Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বাজার আগুন, ইফতারের পাতে বাড়ন্ত পদ

বাজার আগুন। ফলে টান পড়েছে ইফতারের থালায়। ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে ইফতারের মেনু থেকে উধাও হতে চলেছে আপেল, নাসপাতি, প্রেমখেজুর, আঙুর ও বেদানার মতো ফল। মাছ, মাংস থেকে শুরু করে আনাজ ও সব্জির বাজারেও আগুন লেগেছে। ফলে উপবাসের জন্য ভোর রাতের শেহেরিতেও পুষ্টিকর পদের এ বার বড়ই অভাব।

বহরমপুর ফলের বাজারে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

বহরমপুর ফলের বাজারে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০১:৪২
Share: Save:

বাজার আগুন। ফলে টান পড়েছে ইফতারের থালায়। ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে ইফতারের মেনু থেকে উধাও হতে চলেছে আপেল, নাসপাতি, প্রেমখেজুর, আঙুর ও বেদানার মতো ফল। মাছ, মাংস থেকে শুরু করে আনাজ ও সব্জির বাজারেও আগুন লেগেছে। ফলে উপবাসের জন্য ভোর রাতের শেহেরিতেও পুষ্টিকর পদের এ বার বড়ই অভাব।

আরবি চান্দ্রমাস রমজানের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত মোট ৩০ দিন রোজা রাখা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে বাধ্যতামূলক। এক মাত্র অসুস্থ ও শিশুদের জন্য রোজার উপবাস থেকে ছাড় আছে। রোজা রাখা মানে সূর্যোদয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রায় ১৫ ঘণ্টা নিরম্বু উপবাস পালন করা। আজকের দিন, অর্থাৎ শনিবারের রোজার জন্য সেহেরি খাওয়া ইফতারি করার বিষয়টিই ধরা যাক। এ দিনের রোজা অর্থাৎ উপবাস পালনের জন্য সেহেরি খেতে হয়েছে রাত ৩টে বেজে ৩২ মিনিটে। তারপর থেকে সারা দিন টানা উপবাস। কোনও খাদ্য খাবার কোন ছার, সারাদিনে জলটুকুও খাওয়া যাবে না। এ দিন সূর্যাস্তের সময় ৬টা বেজে ২৮ মিনেটে জল মুখে দিয়ে ইফতারি সহযোগে রোজা অর্থাৎ নিরম্বু উপবাস ভাঙা হবে।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে প্রতি বছরের রমজান মাস সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হল সেহেরি ও ইফতারি। শেষরাতের সেহেরির মেনুতে তাই থাকা প্রয়োজন সুপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার। ফের সূর্যাস্তের সময়ের ইফতারিতেও থাকা দরকার নানান ধরণের ফল। এবার কিন্তু ওই দু’টি ক্ষেত্রেই বাজার বড় বালাই। লালগোলা থানার মল্লিকপুরের রোজদার সারজেমান শেখ বলেন, “অগ্নিমূল্যের কারণে ইফতারির তালিকা থেকে এ বার অনেক ফলই বাদ দিতে হয়েছে। অথবা কষ্ট করে ইফতারির ফল কিনলেও অন্য বছরের তুলনায় এ বার পরিমাণ অনেকটাই কমাতে হয়েছে। বেগুন ও পেঁয়াজের দাম আকাশ ছোঁয়া। ফলে এ বার ইফতারির অন্যতম দু’টি পদ পেঁয়াজি, বেগুনিও মহার্ঘ্য।”

বহরমপুর পুরসভার উপপুরপ্রধান মৈনুদ্দিন চৌধুরী ওরফে বাবলা বলেন, “ওজু অর্থাৎ হাদিস মতে হাত, পা, নাক, মুখ ও কান বিশুদ্ধ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলার পর ফলমূল দিয়ে সাজানো সুদৃশ্য ইফতারির থালা সামনে নিয়ে সারাদিনের উপবাস-ক্লান্ত রোজদারকে কয়েক মিনিট বসে থাকতে হয় সংযম পালনের জন্য।”

তারপর সূর্যাস্তের লগ্ন সমাগত হলে মসজিদে মাগরিবের নমাজের আজান দেন মোয়াজ্জিম। আজান শুনতে পাওয়ার পর রোজদাররা ইফতারের দোয়া পাঠ করে উপবাস ভাঙেন। কিন্তু এ বছর রোজার ধর্মীয় ও রীতি রেওয়াজে হানা দিয়েছে বাজারদরের ঊর্ধ্বগতি। বহরমপুর শহরের ফৌজদারি কোর্ট মার্কেটের ফল ব্যবসায়ী সুকুমার দে বলেন, “আপেল ১৫০-২০০ টাকা কেজি, রাজস্থানের খেজুর ৭০-১০০ টাকা কেজি, সৌদি আরবের খেজুর ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, দেশি নাসপাতি ৮০-১০০ টাকা কেজি, চায়না নাসপাতির ২৫০ টাকা কেজি, এক পিস আনারসের দাম ৩৫-৫০ টাকা। সুতরাং ফল এখন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে ইফতারির থালাতেও তার প্রভাব পড়ছে।”

লালগোলার স্কুল শিক্ষক জাহাঙ্গির মিঞা বলেন, “ইফতারির থালায় বেগুনি ও পেঁয়াজি মাস্ট। কিন্তু এ বছর তাতেও টান পড়েছে। বেগুনের দাম কেজি প্রতি ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, পেঁয়াজ ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা কেজি। ফলে মুর্শিদাবাদের দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ পেঁয়াজি, বেগুনি কিনবে কি করে?” আদা ১৬০ টাকা কেজি, রসুন ৮০ টাকা কেজি, পটল ২০-২৫ টাকা কেজি, লাফা ও কাকরোল ৪০ টাকা কেজি। মাছ-মাংসের দিকে হাত বাড়ানোর উপায় নেই।

তাই রোজার ঈদকে খুশির ঈদ বলা হলেও বাজারে আগুন লাগায় ইফতারি ও সেহেরির থালা থেকে সেই খুশি এ বার প্রায় উধাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

iftar anal abedin berhampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE