লক্ষ্যে অবিচল। রানাঘাটে তোলা নিজস্ব চিত্র।
উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন। কিছু দিন শিক্ষকতাও করেছেন। কিন্তু মানসিক শান্তি পাচ্ছিলেন না। নিজে কিছু করার ভাবনা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে চোদ্দ বছরের চেষ্টায়। নদিয়ায় রানাঘাটের কোট পাড়ার বাসিন্দা নীলিমা সেনের। তিনি এখন একটি কারখানার মালিক। সঙ্গে শো-রুম ও বিক্রয় কেন্দ্র।
কারখানা পরিচালনা করা, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, টিম ম্যানেজার তৈরি করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, ডিজাইন তৈরি করা, উৎপাদিত দ্রব্য দেশ-বিদেশে বিক্রির ব্যবস্থা করা, সব কিছুই তিনি নিজে হাতে করেন। এই কারখানায় পুরুষদের পাঞ্জাবি ও মহিলাদের চুড়িদার, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তা, শাড়ি, টপ সহ বিভিন্ন পোশাকের ডিজাইন তৈরি করা হয়।
মাত্র পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে পথ চলা শুরু করেছিলেন নীলিমাদেবী। এখন প্রতি বছর কম পক্ষে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার লেন-দেন চলে। দেশের বিভিন্ন রাজ্য ছাড়াও বাংলাদেশ ও কানাডায়ও তাঁর তৈরি পোশাক রফতানি হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি ব্যবসায়ীরাও এখান থেকে জামা কাপড় কেনেন।
রানাঘাট শহর ও তার আশপাশ এলাকা ছাড়াও এই জেলার বিভিন্ন জায়গা, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বীরভূমের লোকজনও এই কারখানার সঙ্গে জড়িত। মূলত মহিলারাই সোলাইয়ের কাজ করেন। তাঁদের সংখ্যা তিনশোর বেশি। যাদের মাসিক আয় হাজার তিনেক টাকা। এ ছাড়াও বাড়ির কারখানায় কাজ করছেন কুড়ি জন। যাঁদের আয় মাসে ছয় থেকে দশ হাজার টাকা। সকাল, দুপুর এবং রাতে এই তিন শিফটে শ্রমিকরা কাজ করেন। পড়শি জেলার শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা্ রয়েছে। এই কাজের জন্য ২০১১ সালে তিনি বিএনসিসিআই-এর কাছ থেকে পুরস্কারও পেয়েছেন।
ছোট বেলায় ধানতলা থানার নূতনগ্রাম থেকে কাদা-মাটির রাস্তা পায়ে হেঁটে রানাঘাট শহরে লেখাপড়া করতে আসতেন নীলিমাদেবী। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ এবং বিএড করেছেন। কিছু দিন ধানতলার পূর্ণনগরে একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছিলেন।
বিবাহ সূত্রে তিনি এখন রানাঘাট পুরসভার দশ নম্বর ওয়ার্ডের কোর্ট পাড়ার বাসিন্দা। স্বামী ও এক ছেলেকে নিয়ে সংসার। তিনি বলেন, “নিজে কিছু করার ইচ্ছাটা আমার ছোট বেলা থেকেই ছিল। সেজন্যই জেলা শিল্প কেন্দ্র থেকে উদ্যোগপতি হওয়ার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। পরে ভারত সরকারের রানাঘাট পাওয়ারলুম সার্ভিস সেন্টার থেকে টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল টেনিং (সেলাই মেশিনে হাতে কলমে কাপড় কেটে সেলাই করার প্রশিক্ষণ) নিয়ে পথ চলা শুরু করি। প্রথমে ব্যাঙ্ক থেকে সেভাবে সহযোগিতা পাইনি। আমার কাজ দেখে এখন তাঁরাই এগিয়ে আসছেন।” ওই উদ্যোগপতি বলেন, “আমার মনে হয় ইচ্ছা থাকলেই অনেক কিছু করা সম্ভব। কোনও বিষয়কেই ছোট করে দেখিনি। বিভিন্ন মেলায় প্রদর্শনী দেখতেও অংশ নিয়েছি। আমি চাই আমার মতো অনেকেই এগিয়ে আসুন। তাঁদের আমি সাধ্য মতো সাহায্য করব।” তিনি বলেন, “বছর খানেক আগে আমার শাশুড়ি অনিতারানি সেন মারা গিয়েছেন। তিনি নিজে সেলাই করতেন। পুরনো দিনের মানুষ হলেও কী ভাবে যে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন, তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। এছাড়া আমার ভাসুর সনৎ সেন এবং এক ভাইঝি শ্রাবণী কর্মকারও এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করেছে।” তাঁর স্বামী সুব্রত সেন বলেন, “সততার সঙ্গে ব্যবসা করছেন নীলিমা। ইচ্ছা থাকলে একজন মানুষ কী ভাবে উপরে উঠতে পারে, তাঁর কাছে থেকে শেখার আছে।” তবে এখানেই ইতি টানতে চান না নিলিমাদেবী। প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা খরচ করে গেঞ্জি তৈরির কারখানা বানাতে চাইছেন তিনি। যেখানে কমপক্ষে পঞ্চাশ জনের কর্মসংস্থান হবে বলে তাঁর দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy