কৃষ্ণনগরে পুরনো বাসস্ট্যান্ডের বাইরে এভাবে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে নলকূপ। —নিজস্ব চিত্র।
বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া একটি মিষ্টির দোকানে জলের জগটা সবে মুখে তুলেছে বছর আটেকের এক শিশু। অমনি রে রে করে তেড়ে এলেন মাঝবয়সী দোকানদার। শিশুটি জল খাওয়া শুরু করতে না করতেই চোখ-মুখ বাঁকিয়ে সেই ব্যবসায়ী বাজখাঁই গলায় বললেন, ‘‘যত্ত সব আপদ। এমনিতেই জলের অভাব। তার উপর জল খেতে সকলে এখানেই ভিড় করছেন!’’
কেবল জল খাওয়া নিয়ে এত বিরক্তি কেন? প্রশ্নটা করতেই রেগেমেগে ওই ব্যবসায়ীর জবাব, ‘‘বাসস্ট্যান্ডে এক ফোঁটা জলের ব্যবস্থা নেই। অনেক দূর থেকে জল আনতে হচ্ছে। আর সারাদিন লোকজন এসে স্রেফ জল খেয়ে চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে গরমে জলসত্র খুলে বসেছি।’’ শুধু ওই ব্যবসায়ীই নন, কৃষ্ণনগর পুরনো বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া সব ব্যবসায়ীরই এক অবস্থা। এক ফোঁটা শুদ্ধ জল আনতে তাঁদের যেতে হয় দোকান থেকে অনেকটা দূরে। কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কটে আতান্তরে পড়েছেন বাসমালিক-যাত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় দোকানদার-সকলেই।
নদিয়ার সদর শহর কৃষ্ণনগরে তিনটি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। পুরনো বাসস্ট্যান্ডের উপর চাপ কমাতে তৈরি করা হয় চাপড়া লোকাল বাসস্ট্যান্ড ও করিমপুর বাসস্ট্যান্ড। তিনটির মধ্যে কেবলমাত্র করিমপুর বাসস্ট্যান্ডেই রয়েছে যাত্রী ও বাসকর্মীদের তেষ্টা নিবৃত্তির জন্য জলাধার। তবে সেই জল যে কতটা পানের উপযুক্ত তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বাস মালিক সমিতির কার্যকরী সমিতির সদস্য কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘করিমপুর বাসস্ট্যান্ডের জলের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ওই জলের ট্যাঙ্ক কালেভদ্রেও পরিষ্কার করা হয় কিনা সন্দেহ রয়েছে। তাই কেবলমাত্র কোনও উপয়ান্তর না থাকলে কেউ ওই জল পান করেন না।’’
কিন্তু বাকি দু’টিতে সে-সবের কোনও ব্যবস্থা নেই। পুরনো বাসস্ট্যান্ডে চারটি নলকূপ রয়েছে। কিন্তু তারমধ্যে দু’টি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। বাকি দু’টি মূল বাসস্ট্যান্ড থেকে রয়েছে একেবারে একটেরে। সে-দিকে সহজে যাত্রীদের নজরই পড়ে না। ফলে গরমের দুপুরে জল না পেয়ে বাসাত্রী থেকে শুরু করে বাসকর্মী- সকলেরই নাজেহাল দশা।
জেলা সদরের তিনটি স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ছ’শোটি করে বাস ছাড়ে। বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, দৈনিক প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বাস ধরেন। নদিয়া জেলার বাস মালিক সমিতির কার্যকরি সমিতির সদস্য অসীম দত্ত বলেন, ‘‘১৯৮৬ সালে পুরনো বাসস্ট্যান্ডটি তৈরি হয়েছিল। সেই সময় মাত্র ৯০টির মত বাস চলত। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে ছ’শো। অজস্র যাত্রী এই বাসস্ট্যান্ড ব্যবহার করেন নিত্যদিন। কিন্তু এত লোকের সমাগম হলেও পানীয় জলের কোনও বন্দোবস্ত নেই।’’ পানীয় জলের কোনও নলকূপ বা জলাধার না থাকার দরুণ তেষ্টা মেটানোর জন্য অগত্যা যাত্রীদের ভরসা বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন দোকানে থরে থরে সাজিয়ে রাখা নামী কোম্পানির বোতলবন্দি জল। কিন্তু সব যাত্রী বা বাস শ্রমিকদের গাঁটের কড়ি খরচ করে সেই জল কেনার ক্ষমতা নেই। ফলে গরমে জলকষ্টে ভোগাই তাঁদের কাছে ভবিতব্য। নদিয়া জেলা নিত্যযাত্রী সমিতির সম্পাদক প্রশান্ত দে বলেন, ‘‘এমন অনেক যাত্রী আছেন যাঁরা ভাড়াটুকু অবধি দিতে পারেন না। তাঁরা কীভাবে বোতলের জল কিনে খাবেন। এত বড় বাসস্ট্যান্ডে পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই, এটা ভাবাই যায় না।’’
বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, স্ট্যান্ড ব্যবহারের জন্য বাসপিছু পুরসভাকে দৈনিক পাঁচ টাকা দিতে হয়। বাস রাতে স্ট্যান্ডে থাকলে গুনতে হয় ১৫ টাকা। অসীম দত্ত বলেন, ‘‘পুরসভাকে টাকা দিয়েও কোনও পরিষেবা মিলছে না। বার বার বলা সত্ত্বেও পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা করছে না পুরসভা।’’ পানীয় জলের সঙ্কটের কথা স্বীকার করে নিয়ে কৃষ্ণনগর পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন, ‘‘দ্রুত বাসস্ট্যান্ডগুলিতে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা করার উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে।’’
কিন্তু ভরা চৈত্রেও সে উদ্যোগের কোনও ছাপ চোখে পড়ছে না। পুরপ্রধানের আশ্বাসে ভরসা করতে পারছেন না বাসযাত্রী থেকে শুরু করে বাসকর্মীরা।
দুর্ঘটনায় মৃত্যু। গাড়ি চাপা পড়ে মৃত্যু হল এক কিশোরীর। তার নাম নাম মিলি বিশ্বাস (১১)। বাড়ি হাঁসখালি থানার ফুলবাড়ি এলাকায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ওই কিশোরী পরিবারের সঙ্গে খামারশিমুলিয়ায় এসেছিল এক আত্মীয়ের বাড়ি। বিকেলে বাড়ি ফিরবে বলে হাই স্কুলের সামনে বাস ধরার জন্য পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। তখনই কৃষ্ণনগরগামী একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy