যাদবপুর কাণ্ডের জেরে বাম মোর্চা ছাত্র সংগঠনের ডাকা ছাত্র ধর্মঘটের সমর্থনে লেখা পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বহরমপুর কলেজের অধ্যক্ষ সমরেশ মণ্ডলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সকালে বহরমপুর কলেজ গেটের সামনের দেওয়ালে ধর্মঘটের সমর্থনে পোস্টার লাগায় বাম মোর্চা ছাত্র সংগঠন। অভিযোগ, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ কলেজে ঢোকার সময়ে ওই পোস্টার দেখতে পেয়ে অধ্যক্ষ নিজের হাতে ওই পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন এবং গেটের তালা খুলে তিনি কলেজে ঢোকেন। পরে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বহরমপুর থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছে এসএফআই। এসএফআইয়ের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “কোনও রাজনৈতিক দলের পোস্টার-ব্যানার ছেঁড়ার অধিকার কারও নেই। নিজে হাতে ওই পোস্টার ছিঁড়ে অধ্যক্ষ নিজেকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক বলে পরিচয় দিলেন। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে বহরমপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।” তাঁর অভিযোগ, “ওই ঘটনার প্রতিবাদে আমাদের কর্মী-সমর্থকরা মিছিল করে গিয়ে কলেজের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। তখন অধ্যক্ষের নির্দেশে কলেজের ভেতর থেকে তৃণমূলের সমর্থক-ছাত্ররা পাল্টা স্লোগান দেয়। পুলিশকেও ডেকে পাঠায় অধ্যক্ষ এবং পুলিশ কলেজের সামনে ব্যারিকেড গড়ে তোলে।”
অধ্যক্ষ সমরেশবাবু অবশ্য বলেন, “সম্প্রতি সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে কলেজের দেওয়ালে পোস্টার সাঁটানো যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অমান্য করায় আমি পোস্টার ছিঁড়ে দিয়েছি। সেই সময়ে কলেজ গেটের সামনে ধর্মঘটকারী দু’তিন জন দূরে দাঁড়িয়েছিল। তারা আমাকে কলেজের মধ্যে ঢুকতে নিষেধও করে। কিন্তু ‘গেটে ঢোকার মুখে বাধা না পেলে আমি কলেজে ঢুকব’ বলে কলেজে ঢুকেছি। ছাত্রছাত্রীও এসেছিল। ফলে ক্লাসও হয়েছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি রাজা ঘোষের অভিযোগ, “বহরমপুর কলেজে এসএফআই অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছিল। গেটের সামনে তারা স্লোগান দিচ্ছিল, তখন আমাদের কর্মী-সমর্থক কলেজ ছাত্ররাও তার পাল্টা স্লোগান দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যায়টা কোথায়?”
তবে ছাত্র ধর্মঘটে কৃষ্ণনাথ কলেজের দিবা বিভাগে ছাত্রছাত্রী হাজির না হওয়ায় এ দিন সোয়া ১১টা থেকে কলেজের কলা ও বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিটি ক্লাস ‘সাসপেন্ডেড’ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করায় তৃণমূলের ছাত্রপরিদ ওই কলেজ অধ্যক্ষের উপরে ব্যাপক চটেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি রাজাবাবু বলেন, “ভারপ্রাপ্ত কলেজ অধ্যক্ষ ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারেন না। কোনও ছাত্রছাত্রী কলেজে উপস্থিত না থাকলে ক্লাস হবে না। কিন্তু ক্লাস না হওয়ায় কলেজ অধ্যাপকরা বাড়ি চলে যাবেন, তাও মানা যায় না। ওই বিষয়ে আলোচনার জন্য অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে ‘ক্লাস সাসপেন্ডেড’ বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারেন না বলে জানায়। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেননি। পরে ওই বিষয়ে বহরমপুরের মহকুমাশাসকের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছি।” কলেজ অধ্যক্ষ কল্যাণাক্ষ ঘোষ বলেন, “প্রাতঃবিভাগে ছাত্রছাত্রী এসেছিল। ফলে ক্লাসও হয়েছে। কিন্তু দিবা বিভাগের বিভিন্ন ক্লাসে ছাত্রছাত্রী অনুপস্থিত ছিল। তাই কলেজের বিভিন্ন শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে ওই সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূলত প্রশাসনিক কারণেই দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা ওই সিদ্ধান্ত এ দিন কার্যকরী করেছি। এজন্য আমি কারও কাছে কোনও কৈফিয়ৎ দেব না। আমি ভাল মনে করেছি, তাই প্রশাসনিক কারণে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
অন্য দিকে নদিয়ায় ছাত্র সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটে বন্ধ ছিল বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ দিন পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী কৃষ্ণনগরের পোস্ট অফিস মোড়ে যাদবপুরের উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করে ছাত্র পরিষদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy