ষাট বছরেরও পুরোনো গ্রামীণ গ্রন্থাগারের নিজস্ব কোনও ভবন ছিল না। শীত, গ্রীষ্ম বর্ষায় মসজিদের পাশে এক কামরার টালির ঘরে কোনও মতে চলত লাইব্রেরি। শৌচাগার বা পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় অসুবিধায় পড়তে হত পাঠক, গ্রন্থাগার কর্মীদের।
অবশেষে গ্রন্থাগারেরই এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য জমি দেওয়ায় মুখে হাসি ফুটেছে সহকর্মী থেকে পাঠকদের।
মুশির্দাবাদের শক্তিপুর থানার ঘোল্লা গ্রামে কিশোর সঙ্ঘ গ্রামীণ গ্রন্থাগারটি ষাট বছরেরও বেশি পুরনো। কিন্তু নিজস্ব কোনও গ্রন্থাগার না থাকায় ঘোল্লা পশ্চিম পাড়া জামা মসজিদের ভবনের এক পাশে টালি ছাউনির এক কামরার এক ঘরে চলছিল অনুমোদিত ও সাহায্য-প্রাপ্ত ওই গ্রন্থাগারের কাজ। শৌচাগার বা পানীয় জলের ন্যুনতম ব্যবস্থা না থাকায় সারা বছর কষ্টে কাটাতে হত গ্রন্থাগারের পাঠক ও কর্মীদের। তাই একটি পাকা ভবন করা খুব জরুরি হয়ে পড়ছিল। জমি না থাকায় পাওয়া যাচ্ছিল না ভবন তৈরির জন্য সরকারি টাকাও।
শেষ পর্যন্ত চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ওই গ্রন্থাগারের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী গ্রন্থাগারের জুনিয়র লাইব্রেরি সহযোগী সুফিওর রহমান ভবন তৈরির জন্য তাঁর জমির বেশ কিছুটা দান করেন। যার বতর্মান মূল্য তিন লক্ষেরও বেশি।
সুফিওর বলেন, “ভবন না থাকায় নানা সমস্যা হচ্ছিল। জমি না থাকায় ভবন তৈরির সরকারি টাকাও পাওয়া যাচ্ছিল না। গ্রামের পাঠকদের কথা ভেবে জমিটা দিয়েই দিলাম। আমি হয়তো থাকব না। কিন্তু আমার দানের জমিতে লাইব্রেরিটা থাকবে ভেবে ভালো লাগছে।” তিনি জানান, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের মতামত চেয়েছিলেন। তাঁরাও সানন্দে রাজি হয়ে যান। তাই জমিটা দান করতে কোনও সমস্যা হয়নি।
পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য ও এলাকার বাসিন্দা নিজামুদ্দিন ফরিদি জানান, ১৯৫০ সালে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ঘোল্লা কিশোর সঙ্ঘ। সঙ্ঘের উদ্যোগেই চালু হয় লাইব্রেরিটি। পরে সেটা সরকারি লাইব্রেরিতে পরিণত হয়। তিনি বলেন, “সুফিওর রহমান জমিদান করেছে শুনে খুব ভাল লাগছে। এবার সরকারি উদ্যোগে ভবন তৈরি হবে। এলাকার পাঠকরা এতে উপকৃত হবেন।”
গ্রন্থাগারের পৃথক ভবন হবে জেনে উচ্ছ্বসিত গ্রন্থাগারিক কৃষ্ণেন্দু রায়। তিনি বলেন, “আমাদের গ্রন্থাগারে প্রায় ২৮০৬২ টি বই রয়েছে। বর্তমানে পাঠকের সংখ্যা সাড়ে তিনশোরও বেশি। অনেক বই রয়েছে যেগুলি দুষ্প্রাপ্যও। সেগুলি সংরক্ষণের জন্য একটি স্থায়ী ভবন জরুরি ছিল। সেই সমস্যা মিটতে চলেছে ভেবে ভাল লাগছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy