ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের জেরে জেরবার সাগরদিঘি।
সামনেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। তার উপর গোটা ব্লক জুড়ে শুরু হয়েছে বোরো চাষ। কিন্তু প্রায় দিনই পাঁচ ছয় ঘণ্টা ধরে চলছে লোডশেডিং। যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সাধারণ মানুষ। কিন্তু বিদ্যুত্ দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন সাগরদিঘির সমস্যা মিটতে অন্তত মাস ছয়েক লাগবে। তাতেই তরতরিয়ে বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগ।
বিদ্যুত্কর্তাদের দাবি, গোটা সাগরদিঘি জুড়ে শুরু হয়েছে বোরো চাষ। সেই কারণে গভীর নলকূপ চালানোর জন্য আড়াই হাজারেরও বেশি স্থায়ী ও অস্থায়ী বিদ্যুত্ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই গত দু’মাস ধরে কার্যত বেহাল হয়ে পড়েছে বিদ্যুত্ সরবরাহ ব্যবস্থা। প্রতিদিনই গড়ে পাঁচ ছয় ঘণ্টা ধরে বন্ধ থাকছে বিদ্যুত্ সরবরাহ। সেচের বিদ্যুত্ সংযোগগুলি বন্ধ থাকছে দু’ঘণ্টা অন্তর অম্তর। স্থানীয় বাসিন্দা পরিতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগে তো লোডশেডিংয়ের কোনও সময় ছিল না। পরে পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে লোডশেডিং সকাল ও বিকেলে করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “রাজ্যে বিদ্যুত্ উত্পাদনের কোনও ঘাটতি নেই। অথচ সাগরদিঘিতে কেন এত লোডশেডিং সেটাই বুঝতে পারছি না।” মথুরাপুরের বাসিন্দা পেশায় চাষি এক্রামুল হক বলেন, “সবে ধানচারা লাগানো হয়েছে। তাই জলের দরকার তেমন পড়ছে না। সপ্তাহ তিনেক পরে যখন গাছে শিষ ধরবে তখন অনেক জলের দরকার পড়বে। কিন্তু এ ভাবে যদি লোডশেডিং চলতেই থাকে তাহলে খুব সমস্যায় পড়তে হবে।” কংগ্রেসের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, “জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বোরো চাষ হয় সাগরদিঘিতে। গত বছর ৬ হাজার হেক্টর জমিতে রেকর্ড ফলন হয়েছিল। কিন্তু যেভাবে লোডশেডিং হচ্ছে তাতে চাষিদের দুশ্চিন্তা স্বাভাবিক।”
তিনি জানান, ২০০৩ সাল থেকে সেচের জন্য পাম্প চালাতে অস্থায়ী বিদ্যুত্ সংযোগ দেওয়ার নিয়ম চালু করে রাজ্য সরকার। তখন চাষিকে ১২০ দিনের অস্থায়ী বিদ্যুত্ সংযোগের জন্য জমা দিতে হত মাত্র ৩৬০০ টাকা। ঠিক হয়েছিল প্রতি বছর তা ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়বে। কিন্তু ২০১৩ সালে একলাফে তা বাড়িয়ে ১১ হাজার টাকা করা হয়। গত বছর তা করা হয় ১৬৯২৫ টাকা। এ বছর তা বাড়িয়ে ১২৫ দিনের জন্য ২১ হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, “তার পরেও দু’ঘণ্টা অন্তর লোডশেডিং চলছে।” তবে বিদ্যুত্ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকারের ওই সিদ্ধান্ত বদলানোর এক্তিয়ার তাদের নেই। চাষিদের দাবির কথা জানিয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দেওয়া হবে। তার উত্তর না আসা পর্যন্ত নির্ধারিত হারেই টাকা জমা দিতে হবে চাষিদের।
সম্প্রতি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সাগরদিঘিতে বিদ্যুত্ দফতরের মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক অধিকর্তা, ডিভিসনাল ইঞ্জিনিয়ার ও দুই সহকারী ইঞ্জিনিয়ার যান। উপস্থিত ছিলেন সাগরদিঘির বিডিও। সেখানে তাঁদের চাষিদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। আঞ্চলিক অধিকর্তা পার্থপ্রতিম দত্ত জানান, সাগরদিঘিতে বিদ্যুতের সমস্যার সমাধানে কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই সাগরদিঘি সাবস্টেশনে একটি বাড়তি ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছে। রঘুনাথগঞ্জের উমরপুর ও গোকর্ণ থেকে সাগরদিঘি পর্যন্ত বিদ্যুত্ সরবরাহ লাইনের পুরনো তার বদলে মোটা গেজের তার লাগানো হচ্ছে। এছাড়াও মোড়গ্রামে ১.২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সাবস্টেশন তৈরির পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। সেটি তৈরি হলে সাগরদিঘির তেলাঙ্গল-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুত্ সরবরাহের কাজ আরও সহজ হবে। তিনি বলেন, “এতে সাগরদিঘি সাবস্টেশনের উপর চাপ কমবে। তাতে বিদ্যুতের সমস্যা কিছুটা হলেও মিটবে।” তবে সে জন্য মাস ছয়েক লাগবে বলে তিনি জানান।
বিদ্যুত্ দফতরের এক কর্তা জানান, সাগরদিঘিতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সাবস্টেশন তৈরি করা হবে। বর্তমান সাবস্টেশনের পাশেই নতুন সাবস্টেশনটি গড়া হবে। জমি পাওয়ার ব্যাপারে তাই স্থানীয় মানুষজনের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। জমির পাওয়া গেলে ২ বছরের মধ্যে তা তৈরি হয়ে যাবে। তাঁর কথায়, “তখন সাগরদিঘিতে বিদ্যুতের কোনও সমস্যাই থাকবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy