ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্র দেখালেই দোকানে ছাড়গত বার নদিয়া জেলা প্রশাসনের এই পদক্ষেপে ভাল সাড়া মিলেছিল। ষোড়শ সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের আরও বেশি করে বুথমুখো করে তুলতে এ বার ফের কিছু পদক্ষেপ করছে নদিয়া জেলা প্রশাসন। এই প্রথম তৈরি করা হয়েছে ভোটের ‘ম্যাসকট’। ধুতি-পাঞ্জাবি পরা আদর্শ বাঙালি ‘মৃগবাবু’কে ব্যবহার করা হবে প্রচার কাজে। এ ছাড়াও জেলার রেশন দোকানের সামনে ভোট চেয়ে সাঁটানো হবে রঙিন পোস্টার। গ্যাসের সিলিন্ডারের গায়েও সাঁটানো হবে ভোট দেওয়ার আবেদনপত্র। আলাদা করে একটি তথ্যচিত্রও বানিয়েছে নদিয়া জেলা প্রশাসন। স্থানীয় কেবল চ্যানেলগুলিতে ভোটের আগে তা সম্প্রচার করা হবে। আরও আছে গান, পথনাটিকাপ্রচারের কোনও মাধ্যমই বাদ রাখেনি জেলা প্রশাসন।
নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “গত বিধানসভা ভোটে জেলার প্রায় ৫ লক্ষ ভোটার ভোটদানে বিরত ছিলেন। এর মধ্যে লাখ দু’য়েক শারীরিক অসুস্থতা বা জরুরি কারণে ভোট দেননি। বাকি প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটার কোনও কারণ ছাড়াই ভোট দানে বিরত ছিলেন। আমরা চাই এ বার তাঁরা সকলে ভোটের লাইনে দাঁড়াক।” তার জন্য কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, বুধবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বিস্তারিত ভাবে জানান জেলাশাসক। তিনি বলেন, “ভোটের হার বাড়াতে দেশ জুড়ে নির্বাচন কমিশন নানা কাজ করছে। তারই পাশাপাশি আমরা ম্যাসকট বানানো, তথ্যচিত্র সম্প্রচার-সহ বেশ কিছু নিজস্ব পদক্ষেপ করছি। আশা করি গণতন্ত্রের বৃহত্তম উত্সবে জেলার সমস্ত বাসিন্দা সামিল হবেন।”
এমনিতে নদিয়ায় ভোটের হার উর্ধ্বমুখী। বছর তিনেক আগের বিধানসভা ভোটে ৮৪.৫২ শতাংশ ভোট পড়েছিল। শেষ লোকসভা ভোটে অর্থাত্ ২০০৯ সালে ভোটদানের হার ছিল ৮৭.৬৫। জেলার ১৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার বুথ রয়েছে। এর মধ্যে হাজারখানেক বুথে গত বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল বেশ আশাব্যঞ্জকপ্রায় ৯০ শতাংশের উপরে। কিন্তু জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ৪৫০টি বুথে ভোটদানের হার ছিল নিম্নমুখী৭০ শতাংশের নীচে। জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, ‘‘আমরা ওই বুথগুলিকে নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করেছি। ওই বুথগুলির ভোটাররা যাতে বেশি সংখ্যায় ভোট দেন তা নিশ্চিত করা হবে।’’ জেলাশাসক জানান, বিভিন্ন সরকারি দফতর, রাস্তা-ঘাট, বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এমনকী শিয়ালদহ-লালগোলা প্যাসেঞ্জার ট্রেনের কামরায় ভোটের আবেদনপত্র সাঁটিয়ে প্রচারের পরিকল্পনা চলছে। ইতিমধ্যে একটি নতিদীর্ঘ তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়াও ‘প্রত্যেকে ভোট দিন’ শীর্ষক একটি পথনাটিকা প্রদর্শিত হবে জনবহুল এলাকাগুলিতে। তৈরি করা হয়েছে ভোটের থিম গান। যা বিভিন্ন জায়গায় বাজানোর পাশাপাশি মোবাইলের ‘কলার টিউন’ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। নির্বাচন কমিশনের চারটি ট্যাবলো শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরবে। ভোট দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে বিশদে জানাতে ইতিমধ্যেই জেলার ৩০০০টি জায়গায় ‘নকল ইভিএম’-এর প্রদশর্নী হয়েছে।
তবে একটা ধন্দ থেকেই যাচ্ছে। পিছিয়ে পড়া জেলা নদিয়ার একটা বড় সংখ্যক ভোটার ভিন্ রাজ্যে বা ভিন্ দেশে খাটতে যান। ভোটে তাঁদের বুথমুখো করা নিয়ে জেলা প্রশাসনের সুনির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা শোনা গেল না চল্লিশ মিনিটের সাংবাদিক বৈঠকে।