Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বাসুদেবের জন্যও পুস্তিকা প্রকাশ সিপিএমের

‘এ বার কঠিন লড়াই’কথাটা সিপিএমের বিদায়ী সাংসদেরই। তাই এত দিন যা করার দরকার পড়েনি, সেটাও এ বার করতে হচ্ছে সিপিএমকে। বাঁকুড়ার টানা ন’বারের সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া রঘুনাথপুর বিধানসভা অঞ্চলের উন্নয়নে কী কী কাজ করেছেন, সে-সবের বিশদ বিবরণ ও ছবি সংবলিত পুস্তিকা ছাপিয়ে ভোট প্রচারে নামতে হয়েছে পুরুলিয়া জেলা সিপিএমকে।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৪ ০০:৪১
Share: Save:

‘এ বার কঠিন লড়াই’কথাটা সিপিএমের বিদায়ী সাংসদেরই। তাই এত দিন যা করার দরকার পড়েনি, সেটাও এ বার করতে হচ্ছে সিপিএমকে।

বাঁকুড়ার টানা ন’বারের সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া রঘুনাথপুর বিধানসভা অঞ্চলের উন্নয়নে কী কী কাজ করেছেন, সে-সবের বিশদ বিবরণ ও ছবি সংবলিত পুস্তিকা ছাপিয়ে ভোট প্রচারে নামতে হয়েছে পুরুলিয়া জেলা সিপিএমকে। যা গত ন’বারের লোকসভা ভোটে কখনও করতে হয়নি ৩৪ বছর এ রাজ্য শাসন করা সিপিএমকে। ওই রঙিন পুস্তিকায় রয়েছে বিদায়ী সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের অর্থে রঘুনাথপুর বিধানসভা এলাকার তিনটি ব্লকে কী কী কাজ হয়েছে, তার খতিয়ান। পাশাপাশি রয়েছে রঘুনাথপুরের শিল্পায়নে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের ‘ব্যর্থতা’র প্রসঙ্গ। একই ভাবে সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের উদ্যোগে শুধু বাঁকুড়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে আলাদা একটি পুস্তিকা। তাতে থাকছে দীর্ঘদিন সাংসদ থাকা বাসুদেববাবুর বাঁকুড়ার জন্য উন্নয়নের ফিরিস্তি।

ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে পাঁচটিই রয়েছে তৃণমূলের দখলে। এ ছাড়াও, পোড় খাওয়া সিপিএম সাংসদের বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করেছে অভিনেত্রী মুনমুন সেনকে। পরের পর রোড-শো তো করছেনই, টলিউডের তারকাদের নিয়ে এসেও জোরদার প্রচার শুরু করেছেন মুনমুন। নিয়ম করে প্রতিটি সভাতেই তৃণমূল, বিজেপি এবং কংগ্রেস দাবি করছে, দীর্ঘদিন সাংসদ থেকেও বাসুদেববাবু এলাকার উন্নয়নে ব্যর্থ। এর জবাব দিতেই উন্নয়নের খতিয়ান ছাপিয়ে প্রচারে যেতে হয়েছে দুই জেলার সিপিএম নেতৃত্বকে। সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ রায় বলেন, “বিরোধীদের অপপ্রচারের জবাব দিতেই রঘুনাথপুর এলাকায় আমাদের সাংসদ কী উন্নয়ন করেছেন, তার বিশদ বিবরণ সহ পুস্তিকা ছাপিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন আমাদের কর্মীরা।” আগের নির্বাচনে সিপিএম পুস্তিকা করলেও তা ছিল আদ্যপান্ত রাজনৈতিক বক্তব্যে ঠাসা। জাতীয় ও রাজ্য স্তরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছিল সেখানে। কিন্তু এ বারের পুস্তিকায় রাজনৈতিক বক্তব্যর চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে এলাকার উন্নয়নে বাসুদেববাবুর ভূমিকা।

কী রয়েছে এই পুস্তিকায়?

‘সাংসদ এলাকা উন্নয়ন ও বাসুদেব আচারিয়া’ শীর্ষক একটি পাতায় দেওয়া হয়েছে রঘুনাথপুরের তিনটি ব্লক নিতুড়িয়া, রঘুনাথপুর এবং সাঁতুড়িতে সাংসদ এলাকা উন্নয়ন তহবিলে বিদায়ী সাংসদ কী কী কাজ করেছেন। রঘুনাথপুরে শিল্পায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই। যার অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন বাসুদেব আচারিয়া। পুস্তিকায় সিপিএম দাবি করেছে, বাম আমলে যে-সব শিল্প-সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, তা তৃণমূল সরকারের উদাসীনতায় বাতিল হতে বসেছে। অভিযোগ করা হয়েছে, বিভিন্ন বড় শিল্পসংস্থা জমি পাওয়ার পরেও কারখানা গড়তে পারছে না রাজ্য সরকারের নেতিবাচক ভূমিকার জন্য। এলাকার শিল্পের পরিকাঠামো উন্নয়নে রঘুনাথপুর শহরে চার লেনের রাস্তা নির্মাণে সাংসদের ভূমিকাও ঠাঁই পেয়েছে পুস্তিকায়।

বাসুদেববাবুর কথায়, “রঘুনাথপুরে আমরা শিল্পায়নের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছিলাম। তিনটি ইস্পাত কারখানা এবং ডিভিসি-র বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জমি নেওয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্যা মেটাতে বারবার সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছ। অথচ এখন এই উদ্যোগটাই অনুপস্থিত। আবার সভা হলেও সাংসদকে ডাকা হয় না।” তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের সরকারের কোনও শিল্প নীতি নেই বলেই রঘুনাথপুরে সম্ভবনা থাকা সত্ত্বেও শিল্প হচ্ছে না।

তবে সিপিএমের এই পুস্তিতাকে ‘মিথ্যাচার’ বলে পাল্টা কটাক্ষ করছে তৃণমূল। রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির দাবি, “দীর্ঘ তিন দশক সাংসদ আছেন বাসুদেবাবু। আর তালিকায় রয়েছে মাত্র ৪১টি প্রকল্পের খতিয়ান। সাংসদ উন্নয়ন তহবিলের টাকায় বাসুদেববাবু উন্নয়নের কাজ করতে যে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন, তা পুস্তিকার পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট।” শিল্পায়ন নিয়ে সিপিএমকে বিঁধে বিধায়ক বলেন, “বাম আমলে কিছু সংস্থাকে ধরে বেঁধে এলাকায় এনে শিল্প করার নামে এখানকার জমি মালিকদের প্রতারিত করেছে সিপিএম। আমাদের শিল্পমন্ত্রী ওই সংস্থাগুলিকে বারবার ডেকে কারখানা গড়ার কথা বললেও ওরা কারখানা গড়তে চাইছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

subhraprakash mondol raghunathpur basudev acharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE