Advertisement
E-Paper

বয়ান ধরে জেরায় দ্বন্দ্ব দেখালেন আইনজীবী

চার দিন জেরার পরে নবদ্বীপের অতিরিক্ত ও সেশন জজ সুধীর কুমারের আদালতে সজল ঘোষ হত্যা-মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার বিভাস সেনের সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হল মঙ্গলবার। ওই অফিসারের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি রাতে নবদ্বীপ প্রতাপনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তৃণমূল নেতা সজল ঘোষকে খুনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পূর্ণ হল।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৪ ০১:১৬

চার দিন জেরার পরে নবদ্বীপের অতিরিক্ত ও সেশন জজ সুধীর কুমারের আদালতে সজল ঘোষ হত্যা-মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার বিভাস সেনের সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হল মঙ্গলবার। ওই অফিসারের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি রাতে নবদ্বীপ প্রতাপনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তৃণমূল নেতা সজল ঘোষকে খুনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পূর্ণ হল। এ দিনও দীর্ঘ ক্ষণ ধরে সাক্ষীকে জেরা করেন অভিযুক্তদের দুই আইনজীবী। ভিড়ে ঠাসা আদালতে দুপুর সওয়া ২টো নাগাদ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। কালো ফুলপ্যান্ট এবং সাদা হাফ শার্ট পরে কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সিপিএম নেতা তথা পূর্বস্থলীর স্কুলশিক্ষক প্রদীপ সাহা।

এ দিন জেরার শুরুতেই আইনজীবী প্রতীম সিংহরায় তদন্তকারী অফিসার বিভাস সেনের কাছে জানতে চান, ঘটনার রাতে যাঁরা সজলবাবুকে ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের পোশাক তিনি ‘সিজ’ করেছিলেন কি না, এবং তাঁদের কেউ বিভাসবাবুকে জানিয়ে ছিল কি না যে, তাঁদের পোশাকে মৃতের রক্ত লেগেছিল। দু’টি প্রশ্নের উত্তরেই তদন্তকারী ‘না’ বলেন। তখন আইনজীবী জানতে চান, সৌভিক আইচ এবং হালিম শেখকে তদন্তকারী কখন জেরা করেন। বিভাসবাবু জানান, রাত সওয়া ২টো নাগাদ। যে রাতে ঘটনা তার পর দিন সকালে সাক্ষী ঘটনাস্থলে আবার গিয়েছিলেন কি না এবং সেখানে গিয়ে রক্তের কোনও দাগ কোথাও পেয়েছিলেন কি না, তা জানতে চাইলে তদন্তকারী উত্তর দেন, “না”।

প্রতীমবাবু এর পরে সাক্ষীর উদ্দেশে বলেন, “এখন তো রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে বোঝা যায় যে রক্তটি কারমানুষের, পাখির না অন্য কোনও প্রাণীর।” সাক্ষী বলেন, “হ্যা।”ঁ আইনজীবীর পরের বক্তব্য, “আপনি হাসপাতাল থেকে তুলোয় করে যে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন মৃতের পোশাকের, তা আদৌ সজল ঘোষের নয়।” সাক্ষী বলেন, “এ কথা ঠিক নয়।” তাঁর কাছে এর পরে জানতে চাওয়া হয়, সেই রাতে তিনি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে কি জানতে চেয়েছিলেন, ওই রক্ত সজল ঘোষের শিরা না কি ধমনীর রক্ত। সাক্ষী জানান, তিনি জানতে চাননি। সেই রাতে যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন বলে তদন্তকারী এফএইআরে উল্লেখ করেছেন, তাঁরা সকলেই কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের কর্মী বা নেতা কি না, আইনজীবীর এই প্রশ্নের উত্তরে তদন্তকারী অফিসার বলেন, “সকলে নন। কয়েক জন অরাজনৈতিক ব্যক্তিও আছেন।” তাঁরা কারা জানতে চাওয়া হলে সাক্ষী বলেন, “নিমাই মিত্র, পবিত্রকুমার করন বা জীবেশ চক্রবর্তী।” নিমাই মিত্রের সঙ্গে সজল ঘোষের সম্পর্ক কী জানতে চাইলে সাক্ষী বলেন, “কেস ডায়েরিতে নেই।” প্রতীমবাবু তাঁর জেরার শেষে বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই এই মামলা করা হয়েছে।” সাক্ষী বলেন, “এ কথা ঠিক নয়।”

এর পরে জেরা শুরু করেন অপর আইনজীবী বিষ্ণুপ্রসাদ শীল। তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে সাক্ষীকে জেরা করে জানতে চান, এই মামলায় আদালতে বিভিন্ন সময়ে যাঁরা সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন, তদন্তকারী অফিসার যখন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন তখনও তাঁরা একই কথা বলেছিলেন কি না। মামলার মোট ছ’জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর বক্তব্য আলাদা ভাবে ধরে ধরে তদন্তকারীকে জেরা করেন বিষ্ণুপ্রসাদবাবু।

প্রথমেই বিষ্ণুপ্রসাদবাবু তদন্তকারী অফিসারের কাছে জানতে চান, সৌভিক আইচ তাঁকে কি বলেননি, ঘটনার রাতে নবদ্বীপ প্রতাপনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স গ্যারেজের সামনের পাকা রাস্তার উপরে রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে সজল ঘোষ খুন হয়েছিলেন। সাক্ষী বলেন, “না।” এর পরে আইনজীবী একের পর এক প্রশ্ন করেন, সৌভিক আইচ কি বলেননি যে খুনের সময়ে তিনি হাসপাতালের গেটের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, বলেননি যে যেখানে সজল ঘোষ খুন হয়েছিলেন তার থেকে ২০ হাত দূরে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন, খুন হওয়ার ঠিক আগে সজল ঘোষ সৌভিকের সঙ্গে হাসপাতালের দোতলা থেকে একতলায় নেমে আসেন তা কি বলেননি, কিংবা এটাও বলেননি যে গেটের কাছে এসে সজল ঘোষ এগিয়ে যান সামনের দিকে আর হাতে স্যালাইনের চ্যানেল থাকায় সৌভিককে গেটের বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি, যেখানে সৌভিক দাঁড়িয়েছিলেন সেখান থেকে ঘটনাস্থল দেখা যায়তা-ও কি বলেননি। প্রতি প্রশ্নের জবাবে সাক্ষীর উত্তর ছিল, “না।” এর পরে বিষ্ণুপ্রসাদবাবু তদন্তকারী অফিসারের উদ্দেশ্যে বলেন, তাঁর জিজ্ঞাসাবাদের সময় সৌভিক আইচ কি বলেননি যে তিনি আহত হয়ে নবদ্বীপ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় অন্যদের সঙ্গে পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়ও তাঁকে দেখতে ওই রাতে হাসপাতালে এসেছিলেন। সাক্ষীর উত্তর, “বলেননি।” আইনজীবী আবার প্রশ্ন করেন, সৌভিক কি বলেননি যে তিনি দেখেছিলেন গুলি খেয়ে সজল ঘোষ মাটিতে পড়ে গেলেন। উত্তর, “না।” সাক্ষীকে পরের প্রশ্ন, সৌভিক এ কথাও কি বলেননি যে, গুলির পরে প্রদীপ সাহা এবং এক জন অচেনা লোক মোটরবাইকে চড়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান। সাক্ষীর উত্তর, “না।”

এই ভাবে বিষ্ণুপ্রসাদবাবু মামলার তদন্তকারী অফিসারকে মামলার প্রত্যেক প্রত্যক্ষদর্শীদের (যেমন, সৌভিক আইচ, হালিম শেখ, গৌতম নাথ, ফজলুল হক মণ্ডল,কাজল শেখ প্রমুখ) আদালতে দেওয়া বয়ান ধরে ধরে প্রশ্ন করতে থাকেন। বয়ানের দ্বন্দ্ব আদালতের সামনে তুলে ধরেন। বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তরেই তদন্তকারী অফিসার জানান, তাঁর কাছে সাক্ষী সে কথা বলেননি।

জেরার শেষ পর্বে বিষ্ণুপ্রসাদবাবু সাক্ষীর কাছে জানতে চান, সেই রাতে তদন্ত করার জন্য সাক্ষী কি ঘটনাস্থলে কোনও জোরাল আলোর বন্দোবস্ত করেছিলেন। সাক্ষী বলেন, “না।” সব শেষে আইনজীবী বলেন, “তদন্তকারী অফিসার কোনও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে এই মামলার তদন্ত করেছেন। সত্যি করে তদন্ত করলে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের এই মামলায় অভিযুক্তই করা যেত না।” তদন্তকারী অফিসার বলেন, “এ কথা ঠিক নয়।” এর পরেই শুনানি শেষ হয়ে যায়।

debasish bandyopadhyay nabadwip sajal ghosh murder case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy