Advertisement
০৯ মে ২০২৪

ভাঙনে গিলেছে রাস্তা, তলিয়ে মৃত্যু ছাত্রের

ভাগীরথীর ভাঙনে ক্রমশ সরু হয়ে যাচ্ছিল রাস্তাটা। যে কোনও সময় অঘটন ঘটতে পারে বলে গ্রামবাসীরা তাঁদের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছিলেন প্রশাসনকে। কিন্তু প্রশাসনের টনক নড়েনি। আর রবিবার দুপুরে গ্রামবাসীদের সেই আশঙ্কাটাই সত্যি হয়ে গেল! ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ের ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে ভাগীরথীতে তলিয়ে গেল পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র। মৃতের নাম পরেশ চৌধুরী (১১)। বাড়ি বহরমপুরের নওদা ভীমেশ্বর গ্রামে।

এখানেই দুর্ঘটনা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

এখানেই দুর্ঘটনা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১৬
Share: Save:

ভাগীরথীর ভাঙনে ক্রমশ সরু হয়ে যাচ্ছিল রাস্তাটা। যে কোনও সময় অঘটন ঘটতে পারে বলে গ্রামবাসীরা তাঁদের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছিলেন প্রশাসনকে। কিন্তু প্রশাসনের টনক নড়েনি। আর রবিবার দুপুরে গ্রামবাসীদের সেই আশঙ্কাটাই সত্যি হয়ে গেল! ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ের ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে ভাগীরথীতে তলিয়ে গেল পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র। মৃতের নাম পরেশ চৌধুরী (১১)। বাড়ি বহরমপুরের নওদা ভীমেশ্বর গ্রামে।

রবিবার দুপুরে বাবার জন্য খাবার নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল পরেশ। ভাঙনে জীর্ণ ভাগীরথীর পাড় ধরে সাইকেলে যাওয়ার সময় বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সাইকেল-সহ নদীতে পড়ে যায় সে। ভাগীরথীতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট পরে পরেশকে উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের সদর বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরেশের বাবা শ্রীনাথবাবু ভাগীরথীতে নিয়াল্লিশপাড়া থেকে ফরাসডাঙা ঘাটে নৌকা চালান। এ দিন দুপুরে সুদর্শন চক্র বয়েজ হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র পরেশ বাড়ি থেকে বাবার জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিল। পাড় ধরে সাইকেলে যাওয়ার সময়ে আচমকা ভাগীরথীতে পড়ে যায় ওই বালক। শ্রীনাথবাবু বলছেন, “কী করে যে এমন হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। ও তো ভাল সাঁতারও জানত।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জল থেকে ওই ছাত্রকে যখন উদ্ধার করা হয় তখন সাইকেলে তার একটা পা আটকেছিল। অনেকেরই অনুমান, পা সাইকেলে আটকে যাওয়ার কারণেই সাঁতার জানা সত্ত্বেও সে হয়তো কিছু করতে পারেনি।

একাংশ গ্রামবাসী আবার এই দুর্ঘটনার জন্য ভাগীরথীর ভাঙনকে দায়ী করছেন। এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ সিপিএমের স্বপন দত্ত বলেন, “ভাগীরথীর পশ্চিম পাড় লাগোয়া ফরাসডাঙা ঘাট থেকে নিয়াল্লিশপাড়া-গোয়ালজান হয়ে ভীমেশ্বর মন্দির যাওয়ার প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। ভয়াবহ ভাঙনে ৮ ফুট চওড়া ওই রাস্তা এখন পায়ে চলা পথে এসে ঠেকেছে। বিপজ্জনক অবস্থায় প্রতি দিন যাতায়াত করছেন এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা। সন্ধ্যার পরে ওই রাস্তা মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনকে জানিয়েও ফল হয়নি।”

ভাগীরথীর পাড় বরাবর ওই রাস্তার উপরে নির্ভরশীল ডাহাপাড়া, রানিশ্বর, ভীমেশ্বর, বিনপাড়া, খোশবাগ, নারকেলবাগান, ভট্টমাটি গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা। প্রতি দিন ভ্যান-রিকশা বা সাইকেল বোঝাই করে কাঁচা সব্জি নিয়ে ফরাসডাঙা ঘাট পেরিয়ে বহরমপুরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রির জন্য আসেন এলাকার বাসিন্দারা। পাড় ভাঙার ফলে সব্জি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তাঁরা অসুবিধার মুখে পড়েছেন। একই কারণে দৈনন্দিন কাজের জন্য বহরমপুরে আসা এলাকাবাসীও দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন।

ডাহাপাড়ার বাসিন্দা সেলিম শেখের অভিযোগ, “ভাঙন ঠেকাতে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ছ’মাস আগে ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে অসতর্কতায় এক যুবক ১৫-২০ ফুট নিচে পড়ে ভাগীরথীতে তলিয়ে যায়। এখনও সন্ধ্যার পরে ঝুঁকি নিয়ে ওই পথ দিয়েই এলাকাবাসী হাঁটাচলা করছেন। ভাঙন ঠেকানোর আগে অবিলম্বে পাড় বরাবর রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া উচিত।”

যদিও এর আগে সেচ দফতর ভাগীরথীর পশ্চিমপাড় বরাবর ফরাসডাঙা ঘাট থেকে রাধারঘাট পর্যন্ত বোল্ডার ফেলে ভাঙন রোধ করে। কিন্তু ওই পশ্চিমপাড় বরাবর ফরাসডাঙা থেকে ভীমেশ্বর মন্দির যাওয়ার দেড় কিমি রাস্তার ভাঙন ঠেকাতে জেলা সেচ দফতর কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা শুকদেব ঘোষ বলেন, “ভাঙন ঠেকাতে সেচ দফতর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে প্রতি দিন ভাঙছে ভাগীরথীর পাড়। ওই পাড় বরাবর ৮ ফুট চওড়া রাস্তা দিয়ে আগে যেখানে ভ্যান-রিকশা যাতায়াত করত, এখন সেখানে দিয়ে সাইকেল নিয়েও হেঁটে যাওয়া যাচ্ছে না।”

সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার স্বপনকুমার সাহা বলেন, “ভাঙনের ফলে রাস্তা ছোট হয়ে যাওয়ায় যাতায়াত বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। সরকারি ভাবে জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা চওড়া করার প্রয়োজন রয়েছে। জমি পাওয়া না গেলে ভাঙন ঠেকাতে যত প্রকল্প গ্রহণ করা হোক না কেন, কিছু হবে না। ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করার সময়ে ব্লক প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে এলাকার এক জন জমির মালিকের কাছ থেকে কিছুটা জমি পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

berhampur bhagirathi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE