Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দু’মাসে চারটি বাড়ি ভাগীরথীর করাল গ্রাসে

গত দু’মাসে চার জনের সর্বস্ব গিয়েছে ভাগীরথীর গর্ভে। ভাঙনের করাল গ্রাসে ঘুম উড়েছে বেলডাঙা-১ ব্লকের ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া বনমালীপুরের কয়েকশো বাসিন্দার। ভাঙন প্রতিরোধের আবেদন জানিয়ে বনমালীপুরের বাসিন্দারা স্থানীয় সুজাপুর-কুমারপুর পঞ্চায়েত, বেলডাঙা-১ পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন।

ভাঙন-পারের বসত। বনমালীপুরে গৌতম প্রামাণিকের ছবি।

ভাঙন-পারের বসত। বনমালীপুরে গৌতম প্রামাণিকের ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

গত দু’মাসে চার জনের সর্বস্ব গিয়েছে ভাগীরথীর গর্ভে। ভাঙনের করাল গ্রাসে ঘুম উড়েছে বেলডাঙা-১ ব্লকের ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া বনমালীপুরের কয়েকশো বাসিন্দার। ভাঙন প্রতিরোধের আবেদন জানিয়ে বনমালীপুরের বাসিন্দারা স্থানীয় সুজাপুর-কুমারপুর পঞ্চায়েত, বেলডাঙা-১ পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন। তাও মাস দু’য়েক হয়ে গেল! কিন্তু সেচ দফতর বালির বস্তা ফেলে সাময়িক ভাবে ভাঙন প্রতিরোধ করলেও স্থায়ী পদক্ষেপ করেনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’মাসে সুজাপুর-কুমারপুর পঞ্চায়েতের বনমালীপুরের অনিল হালদার, সঞ্জয় হালদার, স্মরজিৎ হালদার, তমাল ঘোষদের বাড়ি ভাগীরথীর গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। ভাগীরথীর পাড় থেকে কিছুটা দূরে তাঁরা ফের নতুন করে বসত গড়েছেন। বনমালীপুরের মাধব হালদার বলেন, “ভাগীরথীতে নৌকা চালিয়ে সামান্য আয় হয়। তাতে সংসার চলে না। এই অবস্থায় ভাগীরথীর ভাঙনে ঘরবাড়ি চলে যাওয়ায় চরম দুর্দশায় পড়েছি। পাড় থেকে কিছুটা দূরে নতুন করে জায়গা কিনে বাড়ি করতে হয়েছে।” তাঁর কথায়, “মাস দু’য়েক আগে দিনের বেলায় আচমকা বাড়ি ভাগীরথীর ভাঙনে তলিয়ে যায়। সেই সময়ে বাড়িতে আমরা পুরুষ কেউ ছিলাম না। বাড়ির মেয়েরা ভয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকতে পারেনি। ভাঙনে ঘরের জিনিসপত্রও তলিয়ে যায়।” পাড় লাগোয়া বাড়ির দাওয়ায় ভাগীরথীর দিকে তাকিয়ে বসে আছেন ৯৩ বছরের বৃদ্ধ অনিল হালদার। ভাঙনের কথা জিজ্ঞেস করতেই কাঁপা গলায় শীর্ণকায় হাত তুলে ভাগীরথীর দিকে আঙুল দেখিয়ে বলেন, “ওই যে দূরে বাড়ি ছিল। বিঘা থানেক খেতি জমিও ছিল। ভাগীরথী সব গিলে খেয়েছে।”

ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া সুজাপুর ও বনমালীপুর পাশাপাশি দুটি গ্রাম। ভাঙনের কবলে পড়ে ওই দু’টি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় টুটুল শেখ বলেন, “পাড় ভেঙে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যে সুজাপুর ও বনমালীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় দু’টিও ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক বছরে চাষের জমি, বাড়ি, বাগান ভাগীরথীতে তলিয়ে গিয়েছে। ভাঙনের ফলে বনমালীপুরে ৩০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার মধ্যে ভাগীরথীর পাড় বরাবর ১০০টি পরিবারের অবস্থা আরও ভয়াবহ।”

বনমালীপুর অঞ্চল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সিদ্ধার্থ দে বলেন, “সেচ দফতরের উদাসীনতা ও গাফিলতিতেই এই অবস্থা। ভাঙন রুখতে সরকারি ওই দফতর কোনও পদক্ষেপ করেনি।”

সুজাপুর-কুমারপুরের পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের সুনীল ঘোষ বলেন, “ভাঙন প্রতিরোধ করতে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তা পঞ্চায়েতের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি পঞ্চায়েত সমিতিকে জানিয়েছি।” বেলডাঙা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের আবু সঈদ বলেন, “গোটা বিষয়টি সেচ দফতরকে জানানো হয়। এর পরে সেচ দফতরের কর্তারা সরেজমিনে ভাঙনের ভয়াবহ রূপ দেখে গিয়েছেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা তাঁরা নেননি।”

বেলডাঙা ১-এর বিডিও শুভ্রাংশু মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি জানার পরেই সেচ দফতর থেকে পাড় বাঁধাইয়ের কাজ শুরু করায় এই মুহূর্তে ভাঙনের আশঙ্কা নেই। আশা করছি আগামী বর্ষার আগেই পাড় বাঁধাইয়ের কাজ শেষ করা যাবে। তবে নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় ভাঙন প্রতিরোধে নতুন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। ভোট প্রক্রিয়া মিটে গেলেই সেচ দফতর ও ব্লক প্রশাসন যৌথ ভাবে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ভাগীরথীর পাড় বাঁধাই করবে।”

সেচ দফতরের (বহরমপুর ডিভিশন) কাযনির্বাহী বাস্তুকার স্বপন সাহা বলেন, “বালির বস্তা ফেলে সাময়িক ভাঙন ঠেকানো গিয়েছে। স্থায়ী ভাবে ভাঙন প্রতিরোধে জন্য প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। অর্থ অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bhagirathi river baharampur flood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE