মৃতের পোশাক সিজ করা হয়েছিল ঠিকই, তবে কোনও সিল বা স্বাক্ষর নেই তাতেশুক্রবার সজল ঘোষ হত্যা মামলায় তদন্তকারী অফিসার বিভাস সেনের সাক্ষ্যগ্রহণের তৃতীয় দিনে উঠে এল এমনই তথ্য।
ভিড়ে ঠাসা আদালতে এ দিন তিন জন আইনজীবী দীর্ঘ ক্ষণ জেরা করেন বিভাসবাবুকে। আদালতে হাজির ছিলেন মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত প্রদীপবাবুর পরিবারের সদস্যেরাও।
জেরার শুরুতেই আইনজীবী প্রতীম সিংহ রায় প্রশ্ন করেন, তদন্তের স্বার্থে সজল ঘোষের স্ত্রী, বাবা কিংবা মাকে সাক্ষী জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন কি না। সাক্ষী বলেন, না। ওই হত্যার পিছনে আর কোনও কারণ আছে বলে বিভাসবাবুর মনে হয় কি না তাও জানতে চাওয়া হলেও সাক্ষী বলেন, না। পরের প্রশ্ন, তদন্তকারী অফিসার হিসেবে প্রদীপ সাহাকে গ্রেফতার করলেন কী কারণে? সাক্ষী বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর-সহ অনান্য অভিযোগ ছিল। কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করার পরে ‘গ্রাউন্ড অফ অ্যারেস্ট’ দেখাতে হয়, এক্ষেত্রে কি লিখলেন? সাক্ষী জানান, কেস ডায়েরিতে এমন কিছু নেই।
প্রদীপবাবুর আইনজীবী এরপরে জানতে চান সজল ঘোষের মৃতদেহ ময়না-তদন্তে পাঠানোর জন্য সাক্ষী কোনও ‘মেমো’ তৈরি করেছিলেন কি না এবং দেহটি ক’টার সময়ে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছিল। সাক্ষী জানান, কেস ডায়েরিতে সময়ের উল্লেখ নেই। প্রতীমবাবু বলেন কোনও মৃতদেহ ময়না-তদন্তের জন্য পাঠালে যেখানে ময়নাতদন্ত হয় সেখান থেকে একটি শংসাপত্র দেওয়া হয়। তাতে লেখা থাকে, কখন মৃতদেহ ময়না-তদন্তের জন্য হাতে পেলেন এবং কখন তারা দেহটি ছাড়লেন। এ ক্ষেত্রে কী উল্লেখ ছিল? বিভাসবাবু জানান, সকাল ৮.১৫ মিনিটে দেহ তারা পেয়েছিলেন এবং ৯.০৫ মিনিটে ময়না-তদন্ত শেষে দেহ ছেড়ে দেন। আর দেহ ময়না-তদন্তের জন্য কখন বের হয়েছিল? উত্তর আসে, রাত ২.৫৫ মিনিটে। আইনজীবীর পরের প্রশ্ন, দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় সাক্ষী কি এমন কোনও নির্দেশ দিয়েছিলেন যে কোনওরকম দেরি করা যাবে না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছতে হবে। সাক্ষী বলেন, না। জেরা শেষে প্রতীমবাবু জানতে চান, চার্জশিটে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ (বি) ধারা দিয়েছেন সাক্ষী। সেটা কি বুঝে দিয়েছেন না কি কেউ বলে দিয়েছিল? সাক্ষীর জবাব, বুঝেই দিয়েছি। তাহলে কে এখানে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল? কারণ ১২০ (বি) ধারা মানে তো পরিকল্পনা করে হত্যা? উত্তরে সাক্ষী বলেন, অনেকজন আসামি ছিলেন তাই তিনি ওই ধারা দিয়েছেন।
এরপরে জেরা করতে ওঠেন আরেক আইনজীবী সামসুল ইসলাম মোল্লা। ঘটনার দিন রাতে কী ঘটেছিল, কে কে ছিলএ সমস্ত খুঁটিনাটি প্রশ্নের পরে তিনি বলেন, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে মৃতের পেটে পুরো হজম না হওয়া ভাতের কথা বলা হয়েছিল। এটা জানার পরে সাক্ষী কি সজল ঘোষের বাড়িতে বা তাঁর স্ত্রীকে মৃতের খাওয়ার বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন? সাক্ষী বলেন, না। সামসুল মোল্লা বলেন, সজল ঘোষের দেহে ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। সুরতহালের সময় সাক্ষী নিজে সেটা খুলেছিলেন। কিন্তু তাঁর কি কখনও মনে হয়নি যে ওই ব্যান্ডেজ বাড়িতে, পূর্বস্থলী হাসপাতালে বা অন্য কোথাও করা হয়েছিল? সাক্ষীর উত্তর না।
সব শেষে জেরা করতে ওঠেন আইনজীবী বিষ্ণুচরণ শীল। তিনি প্রথমে জানতে চান, ওই রাতে তিনি কেন হাসপাতালে গিয়েছিলেন। উত্তর, একটি মৃত্যুর খবর পেয়ে। কোনও সুনির্দিষ্ট কেস না কি অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে গিয়েছিলেন? সাক্ষী জানান, অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে গিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে কি কোনও ডায়েরি করেছিলেন? বিভাসবাবুর উত্তর, কেস ডায়েরিতে নেই। পরের প্রশ্ন, সেই রাতে হাসপাতালে পূর্বস্থলীর বিধায়ক, গৌতম ভট্টাচার্য ও আরও অনেকে হাজির ছিলেন। সাক্ষী তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন কি? উত্তর আসে না।
জেরার শেষ পর্বে বিষ্ণুচরণবাবু তদন্তকারীর সিজ করা রক্তের নমুনা, মৃতের পোশাক দেখিয়ে বলেন সেগুলিতে কোনও সিল এবং স্বাক্ষর নেই। সাক্ষী বলেন, হ্যা।ঁ আইনজীবী দাবি করেন, এগুলি কোনওটাই সজল ঘোষের পোশাক নয়। হাসপাতালে অমন রক্তমাখা তুলো যেখানে সেখানে পড়ে থাকে। সাক্ষী অবশ্য তা অস্বীকার করেন। এরপরেই এ দিনের মত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়ে যায়।
মৃত তিন
নিজস্ব সংবাদদাতা • বেলডাঙা
সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে মৃত্যু হল তিন জনের। শুক্রবার বিকেলে বেলডাঙা থানার হরেকনগর মাঠপাড়ায় ঘটনাটি ঘটেছে। মৃতদের নাম ইকবাল শেখ (২৬), ইমতাজ শেখ (২৮) ও মিরাজ শেখ (৪৫)। এদিন বিকেলে হরেকনগর মাঠপাড়ার বাসিন্দা ইকবাল নিজের বাড়িতে নবনির্মিত ৬ ফুট গভীর সেপটিক ট্যাঙ্কে নামেন। খানিকটা নেমে কাজ করার পর আর উঠতে পরছিলেন না তিনি। তারপর তাঁর ভাই ইমতাজ নামেন। দাদাকে তুলতে গিয়ে তিনিও জলে পড়ে যান। মারা যান তাঁদের এক পড়শিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy