ভাঙচুরের পরে সেই বাস। ডান দিকে, আহত বাসচালক সুদর্শন রায়। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
বাস চালকের হাতের গুণে দুর্ঘটনার থেকে রেহাই পেয়েছিলেন সাইকেল আরোহী। কিন্তু গুজব রটেছিল বাসের চাকায় পিষে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। তারই জেরে কিছুটা দূরে বাস আটকে চালককে বেধড়ক পেটাল জনতা।
বৃহস্পতিবার সকালে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের বাসুদেবপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে সরকারি ওই বাস আটকে ভাঙচুরও করেন গ্রামবাসী। রেহাই পাননি বাসযাত্রীরাও। গ্রামবাসীর ছোড়া ইটের ঘায়ে মাথা ফাটে তিন মাসের এক শিশুর। আধ ঘণ্টা ধরে এই তাণ্ডবের পর উত্তেজিত গ্রামবাসী সরকারি বাসটিতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। আহত অবস্থাতেই চালক ভাঙাচোরা বাসটি চালিয়ে নিয়ে গিয়ে সুতি থানায় ঢুকিয়ে দেন।
বাস চালক সুদর্শন রায়কে গুরুতর আহত অবস্থায় সুতির মহেশাইল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শিশু-সহ অন্য যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর কলকাতাগামী বিভিন্ন বাসে তুলে দেওয়া হয়েছে।
যাঁর মৃত্যুর গুজবে এত কাণ্ড, নতুন লোহরপুরের সেই যুবক সানাউল্লা শেখ অবশ্য তাঁর বাড়িতে রয়েছেন সুস্থ শরীরে। তিনি বলেন, “সাইকেল নিয়ে হেঁটে রাস্তা পার হচ্ছিলাম। বাসটি আসছিল দ্রুত গতিতে। আমি সেই দেখে ভয় পেয়ে সড়কের উপরই সাইকেল ফেলে দৌড়ে চলে যাই। কিছুক্ষণ পরে সাইকেল নিতে এসে শুনি এই সব ঘটে গিয়েছে।”
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত উত্তরবঙ্গ সরকারি পরিবহণের ওই বাসটি বুধবার রাত ৮টায় শিলিগুড়ি থেকে ছেড়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা পৌঁছনোর কথা ছিল বাসটির। কিন্তু ডালখোলায় যানজটের জন্য প্রায় ৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকায় সকাল ৮টা নাগাদ ধুলিয়ানে পৌঁছয় সবে। যাত্রী ছিলেন ৩২ জন। বাসটি দ্রুত গতিতেই যাচ্ছিল। আহত বাস চালক বলেন, “বাসুদেবপুরের কাছে সাইকেল নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন এক তরুণ। কোনও রকমে বেরিয়ে আসি। মাইলখানেক যেতেই দেখি জাতীয় সড়কের উপর শতাধিক লোক জড়ো হয়েছে। বাস দাঁড় করাতে লোকজন বাসে উঠে আমাকে মারতে-মারতে নীচে নামায়।”
কয়েকজন গ্রামবাসী লাঠি নিয়ে বাসে উঠে ভাঙচুর শুরু করে। সহকারী চালক শিবকুমার প্রসাদ বলেন, “আমিও তখন যাত্রীদের মধ্যে বসে। আতঙ্কিত যাত্রীরা কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। চালককে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে পিটুনি খেতে হয় আমাকেও।” সুতি থানায় ঘটনার অভিযোগ করেন তিনিই।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা তপন সরকার বলেন, “একটা ছেলেকে চাপা দিয়েছে গুজব থেকে পুরো ঘটনাটা ঘটেছে। আমি এটা সমর্থন করি না। দুর্ঘটনা না ঘটলেও বাসটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে যাচ্ছিল বলে শুনেছি। সেটাও ঠিক নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy