Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ভোটের পরেও ডোমকলে ‘অচেনা শান্তি’

এ যেন অন্য ডোমকল। ভোটের আগে অশান্তি নেই। ভোট মিটলও বড় কোনও গণ্ডগোল ছাড়া। আর এখন একেবারেই নিস্তরঙ্গ মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সবচেয়ে বেশি উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাটি। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলই নাকি ‘উদাসীন’ করেছে তাকে। জেতা আসন মুর্শিদাবাদ হারিয়ে কার্যত মুষড়ে পড়েছে কংগ্রেস। রাজ্য জুড়ে জয়-জয়কার হলেও মুর্শিদাবাদে তৃণমূল দাঁড়িয়ে তৃতীয় স্থানে। অন্য দিকে জয়ী হলেও সিপিএম রাজ্য তথা দেশ জুড়ে বামফ্রন্টের সার্বিক বিপর্যয়ে হতাশ।

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০০:৪৪
Share: Save:

এ যেন অন্য ডোমকল।

ভোটের আগে অশান্তি নেই। ভোট মিটলও বড় কোনও গণ্ডগোল ছাড়া। আর এখন একেবারেই নিস্তরঙ্গ মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সবচেয়ে বেশি উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাটি। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলই নাকি ‘উদাসীন’ করেছে তাকে। জেতা আসন মুর্শিদাবাদ হারিয়ে কার্যত মুষড়ে পড়েছে কংগ্রেস। রাজ্য জুড়ে জয়-জয়কার হলেও মুর্শিদাবাদে তৃণমূল দাঁড়িয়ে তৃতীয় স্থানে। অন্য দিকে জয়ী হলেও সিপিএম রাজ্য তথা দেশ জুড়ে বামফ্রন্টের সার্বিক বিপর্যয়ে হতাশ। সব মিলিয়ে উচ্ছ্বাস নেই কোনও রাজনৈতিক দলের। নেই বিজয় মিছিল, বাজি ফাটানো বা এই সব ঘিরে গণ্ডগোল। এসডিপিও অরিজিৎ সিংহ বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর ভোট নিয়ে কোনও রকম অভিযোগ হয়নি থানায়। আমাদের কাছেও গণ্ডগোলের খবর আসেনি।”

অথচ এই ডোমকলই এক সময় নিত্য খবরের শিরোনামে উঠে আসত হিংসা-সন্ত্রাসের ঘটনায়। বিশেষ করে ভোট এলেই আতঙ্ক ছড়াত গোটা এলাকায়। ২০০৮ সালের গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ডোমকলে খুন হয় ১৪ জন। ভোটের সময় ডোমকলের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় আলাদা ভাবে তৈরি থাকতে হত পুলিশকে। বিশেষত ফলপ্রকাশের দিনগুলিতে ডোমকল নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগে থাকত জেলা প্রশাসন। রাজনৈতিক দাদাগিরি সামাল দিতে পুলিশকে মাইক ফুঁকে টহল দিয়ে বেড়াতে হত পাড়ায়-পাড়ায়। এ বার সে সব কিছুই নেই। চায়ের দোকান থেকে গ্রামের মাচা ভোটের ফল প্রকাশের দিনও কোথাও কোনও অশান্তি নেই। এমনটা হল কী ভাবে?

কেউ মনে করছেন রাজ্য-রাজনীতিতে পালাবদলে বদলেছে ডোমকল। কেউ মনে করছেন, গত কয়েক বছরে পুলিশ-প্রশাসন কড়া হাতে রাজনৈতিক সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলেই এমনটা সম্ভব হয়েছে। তবে এবারের ‘আপাতশান্তি’র জন্য বিচিত্র রাজনৈতিক সমীকরণকেই সকলে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

ডোমকলের বিধায়ক তথা প্রবীণ সিপিএম নেতা আনিসুর রহমান যেমন আক্ষেপের সুরে বলেন, “কারও মনে সুখ নেই। ফলে আনন্দ, উচ্ছাস, আবেগও নেই। আর যত গণ্ডগোলের গোড়া হচ্ছে ওই আবেগ, উচ্ছাস। জয়ের আবেগে পটকা ফাটায়, বিরোধীদের বাড়ির সামনে গিয়ে নাচানাচি করে স্থানীয় কর্মী-সমর্থকরা। তা থেকেই শুরু হয় গোলমাল। ক্রমশ তা বিরাট আকারে ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। দীর্ঘদিনের রাজনীতি জীবনে এমনটাই দেখেছি ডোমকলে।”

ডোমকল মহকুমার তৃণমূল নেতা মোহিত দেবনাথও স্বীকার করেছেন রাজনৈতিক সমীকরণই এই শান্তিপূর্ণ আবহাওয়া তৈরি করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘এমনটাই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এর আগে নির্বাচনের সময় বারবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ডোমকল। অজস্র প্রাণহানি হয়েছে। সেখানে এবার সাধারণ মানুষ অনেকটাই স্বস্তিতে।”

তবে কংগ্রেস নেত্রী শাওনি সিংহ ডোমকলের এবারের সুশৃঙ্খলার জন্য প্রশাসনকেই ধন্যবাদ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজনৈতিক সমীকরণ একটা বিষয় হলেও প্রশাসনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে এমন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব হত না। শুধু ফল ঘোষণার দিনই নয় গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়া ছিল শান্তিপূর্ণ। গত গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনেও শান্ত ছিল ডোমকল।” পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা থেকে কর্মীদেরও বোধোদয় হয়েছ বলে তিনি মনে করছেন।

ডোমকলে শুভবুদ্ধির উদয়কে স্বাগত জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ সাদের আলি সমস্ত অশান্তির জন্য রাজনৈতিক নেতাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলেন, ‘‘নেতারা যত নিষ্ক্রিয় হবে ডোমকলের ততই মঙ্গল। এখানকার মানুষ খারাপ নয়, তবে শিক্ষার অভাব রয়েছে। অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে নেতারা সাধারণ মানুষকে নিয়ে খেলা করে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sujauddin domkal peace
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE