অনুষ্ঠানের পোস্টার। ডান দিকে, গান গাইছেন শিল্পী। —নিজস্ব চিত্র।
চটুল গান, দেওয়াল কাঁপানো সুতীব্র অ্যাম্পিফ্লায়ার, মঞ্চ দাপানো ততোধিক চটুল নাচ— কলেজ অনুষ্ঠানে খামতি ছিল না কিছুই। অনুষ্ঠানের আগাম ‘চরিত্র’ জাহির করতে দিন কয়েক আগে থেকে গ্রাম-শহরের বাঁকে ফ্লেক্স-ফেস্টুনেও ছিল নাচ-গানের এমনই সব চটুল ছবি।
তবে বিপত্তিটা বেধেছিল অনুষ্ঠান শেষে। দুপুরভর নাচ-গান করে যাঁরা মঞ্চ মাতালেন, তাঁদের চুক্তিমতো টাকা না দেওয়ায় উদ্যোক্তাদের থানায় টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার ওই শিল্পীরা। শেষতক পুলিশের হস্তক্ষেপে পাওয়া-গণ্ডার নিষ্পত্তি হওয়ায় বিবাদ মেটে ঠিকই তবে, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষের ‘রুচি বোধ’ নিয়েই।
প্রায় আট বছর আগে, ২০০৮ সালে সাগরদিঘির কামদাকিঙ্কর মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হলেও সে কলেজে ছাত্র সংসদের কোনও নির্বাচন হয়নি। তবে, তা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই কলেজ কর্তৃপক্ষের। কলেজ সূত্রেই জানা গিয়েছে, স্বল্পবয়সী ওই কলেজে অনুষ্ঠানের বিরামও নেই। অভিযোগ, ছাত্রদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা তুলে কলেজ-ক্রীড়া থেকে নবীনবরণ—লেগেই রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দীর্ঘ সূচি। বৃহস্পতিবার ছিল কলেজের নবীণবরণ অনুষ্ঠান। তবে ছাত্রদের একাংশের দাবি, নামেই নবীনবরণ, আদপে বেলা বারোটা নাগাদ ‘নবীণদের’ ফুল আর ফাইল ধরিয়ে গয়ংগচ্ছ অনুষ্ঠান সেরে ফেলার পরেই কেঁপে উঠেছিল মঞ্চ।
কলেজ শিক্ষকদের একাংশ যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, নবীণবরণ অনুষ্ঠান এত দেরিতে কেন, কেনই বা ওই অনুষ্ঠানের ব্যয় মেটানো হবে ছাত্র সংসদের টাকায়?
যা শুনে, অধ্যক্ষ সিদ্ধেশ্বর পাহাড়ি বলছেন, ‘‘নতুন কলেজ তো তাই এখনও ছাত্র সংসদ গড়া যায়নি। আর, অনুষ্ঠান তো ওদের জন্যই সে কারণেই ওই খাতের টাকা ব্যয় করা হয়েছে।’’ তবে সে সিদ্ধান্ত যে তাঁর একার নয়, তাও জানাচ্ছেন তিনি। কলেজ পরিচালন সমিতির বৈঠকেই ওই অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে সিদ্ধেশ্বরবাবুর দাবি। অধ্যক্ষের যুক্তি অবশ্য মানছেন না শিক্ষা দফতরের কর্তারা। দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘ছাত্র সংসদের নির্বাচন করতে এত সময় লাগে নাকি, ওটা কলেজ কর্তৃপক্ষের নিছকই অজুহাত। আর, ছাত্র সংসদের টাকাও এ ভাবে খরচ করা যায় না। বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’
তবে, নবীনবরণ অনুষ্ঠানের নামে কলেজের মধ্যে মঞ্চ বেঁধে যে আদপে ওই ধরনের ‘চটুল’ নাচ-গান হতে চলেছে, তা তাঁর জানা ছিল না বলেই দায় এড়িয়ে গিয়েছেন সিদ্ধেশ্বরবাবু।
কলেজ পরিচালন সমিতির এক কর্তা জানান, প্রতি বছরের মতো এ বারও কলেজের দুই শিক্ষককে অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁরাই কি ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন? কলেজের একটি সূত্রে বলছে, ‘‘আসলে, ওই দুই শিক্ষককে স্বল্প টাকায় ‘ভাল অনুষ্ঠান’ করিয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছিল কলেজের শিক্ষাকর্মী মোমিনুল হক।’’
কলেজের এক শিক্ষকের দাবি, ‘‘সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের টিকিট পেতে চলেছে বলে বেশ কিছু দিন ধরে নিজেই প্রচার করছে মোমিনুল। ভোটের কথা মাথায় রেখে ছাত্রদের মন জয় করতেই সে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।’’ সাগরদিঘির যুব কংগ্রেস সভাপতি মোমিনুল অবশ্য সে কথা মানতে চাননি। তিনি বলছেন, ‘‘আমি ওই শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলাম মাত্র। যা করেছি শিক্ষক ও ছাত্রদের সঙ্গে নিয়েই করেছি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কলেজের শিক্ষকেরা তো অনুষ্ঠান দেখলেন, তাঁরা তখন কেন প্রশ্ন তুললেন না ?’’ অধ্যক্ষ বলছেন, ‘‘অনুষ্ঠান তো দূরের কথা, আমার ওই ফেস্টুনও চোখে পড়েনি। পড়লে আপত্তি তুলতাম। এ ব্যাপারে পরিচালন সমিতির বৈঠকে সব জানাব।’’ সাগরদিঘির এসএফআই নেতা রাজ জমাদার বলছেন, “কলেজে ছাত্র ছাত্রীদের অনুষ্ঠান করার নামে গোটা সাগরদিঘি জুড়ে যে সব ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে এক কথায় তা অশোভন। কলেজের নাম ডুবিয়েছে ওই অনুষ্ঠানও।’’ তা যে ছাত্র পরিষদেরও মুখ পুড়িয়েছে মেনে নিচ্ছেন ছাত্র পরিষদের সাগরদিঘির সভাপতি আজাহার আলিও, বলছেন, “এটা অশোভন অনুষ্ঠান, তাই উপস্থিত ছিলাম না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy