Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Shantipur

Shantipur: স্মৃতির ভার বয়েই ভবা পাগলার মেলা

২০১৬ সালের ১৪ মে রাতে ঘটে গিয়েছিল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। কালনা থেকে শান্তিপুরের নৌকা ছাড়ার সময়ে কালনা ঘাটের কাছেই সেটি উল্টে যায়। মৃত্যু হয় ১৯ জনের।

 কালনায় ভবা পাগলার মেলার পথে ভাগীরথীতে। শনিবার, শান্তিপুরের নৃসিংহপুর ঘাটে।

কালনায় ভবা পাগলার মেলার পথে ভাগীরথীতে। শনিবার, শান্তিপুরের নৃসিংহপুর ঘাটে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিপুর ও কালনা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২২ ০৬:১৩
Share: Save:

ছয় বছর আগের এক অভিশপ্ত রাতের স্মৃতি এখনও অনেকের কাছে টাটকা। নৌকাডুবির স্মৃতি।
করোনার কারণে দু’বছর বন্ধ থাকার পরে কড়া নিরাপত্তায় কালনার জাপট এলাকায় সাধক-কবি ভবা পাগলার প্রতিষ্ঠিত ভবানী মন্দিরে শনিবার শুরু হল দু’দিনের বিশেষ উৎসব। পূর্ব বর্ধমানে যে উৎসব এবং মেলা ঘিরে বহু মানুষের সমাগম হয়। বৈশাখের শেষ শনিবার মন্দিরে বিশেষ উৎসব হয়। ভাগীরথী পেরিয়ে নদিয়ার শান্তিপুর ও তার আশপাশের নানা এলাকার মানুষ এসে জড়ো হন।
২০১৬ সালের ১৪ মে রাতে ঘটে গিয়েছিল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। কালনা থেকে শান্তিপুরের নৌকা ছাড়ার সময়ে কালনা ঘাটের কাছেই সেটি উল্টে যায়। মৃত্যু হয় ১৯ জনের। দুর্ঘটনার অভিঘাত আছড়ে পড়ে শান্তিপুরেও। এর পর থেকে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বার উৎসবের আগে নদিয়া এবং পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে দু’টি বৈঠকও হয়।
শনিবার লঞ্চে নদীপথ পরিদর্শন করেন পূর্ব বর্ধমানের পুলিশকর্তারা। জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘উৎসবের জন্য বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৪০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নদীপথে ঘুরে দেখলাম, শান্তিপুরের দিকেও ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য লঞ্চে যাত্রী বেশি তোলা হচ্ছে না। আশা করছি, শান্তিপূর্ণ ভাবেই উৎসব মিটবে।’’
শনিবার দুপুরে কালনা খেয়াঘাটে দেখা যায়, নদিয়ার নৃসিংহপুর ঘাট থেকে লঞ্চে দলে দলে লোক আসছেন। পুলিশের উপস্থিতিতে লঞ্চে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রীদের তোলা হচ্ছে। লঞ্চে রাখা হয়েছে লাইফ জ্যাকেট ও ভাসমান টিউব। পাশাপাশি এক সঙ্গে যাত্রীরা যাতে ভিড় করতে না পারেন, সে জন্য খেয়াঘাটের আশপাশ তৈরি হয়েছে ব্যারিকেড। যাত্রীরা বিপদে পড়লে যাতে দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করা যায়, সে জন্য নদীতে দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী এবং পুলিশের তিনটি বোট নামানো হয়েছে। বোটে রয়েছে ডুবুরি এবং উদ্ধারের সরঞ্জাম। নজরদারির জন্য রাখা হয়েছে পুলিশের একটি লঞ্চ।
উল্টো দিকে, শান্তিপুরে নৃসিংহপুর ঘাটেও তখন মোতায়েন বিপুল পুলিশ বাহিনী। লাইফ বোট ঘুরছে নদীতে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও হাজির। ছ’বছর আগে পাকা জেটি ছিল না, এখন তা হয়েছে। ঘাট চত্বরে আলোর ব্যবস্থাও হয়েছে।
আগের নৌকার বদলে এখন চলছে শক্তপোক্ত লঞ্চ। তবে লাইফ জ্যাকেট পরার ব্যাপারে যাত্রীদের অনীহা রয়েই গিয়েছে।
দুপুর ২টো নাগাদ পুলিশের লঞ্চে করে ভাগীরথীর দুই পারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন পূর্ব বর্ধমানের জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস, এসডিপিও (কালনা) সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য এবং কালনা থানার ওসি মিঠুন ঘোষ। খেয়াঘাট লাগোয়া বিভিন্ন রাস্তাতেও খোলা হয়েছে পুলিশের শিবির। শান্তিপুরের বিডিও প্রণয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “নিরাপত্তার যাবতীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নজরদারিও চলছে।”
মন্দির চত্বরে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষের ভিড়। গরমে ভক্তদের বসার জন্য একটি বড় মাঠে ছাউনি দেওয়া রয়েছে। প্রচুর পাখা ঘুরছে। বিভিন্ন সংস্থার তরফে খোলা হয়েছে জলসত্র। ভবানী মন্দির চত্বরে অনুষ্ঠান মঞ্চে শিল্পীরা ভবা পাগলার লেখা গান গেয়ে যাচ্ছেন।
দীর্ঘ সময় ভবা পাগলার সান্নিধ্যে কাটানো কালনার কবি মনোরঞ্জন সাহা বলেন, ‘‘প্রচুর সৃষ্টি আছে ওঁর। মানুষ ও পশুপাখিকে অকাতরে প্রেম দেওয়া সাধক কবি কর্মকেই ধর্ম মনে করতেন।’’
কবির নাতি শ্রীমন্ত চৌধুরীর কথায়, ‘‘দাদু যতক্ষণ জেগে থাকতেন, নানা সৃষ্টিতে মেতে থাকতেন। কেউ চিঠি দিলে পিওনকে বসিয়ে তিনি তার উত্তর লিখে দিতেন।’’
করোনাকাল পেরিয়ে ফিরে আসা এই উৎসবের আবহেও যেন কোথাও ঝুলে রয়েছে বিষাদের স্মৃতি। ছ’বছর আগে এই মেলা থেকে ফেরার পথে নৌকাডুবিতে ভেসে যান শান্তিপুরের রামাপ্রসাদ বিশ্বাস, তাঁর সাত বছরের মেয়ে বৃষ্টি আর পাঁচ বছরের ছেলে অভীক। উদ্ধার হন রামাপ্রসাদের স্ত্রী অনিতা। তিনি তখন অন্তঃসত্ত্বা। মাস কয়েক পরে তাঁর যমজ সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। বছর ছয়ের রক্তিমপ্রসাদ আর রাইকে আঁকড়ে এখন বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন অনিতা আর তাঁদের পরিবারের অন্যেরা।
ষড়ভুজ বাজারের কাছে নিজেদের দোকানে দাঁড়িয়ে রামাপ্রসাদের বোন মল্লিকা বিশ্বাস বলেন, “সেই ক্ষতের কি আর নিরাময় হয়? প্রতি বছর এই দিনটা মনখারাপ বয়ে আনে। বৌদিকে কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু ছেলেমেয়ে দুটো যে বাবাকে খোঁজে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shantipur Bhagirathi River Kalna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE