Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ছাত্রীকে গুলি, নিজের মাথায় চোট তরুণের

প্রথমে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, সেখান থেকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় দু’জনকেই। কিন্তু তরুণীকে বাঁচানো যায়নি। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানেই তিনি মারা যান। তরুণের অবস্থাও গুরুতর। 

তখনও বেঁচে গুলিবিদ্ধ বিদিশা। আহত অভিযুক্ত অলীক (ডানদিকে)। শক্তিনগর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

তখনও বেঁচে গুলিবিদ্ধ বিদিশা। আহত অভিযুক্ত অলীক (ডানদিকে)। শক্তিনগর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৪২
Share: Save:

স্কুটিতে চেপে ‘বন্ধু’র সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন করিমপুর পান্নাদেবী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। নিউ শিকারপুরের দিকে চলে যাওয়া নির্জন রাস্তায় কালভার্টের কাছে স্কুটি রেখে কথা বলতে-বলতে দু’জনে কিছুটা এগিয়ে যান।

হঠাৎ ফটাস করে একটা শব্দ!

সেটা যে গুলির শব্দ তা বুঝে এলাকার লোকজন যখন দৌড়ে এলেন, তরুণী পড়ে আছেন রাস্তায়। রক্তে ভেসে যাচ্ছে গাল-গলা। অচৈতন্য হয়ে কাছেই পড়ে আছেন তরুণটি। মাথা চুঁইয়ে নেমে আসা রক্তে রাস্তা ভিজে গিয়েছে। প্রথমে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, সেখান থেকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় দু’জনকেই। কিন্তু তরুণীকে বাঁচানো যায়নি। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানেই তিনি মারা যান। তরুণের অবস্থাও গুরুতর।

পুলিশ জানায়, নিহত তরুণীর নাম বিদিশা মণ্ডল (১৮)। পান্নাদেবী কলেজের কলা বিভাগের ছাত্রী ছিলেন তিনি। বাড়ি মুরুটিয়া থানার শিকারপুর কুঠিপাড়ায়। আর, অলীক কর্মকার নামে তরুণটি এসেছিলেন মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি থেকে। তাঁর বাড়ি সাগরপাড়া বাজারে। বয়স বছর পঁচিশ। সোনার কাজ করেন। পুলিশ জানায়, তাঁর সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। নিজেকে কিন্তু তিনি গুলি করেননি। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে জ্ঞান ফেরে তাঁর। জরুরি বিভাগে তাঁকে যিনি প্রাথমিক চিকিৎসা করেছিলেন সেই কর্তব্যরত চিকিৎসক অপু রায়ের দাবি, অলীক তাঁকে বলেন: বিদিশাকে গুলি করে তিনিও আত্মঘাতী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গুলি ছিল না। তাই আগ্নেয়াস্ত্রের বাট দিয়ে নিজের মাথায় মারেন।

করিমপুর থেকে বেরনো কালাচাঁদ রোড শিকারপুরের কাছে গিয়ে দু’ভাগ হয়েছে। একটি রাস্তা চলে গিয়েছে নিউ শিকারপুরের দিকে। সেটি বেশ নির্জন। বিকালে সেখানেই অলীকের সঙ্গে দেখা করতে যান বিদিশা। তাঁর বাড়ি থেকে কিলোমিটার দুয়েক দূরে। সেখানেই দু’জনের মধ্যে কোনও কথা কাটাকাটি হয়ে থাকবে। তার পরেই এই ঘটনা।

বিদিশার বাবা বুদ্ধদেব মণ্ডল জানান, তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে বিদিশা ছিলেন ছোট। গত জানুয়ারিতে সাগরপাড়ায় তাঁর বড় মেয়ে মধুমন্তীর বিয়ে হয়েছে। অলীক তাঁর বড় জামাই জয়দেব বিশ্বাসের প্রতিবেশী। বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘জানতে পেরেছি, অলীক স্বর্ণকারের কাজ করে। কিন্তু কী ভাবে আমার মেয়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ তৈরি হল, কত দিন যোগাযোগ ছিল, সেটা আমার জানা নেই।’’ অলীক অবশ্য চিকিৎসকের কাছে দাবি করেছেন, কয়েক বছর ধরেই তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল।

তা হলে কেন এই হামলা?

সাগরপাড়ায় অলীকের আত্মীয়-বন্ধুরা জানাচ্ছেন, অন্তত বছরখানেক ধরে দু’জনের সম্পর্ক ছিল। অলীক মাঝে-মাঝেই শিকারপুরে বিদিশার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। কিন্তু ইদানিং তাঁদের সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। অলীকের বন্ধুবান্ধবদের একাংশের অভিযোগ, সম্প্রতি শিকারপুরেই অন্য এক যুবকের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বিদিশার। তাই নিয়ে দু’জনের হচ্ছিল। তবে অলীকের মতো শান্ত ছেলে গুলি করতে পারেন, এমনটা তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছেন না। জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বিদিশাকে খুন করে অলীক নিজেও আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তাদের ধারণা। তবে অলীক গুরুতর জখম থাকায় এখনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

(সহ-প্রতিবেদন: সুজাউদ্দিন)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Injury Firing Student Youth Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE