওই দুই লড়াকুকে সংবর্ধনা দিয়ে তাঁদের কুর্নিশ জানান সিকিম হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মলয় সেনগুপ্ত।

২০১৭ সালের ২২ অগস্ট তাৎক্ষণিক তিন তালাককে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। তা সত্ত্বেও মাস ছয়েক আগে নাসিমাকে তিন তালাক দেন তাঁর স্বামী। নিকা হালালার নিদান দেন গ্রামের মোড়ল-মাতব্বরেরা। নাসিমা সেই ফতোয়ারা বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। নবম ও অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া দুই সন্তানকে নিয়ে ঘর ভাড়া করে অতি কষ্টে দিনযাপন করছেন তিনি।

রবীন্দ্রসদনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তালাকপ্রাপ্ত বহু মহিলা। নাসিমা বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে তালাক নিষিদ্ধ। তবু মোড়লরা ওই অবৈধ তালাকের পক্ষ নিয়ে আমাকে নিকা হালালার ফতোয়া দেন। স্বামী মেনে নিলেও আমি ফতোয়ার বিরোধিতা করে দুই সন্তানকে নিয়ে থাকি। যত কষ্টই হোক না কেন সকলেরই এই অবৈধ ফতোয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত।’’’

কয়েক দশক আগে ডোমকালের ফতেপুরের রেহেনা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগর পুরসভার এক কর্মীর সঙ্গে। এক ছেলে ও দুই মেয়ের মা রেহেনাকে তাঁর স্বামী তিন তালাক দেন বছর তিরিশেক আগে। তিনিও সেই ফতোয়া অগ্রাহ্য করে সন্তানদের নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই জোর করে থেকে যান। রেহেনা বলেন, ‘‘কত কষ্ট, যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু হার মানিনি।’’ পরে তাঁর স্বামী অন্যত্র এক মহিলাকে বিয়ে করে প়ৃথক সংসার পাতেন।

রেহেনা বলেন, ‘‘নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শিক্ষা গ্রহণ করুক মেয়েরা।’’ আয়োজক সংস্থার সম্পাদক খাদিজা বানু বলেন, ‘‘শ্যামনগরে রোকেয়া উন্নয়ন সমিতির শাখা গড়ে নারীর সমানাধিকারের দাবি আদায়ের জন্য কয়েক বছর ধরে লড়াই জারি রেখেছেন রেহেনা খাতুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Berhampur Talaq Fight Nikah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE