Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দলেরই দৌরাত্ম্যে টিএমসিপি ছাড়লেন ছাত্রীরা

পড়শি একটি কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছেলেরা উত্ত্যক্ত করছে। তাই সংগঠনের সদস্যপদ ছেড়ে দিলেন নদিয়ার কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের এক দল ছাত্রী। বৃহস্পতিবার জেলার টিএমসিপি সভাপতির কাছে পদত্যাপত্র জমা দিলেন তাঁরা। কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজ আর কৃষ্ণনগর দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজের মধ্যে দূরত্ব বড়জোর আড়াই কিলোমিটার। দুই কলেজেরই ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে। কিন্তু রাজ্যের আর পাঁচটা এলাকার মতো এখানেও শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর দাপট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৬
Share: Save:

পড়শি একটি কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছেলেরা উত্ত্যক্ত করছে। তাই সংগঠনের সদস্যপদ ছেড়ে দিলেন নদিয়ার কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের এক দল ছাত্রী। বৃহস্পতিবার জেলার টিএমসিপি সভাপতির কাছে পদত্যাপত্র জমা দিলেন তাঁরা।

কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজ আর কৃষ্ণনগর দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজের মধ্যে দূরত্ব বড়জোর আড়াই কিলোমিটার। দুই কলেজেরই ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে। কিন্তু রাজ্যের আর পাঁচটা এলাকার মতো এখানেও শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর দাপট।

উইমেন্স কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক পায়েল হালদারের অভিযোগ, “দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজের সংগঠনের তরফে তাদের গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার জন্য আমাদের উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। রাজি না হওয়ায় আমাদের সদস্যাদের নানা ভাবে হয়রান করতে শুরু করেছিল ওই কলেজের নেতারা।” তিনি জানান, ফাঁকা রাস্তায় উত্ত্যক্ত করা থেকে শুরু করে, অশালীন মন্তব্য, রাতবিরেতে বাড়িতে ফোন করে হুমকি, কোনও কিছুই বাদ রাখা হচ্ছিল না।

দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শুভ ঘোষ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “পুরোটাই রাজনৈতিক চক্রান্ত। আমাদের কলেজের কেউই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়।” কিন্তু দু’পক্ষই একই সংগঠনের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক চক্রান্তের কারণ কী? সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি শুভবাবুর কাছ থেকে। তবে দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের স্থানীয় দুই নেতা কৃষ্ণনগরের ওই কলেজ দু’টি নিয়ন্ত্রণ করেন। দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজের টিএমসিপি নেতারা উইমেন্স কলেজের টিএমসিপি-র ছাত্রীদের বলছিলেন তাঁদের গোষ্ঠীতে যোগ দিতে। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ‘সবক’ শেখাতেই ছাত্র নেতাদের এমন পদক্ষেপ!

পায়েলের দাদা রাজু হালদারের কথায়, “আমি ভাবতেই পারছি না যে একই সংগঠন করা সত্ত্বেও ওদের লবি না-করায় ওরা এমন পথ বেছে নেবে। মঙ্গলবার রাত ন’টা নাগাদ আমি মোটরবাইকে দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজের কাছে একটি চায়ের দোকানে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রতিবাদ করাতেই আমাকে মারধর করা হয়।”

টিএমসিপির জেলা সভাপতি অয়ন দত্তের অবশ্য বক্তব্য, “এটা নেহাতই পারিবারিক গণ্ডগোল। এর সঙ্গে আমাদের সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে আমরা উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উইমেন্স কলেজের টিএমসিপির সদস্যারা জানান, এটা মোটেও পারিবারিক গণ্ডগোল নয়। আলোচনার মাধ্যমে মিটমাটের দাবিও উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। ওই ছাত্রীরা জানাচ্ছেন, অয়ন দত্ত মিটমাটের প্রস্তাব দেওয়ার পরে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি না-দিলে তাঁরা নিজেদের অবস্থান থেকে সরবেন না। তাঁদের কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি ও আদর্শ মেনেই আমরা সংগঠনটা করছিলাম। কিন্তু একই সংগঠনে থেকে নেতা-কর্মীদের অন্যায় আবদার না শোনার পরিণাম যে এমনটা হতে পারে তা স্বপ্নেও ভাবিনি।”

ছাত্রীদের দাবি, দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজের টিএমসিপি-র নেতাদের কীর্তির বিরুদ্ধে তাঁরা জেলা নেতৃত্বকে মৌখিক ভাবে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ফল মেলেনি। বিষয়টি স্থানীয় পুরপিতা তৃণমূলের অসীম সাহাকে জানানো হলে তিনি অবশ্য ‘বিষয়টি কলেজের নয়’ বলে টিএমসিপি-র জেলা সভাপতির কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আর অয়নবাবুর বক্তব্য, “আগে কেউ এই ধরনের অভিযোগ করেননি। যদি সত্যিই এমনটা হয়ে থাকে তাহলে আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ভাবে কড়া ব্যবস্থা নেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

womens college TMCP krishnanagar students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE