Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
বিসর্জনের বলি দুই

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল যুবকের

চাঁদা তোলা থেকে পুজোর জোগাড়—যাবতীয় কাজ সামাল দিয়েছেন তিনি। এমনকী নিষ্ঠাভরে পুজোর করার জন্য সপ্তমী থেকে দশমী চারদিন উপোসও ছিলেন তিনি। কুমোরপাড়া থেকে প্রতিমা নিয়ে এসে বেদীতে বসানো থেকে বিসর্জনের পথে নিয়ে যাওয়া সব কাজ নিজে হাতে কর়তেন তিনি।

 মৃত পুলক মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

মৃত পুলক মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪৬
Share: Save:

চাঁদা তোলা থেকে পুজোর জোগাড়—যাবতীয় কাজ সামাল দিয়েছেন তিনি। এমনকী নিষ্ঠাভরে পুজোর করার জন্য সপ্তমী থেকে দশমী চারদিন উপোসও ছিলেন তিনি। কুমোরপাড়া থেকে প্রতিমা নিয়ে এসে বেদীতে বসানো থেকে বিসর্জনের পথে নিয়ে যাওয়া সব কাজ নিজে হাতে কর়তেন তিনি। শুক্রবার বিকেলে সেই প্রতিমা বিসর্জন ঘাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেদি থেকে প্রতিমা নামানোর সময়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে সেই পুলক মণ্ডলের (৩৫)।

বেলডাঙার নওপুকুরিয়া গ্রামের মন্দিরের পিছনের প্রতিমার চালি দেওয়ালের সঙ্গে লেগে ছিল। প্রতিমা নামানোর সময়ে দেওয়ালের দিকে থাকা বিদ্যুতের তার তিনি দেখতে পাননি। প্রতিমার চালির ধাক্কা খেয়ে ওই বিদ্যুতের তার পুলকের গলায় আটকে গিয়ে কোনও ভাবে তা ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনার সময়ে গ্রামের মন্দিরের সামনে তখন উপচে পড়া ভিড়। তার কিছু ক্ষণ আগেই সিঁদুর খেলা শেষ হয়েছে। এর পরে বেদি থেকে প্রতিমা নামিয়ে ট্রাক্টরে তোলার প্রস্তুতি শুরু হয়। প্রতিমার পিছনে দাঁড়িয়ে তদারকি করছেন নওপুকুরিয়া মাঝপাড়া পুজো কমিটির কর্তা পুলক মণ্ডল। তার মধ্যে বাঁশ দিয়ে ঠেলে প্রতিমা নামানোর সময়ে কোনও ভাবে বিদ্যুতের তার গলায় জড়িয়ে ওই বিপত্তি ঘটে।

সামনের দিক থেকে পুলকের নাম ধরে চিৎকার করলেও তাঁর কোনও সাড়া-শব্দ পাওয়া যায় না। পরে প্রতিমার পিছনের দিকে গিয়ে সদস্যরা দেখতে পান—দেওয়ালের সঙ্গে থাকা বিদ্যুতের তার গলায় জড়িয়ে রয়েছে এবং মাটিতে তাঁর শরীর নিথর হয়ে রয়েছে এবং মুখে গোঙানির শব্দ।

বিসর্জনের যাবতীয় আয়োজন বন্ধ করে পুলককে দ্রুত বেলডাঙা গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসক মৃত বলে জানান। পরে কোনও রকমে বিনা আড়ম্বরে প্রতিমা বিসর্জিত হয়। শনিবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল মাঠপাড়ার ৪২ টি পরিবার মিলে পুজোর আয়োজন করেন সেই পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন। অধিকাংশ বাড়িতেই অরন্ধন চলছে। স্ত্রী তুলসী মণ্ডল বলেন, ‘‘গ্রামে গত চার বছর ধরে পুজো হচ্ছে। পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিল, তাই নিজে হাতে মন্দির বানাতেন। এমনকি পুজোর যাবতীয় জোগাড় সে নিজে করত। চার দিন নাওয়া-খাওয়া ভুলে পুজো নিয়ে পড়ে থাকত। সেই প্রতিমা তুলতে গিয়েই বিপত্তি ঘটল।’’ স্বামীর মৃত্যুতে এখ দুই ছেলেকে মানুষ করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তুলসী। তিনি বলছেন, ‘‘জানি না কী ভাবে দুই ছেলেকে বড় করে তুলব।’’ পুলকের মা সুখসারি মণ্ডল জানান, পুজোর চাঁদা তোলা থেকে প্রতিমার সাজ—সব নিজে হাতে করত। সেই প্রতিমা বিসর্জন করতে গিয়েই যে বিপত্তি তা কোনও দিন ভাবতে পারিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Electrified Death Durga Puja Durga Puja 2018
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE